এক সুর-যোদ্ধাকে কুর্নিশ করে – শীরনামে শ্রী দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়কে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন কবীর সুমন। এই লেখাটি কবীর সুমন এর ফেসবুক ওয়াল থেকে সংগ্রহ করে প্রকাশ করা হল।
এক সুর-যোদ্ধাকে কুর্নিশ
ক্যাথিড্রাল রোডে পশ্চিমবঙ্গ সরকার রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন পালন করছেন। এই প্রথম আমিও আছি।
প্রথমেই শ্রী দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় গান গাইছেন। “তোমার সুরের ধারা”। গানটি একটি কাগজে লেখা, কাগজটি হারমোনিয়মের ওপরে রাখা। আমি তাঁর ডান দিকে দুটি আসন পরে বসে। আমি শুনছি-দেখছি।
আমার ৬৬ চলছে। দ্বিজেনদার বয়স অন্তত ৮০/৮২ তো হবেই। কে বলতে পারে, হয়তো তার চেয়েও একটু বেশি। মনে পড়ে যাচ্ছে সেই কোন্ ছেলেবেলায় কলকাতায় এসে মহিষাসুরমর্দিনী অনুষ্ঠানটি জীবনে প্রথম শুনেছিলাম বেতারে। কটকে তো আর শুনতে পাইনি জীবনের প্রথম পাঁচটি বছর। অবিশ্বাস্য এক অনুভূতি। বিস্ময়। বিস্ময়। সেখানে প্রথম শুনছি দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, সুপ্রীতি ঘোষ, উৎপলা সেন, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, পঙ্কজ কুমার মল্লিক। কী গলা, কী গায়কি সবার। কী আবেদন। তার পর দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়ের কতো গান অনুরোধের আসরে বা বেতার-অনুষ্ঠানে শোনা: ‘শ্যামলবরণী ওগো কন্যা’, জীবনের বালুবেলায়’, ‘ভাঙা তরী শুধু এ গান’, ‘ক্লান্তি নামে গো’…। তেমনি কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দ্বৈতকন্ঠে রবীন্দ্রনাথের গান। তারও পরে ‘সাগরতীরে একলা বসে আমি’, ‘সাতনরী হার দেব’, ‘তোমার ঐ ঘুমজড়ানো মন-ভোলানো হরিণ চোখের ইসারাতে’, ‘যেদিন তোমায় আমি দেখেছি’, ‘আবার দু’জনে দেখা’, ‘যদি বলি তোমার দু’চোখ’…।
তারই মধ্যে ১৯৬১ সাল। রবীন্দ্রনাথের শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আকাশবাণীর বিশেষ অনুষ্ঠান দিল্লি থেকে প্রচারিত হচ্ছে শর্ট ওয়েভে। সারা ভারত সেই মুহূর্তে শুধু দু’জনের কন্ঠে রবীন্দ্রনাথের গান শুনতে পাচ্ছে – সুচিত্রা মিত্র ও দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়। সারা পৃথিবী সেই মুহূর্তে দিল্লি বেতার ধরলে এই দু’জনের গানই শুনছে।

দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়। কী কন্ঠই না ছিল! যেমন মন্দ্র সপ্তকে, তেমনি তার সপ্তকে। সাবলীল। আয়াসহীন। মধুর অথচ পুরুষালি। – কী রবীন্দ্রোত্তর আধুনিক গান কী রবীন্দ্রনাথের গান – দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় এক আলাদা ঘরানা যেন। আমার স্মৃতিতে সেই কবে থেকে অমলিন। তাঁর গাওয়া কতো আধুনিক গান আজও গেয়ে দিতে পারি কথাগুলো পেলে। কয়েকটা গান তো এখনও মুখস্ত।
