Site icon সঙ্গীত গুরুকুল, GOLN

অজয় ভট্টাচার্য । বাঙালি কবি, গীতিকার, নাট্যকার ও চিত্রপরিচালক

অজয় ভট্টাচার্য | বাঙালি কবি, গীতিকার, নাট্যকার ও চিত্রপরিচালক

অজয় ভট্টাচার্য | বাঙালি কবি, গীতিকার, নাট্যকার ও চিত্রপরিচালক

অজয় ভট্টাচার্য একজন বাঙালি কবি, গীতিকার, নাট্যকার ও চিত্রপরিচালক। হিমাংশু দত্ত ও শচীন দেব বর্মন সহ বহু সুরকারের সুরে ও বিভিন্ন শিল্পীর কণ্ঠে তার লেখা বেশকিছুগান চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। অধিকার, শাপমুক্তি, নিমাই সন্ন্যাস, মহাকবি কালিদাস প্রভৃতি চলচ্চিত্রের গল্প বা সংলাপ রচনা করেন। অজয় ভট্টাচার্যের জন্ম ৬ জুলাই, ১৯০৬।

অজয় ভট্টাচার্য । বাঙালি গীতিকার

জন্ম ও শিক্ষাজীবন:

অজয় ভট্টাচার্যের জন্ম বৃটিশ ভারতের ত্রিপুরার শ্যামগ্রামে। তার পিতা রাজকুমার ভট্টাচার্য কুমিল্লায় ওকালতি করতেন। মাতা শশীমুখী দেবী। সেকারণে অজয়ের পড়াশোনা শুরু হয় কুমিল্লায় দানবীর মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্য প্রতিষ্ঠিত ঈশ্বর পাঠশালায়। পরে সেখানকার স্কুলে ছাত্র থাকাকালীন সংগীত, সাহিত্য, গান, নাটক ইত্যাদিতে পারদর্শিতা জন্মে। তার উপর পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করায় কুমিল্লা শহরে বেশ নামডাক হয়। পরে তিনি ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এম.এ পাশ করেন। চিত্র পরিচালক পশুপতি চট্টোপাধ্যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সহপাঠী ছিলেন।

জন্ম ও শিক্ষাজীবন:

অজয় ভট্টাচার্য কুমিল্লার শ্যামগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন প্রতিষ্ঠিত আইনজীবী। কৃতি ছাত্ররূপে তিনি ১৯২৯ সালে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পান এবং ১৯৩৩ সালে যান কলকাতায়। তিনি কলকাতায় গিয়েছিলেন কুমার শচীন দেব বর্মণ, তাঁর বাল্যকালের বন্ধুর অনুরোধে, শচীন দেব বর্মণের গানের কলি লিখবার জন্য।

 

অজয় ভট্টাচার্যর কর্মজীবন:

চলচ্চিত্র ও গ্রামোফোন রেকর্ড—উভয় ক্ষেত্রেই তাঁর লেখা গান সাড়া জাগিয়েছিল। হিমাংশু দত্ত সুরসাগরের সুরে তাঁর লেখা গান চল্লিশ দশকের কলকাতার সংগীতপ্রেমীদের মধ্যে বিপুল সাড়া জাগায়।

বাংলা সবাক চলচ্চিত্রের শুরু থেকেই তাঁর লেখা গান রাইচাঁদ বড়াল, পঙ্কজ মল্লিক, শচীন দেববর্মণ ও অনুপম ঘটকের সুরে সারা দেশে বারে বারে উচ্চকিত হয়ে ওঠে। এর ফলে চিত্রজগতের সাথে তাঁর অন্যতর সম্পর্ক স্থাপিত হয়।

চলচ্চিত্রের কাহিনী ও সংলাপ রচনায় মন দেন তিনি। অধিকার, শাপমুক্তি, নিমাই সন্ন্যাস, মহাকবি কালিদাস ইত্যাদি চলচ্চিত্রের কাহিনী বা সংলাপ লেখেন। অশোক ও ছদ্মবেশী নামের দুটি চলচ্চিত্রও তিনি পরিচালনা করেন।

 

অজয় ভট্টাচার্য-এর গানে প্রেমের বহিঃপ্রকাশ:

স্বল্পায়ু জীবনে অজয় ভট্টাচার্য দুই হাজারেরও বেশি গান লিখেছিলেন। বাংলা গানে, কাজী নজরুল ইসলাম ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরে, অজয় ভট্টাচার্য্য সব থেকে বেশি গানের কলি লিখেছেন। সেসব গানে বেদনাবিধুর প্রণয়-স্বপ্নের মহিমা এবং রোমান্টিক বাসনা-বিলাসের দোলাচল গীত-রসিক সমাজে সাড়া জাগায়।

