ইন্দ্রমোহন রাজবংশী একজন বাংলাদেশী লোকগানের শিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালী, জারি, সারি, মুর্শিদি ইত্যাদি গাইতেন। পাশাপাশি রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীও ছিলেন। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে সংগীত বিভাগে একুশে পদক প্রদান করে।
প্রাথমিক জীবন
ইন্দ্রমোহন রাজবংশীর জন্ম বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরে। তার পরিবার পাঁচ পুরুষ ধরে গানের সাথে জড়িত। ১৯৫০-এর দশকের শুরুতে, রাজবংশী তার পিতামহ কৃষ্ণ দাস রাজবংশীর কাছে সঙ্গীত শিখতে শুরু করেন। তিনি যাত্রা, পালাগান, নজরুল সঙ্গীত ও লোকগান করতেন। ১৯৬০-এর দশকের শেষের দিকে, নজরুল সঙ্গীত চর্চার জন্য তিনি বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে ভর্তি হন এবং পাঁচ বছরের কোর্স শেষ করেন। ১৯৬৩ সালে তিনি হাফিজুর রহমানের কাছে লোকগান শিখতে শুরু করেন।
কর্মজীবন
ইন্দ্রমোহন রাজবংশী ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে গান গাওয়া শুরু করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি সরকারি সংগীত কলেজে যোগদান করেন। তিনি সংগীত কলেজে লোকসঙ্গীত বিভাগের প্রধান হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেন। তিনি চলচ্চিত্র, বেতার, টেলিভিশন ইত্যাদিতে অনেক গান গেয়েছেন। ১৯৬৭ সালে চেনা অচেনা চলচ্চিত্রে গান গাওয়ার মধ্য দিয়ে তিনি চলচ্চিত্রে নেপথ্য কণ্ঠ দেন।
১৯৯৮ সালে তিনি বাংলাদেশ লোকসঙ্গীত পরিষদ নামে একটি লোকসংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। সংগঠনটি লোকগান অনুশীলন, সংরক্ষণ, প্রচার ও গবেষণার কাজ করে। তিনি শিশুদের জন্য প্রায় ১০০টি লোকগান লিখেছেন।
গান সংগ্রহ
ইন্দ্রমোহন রাজবংশী গান গাওয়ার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকগান সংগ্রহ করতেন। তিনি এক হাজারেরও বেশি কবির লেখা কয়েক লক্ষ গান সংগ্রহ করেছেন।
অ্যালবাম
২০১৪ সাল অনুযায়ী, ইন্দ্রমোহন রাজবংশী নয়টি অ্যালবাম প্রকাশ করেছেন।
- সার্ধশত জন্মোৎসব-এ শ্রদ্ধাঞ্জলি (২০১২)
- দেড়শ বছর আগে (২০১২)
- মুক্তিযুদ্ধে অবদান
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে ইন্দ্রমোহন রাজবংশী যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য মনস্থির করেন। কিন্তু পাকিস্তানিদের হাতে ধরা পড়ে যাওয়ায় সম্মুখ যুদ্ধে তিনি যেতে পারেন নি। পাকিস্তানিরা সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দুদের ওপর অকথ্য নির্যাতন করায় ইন্দ্রমোহন রাজবংশী নিজের নাম পরিচয় গোপন করে পাকিস্তানিদের দোভাষী হিসেবে কাজ করেন কিছুদিন। পরবর্তীতে সেখান থেকে চলে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা দিতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে গান গাওয়া শুরু করেন।
পুরস্কার
ইন্দ্রমোহন রাজবংশী, সংগীতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৮ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক লাভ করেন।
পরিবার
ইন্দ্রমোহন রাজবংশীর স্ত্রীর নাম দীপ্তি রাজবংশী ও পুত্র রবীন রাজবংশী। তারা নিজেরাও লোকগানের সাথে জড়িত।[৫]
মৃত্যু
২০২১ সালের ৭ এপ্রিল বুধবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন ইন্দ্রমোহন রাজবংশী। এর আগে ১ এপ্রিল বৃহস্পতিবার বুকে ব্যথা অনুভব করলে মহাখালী মেট্রোপলিটন হাসপাতালে তার করোনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় তার করোনা পজিটিভ আসে। সেই সঙ্গে ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ে। পরে ৩ এপ্রিল তাকে রাজধানীর মালিবাগের প্রশান্তি হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তি করানো হয়। পরবর্তীতে ৪ এপ্রিল তাঁকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হয়। এরপর অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।