আলপনা বন্দ্যোপাধ্যায় । বাঙালি সঙ্গীতশিল্পী

আলপনা বন্দ্যোপাধ্যায় চল্লিশ ও পঞ্চাশের দশকের শেষের দিকে এবং তৎপরবর্তীকালের একজন সফল বাঙালি সঙ্গীতশিল্পী ছিলেন। তার সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য গানগুলোর মধ্যে রয়েছে “তারাদের চুমকি জ্বলে আকাশে” “হাট্টি মাটিম টিম”, “মন বলছে আজ সন্ধ্যায়”, “ছোট্টো পাখি চন্দনা”, “আমি আলপনা এঁকে যাই আলোয় ছায়ায়” , “আকাশ আর এই মাটি ওই দূরে” এবং “যদি অলি না চাহে “।

আলপনা বন্দ্যোপাধ্যায় । বাঙালি সঙ্গীতশিল্পী

প্রাথমিক জীবন

১৩ বছর বয়সে, আলপনাকে সঙ্গীতের সঙ্গে পরিচয় করান তার বাবার ঘনিষ্ঠ বন্ধু রবিন চট্টোপাধ্যায় এবং গৌরী প্রসন্ন মজুমদার। তারা দুজন তৎকালীন বাংলা গানের জগতে যথাক্রমে সংগীত রচয়িতা এবং গীতিকার হিসাবে খুব সক্রিয় ছিলেন। তার গানগুলো খুব শীঘ্রই বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।

কর্মজীবন

আলপনা বন্দ্যোপাধ্যায় শিশুদের গান গেয়েই বেশি জনপ্রিয়তা কুড়িয়েছিলেন। এসব গানে তিনি সাধারণ বাংলা ছড়াকে অমর ধ্রুপদীতে রূপান্তরিত করেছিলেন। ১৯৫০-এর দশক থেকে ১৯৯০-এর দশক ধরে অধিকাংশ বাঙালি শিশু আলপনার গাওয়া ‘হাট্টি মাটিম টিম’ বা ‘ছোট্টো পাখি চন্দনা’র মতো ধ্রুপদীগুলোর সাথে বড় হয়েছে।

তার আধুনিক গানগুলো আরও অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। আলপনার গাওয়া প্রথমদিককার এবং উল্লেখযোগ্য বাংলা অ-চলচ্চিত্রী গানের একটি ছিল রবিন চট্টোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে “সমীরণ ফিরে চাও” গানটি। এর পরই ১৯৫১ সালে, তিনি আবারো রবিন চট্টোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে বাংলা চলচ্চিত্র ‘বিদ্যাসাগর’ এর জন্য “মাটির ঘরে আজ নেমেছে চাঁদ রে” গানটি রেকর্ড করেছিলেন। এই গানটি উল্লেখযোগ্যরকম জনপ্রিয় হয়েছিল।

আলপনা বন্দ্যোপাধ্যায় । বাঙালি সঙ্গীতশিল্পী

রবিন চট্টোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে তার আরেকটি উল্লেখযোগ্য গান ছিল ১৯৫৬ সালে নির্মিত ‘সাগরিকা’ চলচ্চিত্রের “হৃদয় আমার সুন্দর তব পায়”। তিনি ১৯৫০ এর দশকে নচিকেতা ঘোষ, শ্যামল মিত্র, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, শৈলেন মুখোপাধ্যায় এবং ভূপেন হাজারিকা সহ বিভিন্ন সংগীত সুরকারের অধীনে বহু উল্লেখযোগ্য বাংলা চলচ্চিত্র এবং অ-চলচ্চিত্রের গান গেয়েছিলেন।

রোমান্টিক “মন বলছে আজ সন্ধ্যায়” থেকে ‘বকুলগন্ধে যদি’, ‘অমি আলপনা এঁকে যাই’ এবং ‘যেথা আছে ওগো শুধু নীরবতা’ প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের গানে তার কণ্ঠ স্পষ্ট ছিল।

ব্যক্তিগত জীবন

১৯৫৯ সালে আলপনা বন্দ্যোপাধ্যায় শ্রীধর মুখোপাধ্যায়ের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পর তারা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় বসবাস করতেন। তার দুটি সন্তান এবং দুটি নাতি-নাতনী রয়েছে। তার মেয়ে লন্ডনের চেলসিতে এবং ছেলে ভারতের মুম্বইয়ে থাকে। বিশিষ্ট বাঙালি সংগীতশিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় তার ঘনিষ্ঠ পারিবারিক বন্ধু।

আলপনা বন্দ্যোপাধ্যায় । বাঙালি সঙ্গীতশিল্পী

মৃত্যু

আলপনা বন্দ্যোপাধ্যায় ৭৫ বছর বয়সে ২০০৯ সালের ২৪শে জুলাইয়ে মারা যান। তার সমসাময়িক, ৫০ বছর ধরে পরিচিত সংগীতশিল্পীরা (সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়সহ) তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন। শ্রদ্ধা নিবেদনকারীদের মধ্যে তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও ছিলেন। বেশ কয়েক দশক ধরে বাণিজ্যিক গানের দৃশ্যে সক্রিয়ভাবে জড়িত না থাকা সত্ত্বেও তার মৃত্যুর সংবাদটি ভারতীয় গণমাধ্যমে স্থান পেয়েছিল।

আরও দেখুনঃ