সেই দ্বিজেনদা গাইছেন।
এতো বয়স। কিন্তু কী ঋজু ভাঙ্গিতে বসে। যেভাবে তাঁর যৌবনে, আজ তাঁর বার্ধক্যেও সেই একই ভঙ্গিতে মুখটা মাইক্রোফোন থেকে তিন আঙুল দূরে রেখে গাইছেন। বাঁ-হাতে বেলো টানা, ডান হাতের আঙুলে হারমোনিয়মের রিডগুলো বাজানো – এ ছাড়া তাঁর দেহের আর কোনও অংশ একটু নড়ছে না। দেখেই বুঝতে পারছি – আজও গানই তাঁর সব। তিনি তো জানেন তিনি কে। তিনি তো জানেন কতো গান তিনি কতোটা সাফল্যের সঙ্গে গেয়ে গিয়েছেন। তিনি তো জানেন – আজকের কতোজন তাঁকে সত্যিই চেনেন, জানেন তিনি কোন্ মাপের কাজ করে গিয়েছেন বয়সকালে, তাঁর কোন্ গান কে কে মনে রেখেছেন তাতে তাঁর কিছু আসে যায় না। তিনি তো জানেন – আধুনিক গান (রবীন্দ্রনাথের গান আধুনিক গান) গাওয়ার একটা বয়সসীমা থাকে। বিশেষ করে ভারী গলার অধিকারীদের খুব বেগ পেতে হয় মধ্য বয়সের পর আধুনিক গান গাইতে। খেয়াল ধ্রুপদ গাওয়া যায়, প্রবীণ শিল্পীরা গানও। কিন্তু আধুনিক গানে পদে পদে যে কন্ঠচালনার আবশ্যিকতা, গলার ওপর, ল্যারিঙ্কসের ওপর যে নিয়ন্ত্রণ থাকা দরকার, দমের ওপরেও যে দখল থাকা দরকার, ছোট ছোট কাজগুলি করতে গেলে যে কন্ঠ-নমনীয়তা একান্তই দরকার, ষাট পেরনোর পর তা দ্রুত কমতে থাকে। গলার আওয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। তিনি সব জানেন। তিনি জানেন – নতুন করে তো আর কিছু হওয়ার নেই। তিনি এক জীবন্ত কিংবদন্তী। প্রতিষ্ঠান। যা হোক করে, হালকা ভাবে গেয়ে দিলে কেউ কি আপত্তি করবে? বুঝবে ক’জন আজকের দিনে? ২০১৫ সালের মে মাসে ক’জন আর তাঁর গান শুনতে শুনতে মনে করবে পাঁচ ও ছ-এর দশকের দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়ের কথা। তিনি তো জানেন আশেপাশে সকলেই তাঁর চেয়ে বয়সে অনেক ছোট। কৃতিত্বেও। সকলের অভিভাবকের মতো একে ওকে আশীর্বাদ করে, গুরুজনসুলভ প্রশ্রয়ের হাসি হেসে তিনি দিব্যি পার পেয়ে যেতে পারেন একটি গানের দু’চারটি লাইন গেয়ে। বা গোটা একটা গানই – নমো নমো করে। কে ঠ্যাকাতে যাবে। আশি-উর্ধ এই প্রবীণ শিল্পী যা করবেন লোকে সেটাই মেনে নেবে। এটাই দুনিয়ার নিয়ম।