অজয় ভট্টাচার্যের অনেক গান আমাদের আশাবাদী করে তোলে। দুঃখের ভেতরে থেকেও তিনি আশার প্রদীপ জ্বেলে রাখেন। ‘দুঃখে যাদের জীবন গড়া তাদের আবার দুঃখ কি রে?’ গানটিতে তিনি বলেছেন, ‘হাসবি তোরা বাঁচবি তোরা, মরণ যদি আসেই ফিরে।’

তবে তাঁর আশাবাদ আমাদের বিদ্রোহী হতে সাহায্য করে না। বরং তাঁর আশাবাদ আমাদের কাছে হয়ে ওঠে এক রোমান্টিক মনোবেদনা। তিনি দুঃখকে বরণ করতে আমাদেরকে সাহসী করেন; কিন্তু দুঃখের কারণগুলোকে উপড়ে ফেলার জন্য পথ বাতলে দেন না।

বাঙালি মধ্যবিত্তের প্রেম, আশা আর মনোবেদনার কানাগলিতে অজয় ভট্টাচার্যের ঘোরাফেরা। বাংলা গণসংগীতের দিকে তিনি যেতে পারেননি।

জনগণের মুক্তিসংগ্রাম আর স্বাধীনতার আলো তিনি গানে আনতে হয়তো পারেননি। অথচ তাঁর গানে আলো শব্দটি বহুলব্যবহৃত। এই আলো দ্বীপশিখা হয়ে বন্ধুর মনে জ্বালানোর জন্যে।

বাঙালি মধ্যবিত্তের বিরহ-বিধুর ছিঁচ-কাঁদুনে যন্ত্রণার চিহ্ন ছড়িয়ে আছে এই বিখ্যাত গীতিকারের গানে। নিচে অজয় ভট্টাচার্যের দশটি গানের লিংক দেয়া হলো, আপনারা লিংকে ক্লিক করে গানগুলো পড়তে পারবেন।

 

 

 

অজয় ভট্টাচার্য-এর গান ও কবিতার সংকলন:

অজয় ভট্টাচার্য কবি ছিলেন। তার লেখা উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ রাতের রূপকথা, ঈগল ও অন্যান্য কবিতা, সৈনিক ও অন্যান্য কবিতা, ইত্যাদি।

তাঁর প্রখ্যাত গানগুলি পরে অনেকগুলি সংকলন আকারে প্রকাশিত হয়। এদের মধ্যে শুকসারি, সুরের লিখন, একদিন যবে গেয়েছিল পাখি, আজো ওঠে চাঁদ, আমার দেশে যাইও সুজন, যদি মনে পড়ে সেদিনের কথা, ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

তিনি বেশ কিছু কবিতাও লিখেছিলেন তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ রাতের রূপকথা, ঈগল ও অন্যান্য কবিতা, সৈনিক ও অন্যান্য কবিতা, ইত্যাদি। ১৯৪৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর তাঁর প্রয়াণ ঘটে।

১. দুঃখে যাদের জীবন গড়া তাদের আবার দুঃখ কি রে?
২. তুমি যে গিয়াছ বকুল-বিছানো পথে
৩. চৈত্র দিনের ঝরা পাতার পথে
৪. ছিল চাঁদ মেঘের ওপারে বিরহীর ব্যথা লয়ে
৫. জীবনে যারে তুমি দাওনি মালা
৬. এ গান তোমার শেষ করে দাও
৭. আমি ছিনু একা বাসর জাগায়ে
৮. আমার ব্যথার গানে তোমায় আমি
৯. কথা কও দাও সাড়া
১০. সে নিল বিদায় না বলা ব্যথায়

চলচ্চিত্রে অবদান:

চলচ্চিত্র ও গ্রামোফোন রেকর্ড—উভয় ক্ষেত্রেই তার লেখা গান সাড়া জাগিয়েছিল। বাংলা সবাক চলচ্চিত্রের শুরু থেকেই তার গান অনেক প্রচলিত ছিল। তিনি দুই হাজারেরও বেশি গান লিখেছেন। তার প্রথম লেখা গান – হাসনুহানা আজ নিরালায় ফুটলি কেন আপন মনে। তার গানগুলি অনেক সংকলন আকারে প্রকাশিত হয়। এদের মধ্যে একদিন যবে গেয়েছিল পাখি, আজো ওঠে চাঁদ, আমার দেশে যাইও সুজন, যদি মনে পড়ে সেদিনের কথা, ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। গান লেখা ছাড়াও অজয় ভট্টাচার্য চলচ্চিত্রের কাহিনী ও সংলাপ রচনা করেছেন। চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবেও তিনি সফল ছিলেন। তার পরিচালিত চলচ্চিত্র দুটি হচ্ছে অশোক ও ছদ্মবেশী।

প্রায়ণ:

অজয় ভট্টাচার্য ২৪ ডিসেম্বর, ১৯৪৩ মৃত্যুবরণ করেন।

আরও দেখুনঃ

Exit mobile version