আব্দুল আলীম ছিলেন বাংলাদেশের লোকসঙ্গীত শিল্পী।আবদুল আলীমের জন্ম ১৯৩১ সালের ২৭ জুলাই। তিনি বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের (ভারত) মুর্শিদাবাদের তালিবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছোট বয়স থেকেই আলীম সঙ্গীতের প্রবল অনুরাগী ছিলেন। অর্থনৈতিক অনটনের কারণে কোনো শিক্ষকের কাছে গান শেখার সৌভাগ্য তার হয়নি। তিনি অন্যের গাওয়া গান শুনে গান শিখতেন; আর বিভিন্ন পালা পার্বণে সেগুলো গাইতেন। এভাবে পালা পার্বণে গান গেয়ে তিনি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেন।
Table of Contents
প্রারম্ভিক জীবন
বাবার নাম ছিল মোহাম্মদ ইউসুফ আলী। প্রাইমারি স্কুলে পড়বার সময় গ্রামোফোন রেকর্ডে গান শুনে গান গাইবার জন্য আগ্রহ জন্মে। ছোটবেলায় তার সঙ্গীত গুরু ছিলেন সৈয়দ গোলাম আলী। ঐ অল্প বয়স হতেই বাংলার লোক সঙ্গীতের এই অমর শিল্পী গান গেয়ে নাম করেছিলেন।
মাত্র তেরো বছর বয়সে ১৯৪৩ সালে তার গানের প্রথম রেকর্ড হয়। রেকর্ডকৃত গান দুটি হলো “তোর মোস্তফাকে দে না মাগো” এবং “আফতাব আলী বসলো পথে”। এত অল্প বয়সে গান রেকর্ড হওয়া সত্যিই বিস্ময়কর। পরে তা আর বিস্ময় হয়ে থাকেনি, তিনি হয়ে উঠেছিলেন বাংলার লোক সঙ্গীতের এক অবিসংবাদিত-কিংবদন্তি পুরুষ। তার সাত সন্তানের মধ্যে সকলেই সংগীত শিল্পী।
সঙ্গীত শিক্ষা
পরবর্তীকালে তিনি কলকাতায় যান এবং সেখানে আব্বাসউদ্দিন ও কাজী নজরুল ইসলামের সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে গান করেছেন। তিনি লোক ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের উপর দীক্ষা নিয়েছেন বেদারউদ্দিন আহমদ, ওস্তাদ মোহাম্মদ খসরু, মমতাজ আলী খান, আব্দুল লতিফ, কানাইলাল শীল, আব্দুল হালিম চৌধুরী প্রমুখের কাছে। লেটো দলে, যাত্রা দলে কাজ করেছেন।
কর্মজীবন
দেশ বিভাগের পরে আব্দুল আলীম ঢাকায় চলে আসেন এবং রেডিওতে স্টাফ আর্টিস্ট হিসেবে গান গাইতে শুরু করেন। তিনি পরে টেলিভিশন সেন্টার চালু হলে সেখানেও সঙ্গীত পরিবেশন শুরু করেন। এছাড়াও তৎকালীন বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’ সহ বিভিন্ন বাংলা চলচ্চিত্রে আলীম গান করেছেন। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রটি হলো ‘লালন ফকির’। সব মিলিয়ে প্রায় ৫০০টির মতো গান রেকর্ড হয়েছিল তার।
আব্দুল আলীম তার আধ্যাত্মিক ও মরমী মুর্শিদী গানের জন্য অমর হয়ে থাকবেন। কবি ও বাংলার লোক সঙ্গীতের গবেষক কবি আসাদ চৌধুরী বলেন, “সমাজাটকে যাঁরা জাগিয়েছেন আব্দুল আলীম তাঁদের একজন”। পেশাগত জীবনে আবদুল আলীম ছিলেন ঢাকা সঙ্গীত কলেজের লোকগীতি বিভাগের অধ্যাপক।
পুরস্কার ও সম্মাননা
আব্দুল আলীম বেশ কয়েকটি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন; এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে :
- একুশে পদক (১৯৭৭, মরণোত্তর)
- স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (১৯৯৭, মরণোত্তর)
- জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (শ্রেষ্ঠ গায়ক ; সুজন সখী) (১৯৭৫, মরণোত্তর)
- প্রেসিডেন্ট প্রাইড অব পারফরম্যান্স পুরস্কার(১৯৬০)
- বাচসাস (শ্রেষ্ঠ গায়ক ; লালন ফকির)(১৯৭২-১৯৭৩)
- পূর্বাণী চলচ্চিত্র পুরস্কার (শ্রেষ্ঠ গায়ক : সুজন সখী)(১৯৭৫, মরণোত্তর)চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস (২০২১, মরণোত্তর)
- চিত্রালী চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৭৫, মরণোত্তর
মৃত্যু
আব্দুল আলীম ৪৩ বছর বয়সে ১৯৭৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার পিজি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
আরও দেখুনঃ