কিন্তু – না। ক্যাথিড্রাল রোডের মঞ্চে তিনি গাইছেন – যেন এই গানটি গাওয়ার ওপর তাঁর জীবন-মরণ নির্ভর করছে। তাঁর সারা দেহ ঋজু। নিথর। নিবেদিত। আর কেউ না, আর কিছু না, শুধু গানের কাছে নিবেদিত। তাঁর মাথা নড়ছে না এক-চুলও। তাঁর দেহের ভঙ্গি দেখে আমার মনে হচ্ছে এক বলশালী শ্বাপদ বসে আছেন ওৎ পেতে – শিকার ধরবেন। যে কোনও মুহূর্তে ঝাঁপিয়ে পড়বেন তিনি। তাঁর নিশানায় শুধু একটি গান। “তোমার সুরের ধারায়।” আর কেউ না জানুক আমি জানি “জীবনের বালুবেলায়” বা “ওগো সুন্দরী” গাইলেও ঠিক এইভাবেই গাইতেন তিনি। একই ভাঙ্গিতে।
স্থায়ীর পর ছেড়ে দিচ্ছেন পেছনের যন্ত্রশিল্পীরা বাজাবেন বলে (হায়, আমাদের এই যন্ত্রশিল্পীরা আজও অনাদৃতই থেকে যাচ্ছেন যেন)। তার পর ঠিক মুহূর্তে শুরু করছেন প্রথম অন্তরা। বাজনার সময়েও তাঁর মাথা, মুখ নড়ছে না। তিনি একইভাবে তৈরি থাকছেন পরের অংশে গলাটা ফেলার জন্য।
তাঁকে দেখছি আর হারিয়ে যাচ্ছি আমি। আমার ইচ্ছে করছে পালিয়ে যেতে। এর পর মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী ভাষণ দেবেন। তার পরেই আমার গাওয়ার কথা। কী করে হয়। এই গান, এই শিল্পীর পর আর গান কী করে হতে পারে – অন্তত এই আসরে! আজকের দিনে আর যেইই পারুক আমি পারব না। আমার হাত পা কাঁপতে শুরু করেছে। – বৃদ্ধ এই শিল্পীর গলায় তিরিশ চল্লিশ পঞ্চাশ বছর আগেকার সুর ও ধ্বনি থাকা সম্ভাব নয়। শারীরবৃত্তের কারণেই সম্ভব নয়। তাঁর শরীরের প্রতিটি রক্তবিন্দু দিয়ে কিন্তু তিনি লড়াই করছেন তাঁর গলাটাকে, আজকের অশক্ত গলাটাকে স্থির রাখতে, সুরে রাখতে। এই বয়সে গলা, বিশেষ করে ভারী গলা, ব্যারিটোন ও বেস (দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়ের মতো ‘ব্যারিটোন’ পৃথিবীতেই কম এসেছেন) গলা কাঁপবেই, নড়বেই। তাই গলাটাকে প্রাণপণে স্থির রাখতে লড়াই করছেন আমার গুরুস্থানীয় এই শিল্পী। আশ্চর্য, তিনি সফল হচ্ছেন।
দেখছি শুনছি তাঁকে। আমার প্রতিটি লোমকূপ তাঁর গায়কিকে শুষে নিতে চাইছে – জন্ম থেকে আমি এইরকমই, এটাই আমি। সেটা জানতে গেলে আর-একটা ‘আমি’ থাকা দরকার। যেমন সেদিনের আসরে দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়ের লড়াই-এর জাত ও ধরণটা বুঝতে গেলেও ‘আমি’কে দরকার।
কী পরিমিতিবোধ। কী সংযম। সুরের প্রতিটি কলি নিখুঁতভাবে পরিপূর্ণতায় নিয়ে যাচ্ছেন। ঠিক যেটুকু করা দরকার তার চেয়ে এক চুল কম নয়, বেশি নয়। প্রতিটি মুহূর্তে আমার মনের অস্থিরতা বাড়ছে। তা প্রতিফলিত হচ্ছে আমার দুটি হাতে, শরীরে। আমার হাত এমনিতেই কাঁপে। আরও কাঁপছে। আমার হাঁটুদুটো কাঁপছে। কি করে এর পর গাইব আমি। আমি পালাতে চাইছি। পালিয়ে যাবো।
পেছন থেকে ইন্দ্রনীল সেন এসে জানতে চাইছেন আমার স্কেল কী হবে, কী গান গাইব। আমি বললাম, বি-ফ্ল্যাট/ দিন যদি হলো অবসান।
বলার পরেই মনে হলো – না। আমি পারব না। অন্য কোনও গান? কিন্তু কোনটা?
