উস্তাদ বড়ে গুলাম আলী খান । হিন্দুস্তানী খেয়াল সঙ্গীতজ্ঞ

উস্তাদ বড়ে গুলাম আলী খান ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের লাহোরে জন্মগ্রহণকারী কাসুর পাতিয়ালা ঘরানার বিখ্যাত হিন্দুস্তানী খেয়াল সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন।

উস্তাদ বড়ে গুলাম আলী খান । হিন্দুস্তানী খেয়াল সঙ্গীতজ্ঞ

প্রাথমিক জীবন

তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের লাহোরের কাছে ছোট্ট শহর কাসুরে তার জন্ম, যা বর্তমানে পাকিস্তানের অংশবিশেষ। পশ্চিম পাঞ্জাবের সঙ্গীত ধারক পরিবারে তার গায়ক বাবা আলী বক্স খানের জন্ম। পাঁচ বছর বয়সে পৈতৃক সম্পর্কীয় চাচা কালে খান ও পরবর্তীকালে বাবার কাছ থেকে কণ্ঠ সঙ্গীতে দীক্ষিত হন।

কর্মজীবন

উস্তাদ বড়ে গুলাম আলী খান তার নিজস্ব সেরা চারটি সঙ্গীতের ধরন প্রবর্তন করে স্মরণীয় হয়ে আছেন। সেগুলো হচ্ছে পাতিয়ালা-কাসুর, ধ্রুপদের বেহরাম খানি, জয়পুরের, গোয়ালিয়রের বেলাভাস। তার রাগের বিষয়ে খানিকটা বিতর্ক রয়েছে। এ বিষয়ে তিনি বলেছিলেন যে, ধ্রুপদী সঙ্গীতের সৌন্দর্য্য মূলতঃ অবসর বিনোদনের মধ্যে নিহিত। তিনি বিশ্বাস করতেন, দর্শকেরা দীর্ঘকালীন সময়ে একগুঁয়েমিতে ভোগে। ফলে তিনি শ্রোতাদের চাহিদামাফিক গানকে পরিবর্তন করে থাকেন।

উস্তাদ বড়ে গুলাম আলী খান । হিন্দুস্তানী খেয়াল সঙ্গীতজ্ঞ

১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের পর পাকিস্তানে অবস্থান করেন। পরবর্তীতে স্থায়ীভাবে বসবাসের উদ্দেশ্যে ভারতে চলে আসেন। ১৯৫৭ সালে বোম্বের তৎকালীন মূখ্যমন্ত্রী মোরারজি দেসাইয়ের সহায়তায় ভারতীয় নাগরিকত্ব লাভ করেন ও মালাবার হিল মুম্বইয়ের একটি বাংলোয় বসবাস করতে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে লাহোর, বোম্বে, কলকাতা ও হায়দ্রাবাদে অবস্থান করেন তিনি। জনপ্রিয় চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সঙ্গীত পরিচালকদের কাছ থেকে অনুরোধ স্বত্ত্বেও সুদীর্ঘকাল চলচ্চিত্রে গান পরিবেশন করা থেকে নিজেকে দূরে রাখেন। কিন্তু কে আসিফের উদ্দীপনায় সঙ্গীত পরিচালক নওশাদের সাথে ১৯৬০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত মুঘল-ই-আজম চলচ্চিত্রে সোহনি ও রাগেশ্রীভিত্তিক দুইটি গানে অংশ নেন। তিনি অতি উচ্চমাত্রার পারিশ্রমিক দাবী করেন। প্রতি গানের জন্য তিনি ২৫০০০ রূপী নেন, যেখানে জনপ্রিয় ও তারকা নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী হিসেবে লতা মঙ্গেশকর ও মোহাম্মদ রফি গান প্রতি ৫০০ রূপীর কম অর্থ পেতেন।

দেহাবসান

২৩ এপ্রিল, ১৯৬৮ তারিখে হায়দ্রাবাদের বাঁশেরবাগ প্যালেসে উস্তাদ বড়ে গুলাম আলী খানের দেহাবসান ঘটে। জীবনের শেষের বছরগুলোয় দীর্ঘদিনের অসুস্থতাজনিত কারণে আংশিক পঙ্গুত্ব বরণ করেন। তবে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত পুত্র মুনাওয়ার আলী খানকে সহায়তার লক্ষ্যে গান পরিবেশন করেছিলেন।

উস্তাদ বড়ে গুলাম আলী খান । হিন্দুস্তানী খেয়াল সঙ্গীতজ্ঞ

সম্মাননা

সঙ্গীত নাটক অকাদেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত উস্তাদ বড়ে গুলাম আলী খান ১৯৬২ সালে পদ্মভূষণ পদকে ভূষিত হন। অদ্যাবধি বড়ে গুলাম আলী খান ইয়াদগার সভা তার শিষ্য মালতি জিলানী কর্তৃক পরিচালিত হচ্ছে। এ সভার মাধ্যমে তার গান ও স্মৃতি কথাগুলো তুলে ধরা হচ্ছে। বাঁশেরবাগের প্রধান রাস্তাটি তার সম্মানে নামাঙ্কিত হয়েছে।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment