অদিতি মহসিন হলেন একজন বাংলাদেশী জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী। তিনি মূলত একজন সুমধুর কণ্ঠী রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী। অদিতি হলেন তাদের মধ্যে একজন যারা দেশের তরুণ প্রজন্মের মাঝে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান রবীন্দ্র সঙ্গীত জনপ্রিয়করণের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন।
প্রতিভাবান এই রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী বাংলাদেশ এবং ভারত উভয় দেশের সঙ্গীত প্রেমীদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন এবং প্রশংসিত হয়েছেন। তিনি তার শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দেশে এবং বিদেশে অনেক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রেখেছেন। তার স্বাতন্ত্র্যসূচক শৈলী কণ্ঠের জন্য অদিতি মহসিন ইতোমধ্যে ঠাকুরের ভক্তদের মধ্যে নিজেকে অন্যতম একটি জায়গায় অধিষ্ঠিত করেছেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭০ তম মৃত্যু বার্ষিকীতে অদিতি দেশে তার জীবন, কাজ এবং ঠাকুর-অনুশীলনসহ বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে কথা বলেন। সম্প্রতি অদিতির ৯ম একক এ্যালবাম “মম রুপে বেশে” মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এ্যালবামটি এসেছে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের ব্যানারে এবং এতে ১০টি গান রয়েছে।
Table of Contents
প্রাথমিক জীবন
অদিতি মহসিন বাংলাদেশের ঢাকা শহরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গীত ও সাহিত্যের প্রতি অত্যন্ত অনুরাগী একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার মা শৈশবে তার মধ্যে সঙ্গীতের উৎসাহ সৃষ্টি করেন এবং বুলবুল একাডেমী অব ফাইন আর্টসে (বিএএফএ) তাকে ভর্তি করান। বিএএফএ থেকে রবীন্দ্র সঙ্গীত এ তার ডিপ্লোমা প্রাপ্তির পর বাংলাদেশের প্রখ্যাত রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী সাদি মোহাম্মাদের অধীনে তিনি সঙ্গীত প্রশিক্ষণ অব্যাহত রাখেন।
১৯৯২ সালে অদিতি শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সঙ্গীত অধ্যয়নের জন্য ভারত সরকার তাকে পাণ্ডিত্য পুরস্কারে ভূষিত করে। সেখানে তিনি রবীন্দ্র সঙ্গীতের অন্যতম পণ্ডিত কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং নীলিমা সেনের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ পান। শান্তিনিকেতন থেকে তিনি ব্যাচেলর অব মিউজিক এবং মাস্টার অব মিউজিক উভয় পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন।
সঙ্গীত জীবন
অদিতির শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন ছিল তার সঙ্গীত জীবনের অন্যতম সফল অধ্যায় এবং এটিই তাকে গায়িকা হিসাবে কর্মজীবনে প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করেছিল। তিনি তার কণ্ঠের উন্নতিকল্পে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে আরও ছয় মাসের পৃথক প্রশিক্ষণ এবং সঙ্গীত বিষয়ে বিবিধ জ্ঞান লাভ করেন।
অদিতি মহসিন একজন নিয়মিত সঙ্গীত শিল্পী। প্লে-ব্যাক গায়িকা হিসেবে রবীন্দ্র সঙ্গীত রেকর্ডিংয়ে তার অসাধারণ নৈপূণ্য রয়েছে। তার প্রথম রেকর্ডিং ছিল বেঙ্গল ফাউন্ডেশন এর আমার মন চেয়ে রয় শিরোনামের একটি সিডি ও ক্যাসেট। এই এ্যালবামটি ২০০৩ সালে মুক্তি পায়। তার দ্বিতীয় এ্যালবাম ছিল শারদ প্রাতে শিরোনামে।
এটি ভারতের কলকাতার প্রাইম মিউজিক এর ব্যানারে ২০০৪ সালে মুক্তিলাভ করে। অদিতি বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, এবং অন্যান্য প্রাইভেট স্যাটেলাইট চ্যানেলসমূহ যেমন: এনটিভি, মাছরাঙ্গা টিভি, এসএ টিভি, তারা মিউজিক ইত্যাদি চ্যানেলের একজন নিয়মিত শিল্পী।
তিনি ডঃ নওজেশ আহমেদের ফটোগ্রাফের উপর ভিত্তি করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর উপর নির্মিত একটি তথ্যচিত্রে ছিন্নপত্র নামক গান গেয়েছিলেন। সর্বশেষ ২০১৩ সালে তার মুক্তিপ্রাপ্ত এ্যালবাম ছিল বর্ষণমুখর রাতে ফাগুন সমীরণে।তার অসাধারণ সুমধুর কণ্ঠের জন্য তিনি বাংলাদেশ এবং ভারত উভয় দেশের রবীন্দ্রপ্রেমী শ্রোতাদের কাছে খুবই জনপ্রিয়।
অদিতি বিশ্বব্যাপী সঙ্গীত পরিবেশনে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছেন; যেমন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন, ইন্দোনেশিয়া এবং ভারত সহ বিশ্বের অন্যান্য প্রবাসী বাংলাভাষী বসবাসরত দেশসমূহে। তিনি ২০০০ সাল থেকে ছায়ানট এর একজন সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ব্যক্তিগত জীবন
অদিতি জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মেলন পরিষদ ঢাকা সিটি কমিটির সেক্রেটারির দায়িত্বে আছেন। এছাড়াও তিনি “বাংলাদেশ রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী সংস্থা” এর একজন অন্যতম সদস্য।
মিক্সড এ্যালবাম
- জাগাতে অন্ধজগ্গে আমার নিমন্ত্রণে (২০০৮)
- মনের মাঝে যে গান বাজে (২০১০)
পুরস্কার ও সম্মান
অদিতি মহসিন তার সঙ্গীত জীবনে বহু পুরস্কার লাভ করেছেন; এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সঙ্গীতে ব্যাচেলর প্রথম স্থান অর্জনের জন্য “দেবব্রত স্মৃতি পুরস্কার” এবং ২০০৪ সালে সঙ্গীতের জন্য “অনন্যা শীর্ষ দশ পুরস্কার” (অনন্য ১০ জন শীর্ষ গায়িকা বাংলাদেশ)। এছাড়াও সেরা রবীন্দ্র সঙ্গীত গায়িকা হিসেবে ২০০৬ সালে “সিটিসেল চ্যানেল-আই সঙ্গীত পুরস্কার” লাভ করেন।
আরও দেখুনঃ