দ্বিজেনদা গেয়ে যাচ্ছেন। পেছন থেকে কে যেন তবলায় ভারি সুন্দর ঠেকা দিচ্ছেন আর কে যেন বেহালা বাজাচ্ছেন – মন ভরিয়ে বাজাচ্ছেন। আমার ভয় আরও বেড়ে চলেছে। এঁরা সকলে মিলে যে পরিবেশ, যে সুরের পরিমণ্ডল তৈরি করছেন আমি তার মান রাখতে পারব না। এই উচ্চতা আমার নয়। আমি অনেক নিচু জায়গার লোক।
আমার দৃষ্টিতে শুধু দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়। সমস্ত সত্ত্বা দিয়ে লড়ছেন তিনি। তাঁর শরীর দেখেই টের পাচ্ছি। আর শুনছি – কী পবিত্র তাঁর পরিবেশনা। এই পরিবেশনা বোধহয় এই বয়সেই সম্ভব। কতোদিন আমি কোনও আসরে “গান” শুনিনি। “গান” মানে এইটা। মনে হচ্ছে আমি ফিরে যাচ্ছি আমার শৈশবে। আমার মনের চোখের সামনে এসে দাঁড়াচ্ছেন পঙ্কজ কুমার মল্লিক, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সুবিনয় রায়, তড়িৎ চৌধুরি, দেবব্রত বিশ্বাস (“আকাশভরা”র অনেক আগের দেবব্রত বিশ্বাস), অরবিন্দ বিশ্বাস, অশোকতরু বন্দ্যোপাধ্যায়…
আমি দেখতে পাচ্ছি তাঁরাও শুনছেন, গুনগুন করে গাইছেন…
আমি গুটিয়ে যাচ্ছি নিজের মধ্যে…সব গুলিয়ে গিয়ে কেমন যেন লাগছে নিজেকে…কিছুই তো গাইতে পারলাম না এ-জীবনে (আমার চেয়ে ভাল আর কে জানে)… কিছুই করতে পারলাম না, বড়জোর হৈচৈ বাধালাম…সুরে ভিড়লাম কি? কতোটা নিষ্ঠা ছিল আমার? নিষ্ঠা মানে তো এইটা – দ্বিজেনদা যেটা দেখাচ্ছেন।
দ্বিজেনদা গান শেষ করলেন। তাই? তাহলে আমার ভেতরে যেটা চলছে সেটা কী? আমার সমস্ত অন্তর জুড়ে তখন শুধু তিনি। তিনি। আর রবীন্দ্রনাথ। দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়ের পরিবেশনা – সেই আসরে যা শুনলাম দেখলাম। আমার জন্য সবার সামনে একটা চেয়ার রাখা হচ্ছে। ইন্দ্রনীল যন্ত্রীদের বললেন – এই, বি-ফ্ল্যাট কর্ডটা দাও। – আমি যাতে সুরটা পাই। কিন্তু আমি টের পাচ্ছি – কর্ডলেস মাইকটা হাতে নিয়ে টের পাচ্ছি আমি চোরাবালিতে দাঁড়িয়ে। আমি ডুবতে শুরু করেছি। কোনওদিন কাগজ বা খাতা দেখে গাইনি। আজও গাইছি না। কী সর্বনাশ, যে গানটা গাইব বললাম সেটা মন পড়ছে না। আমার মনে পড়ছে, মন জুড়ে আছে শুধু দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া নয় তখনও গেয়ে চলা “তোমার সুরের ধারা।” পালিয়ে যেতে চাইছি। ভাবছি – যাই। কিন্তু আমার মাথার একটা দিক বলছে – যাস্ না, সুমন। হুটহাট করে কাজ করে অনেক ঝামেলা পাকিয়েছিস জীবনে। তুই পালালেই কাল পত্রিকাগুলো বলবে – শেষ মুহূর্তে সরকারি অনুষ্ঠান ছেড়ে অবজ্ঞা ভরে চলে গেলেন কবীর সুমন। — আমি সময় নিচ্ছি। পেছনে কীবোর্ডস-এ বেজে উঠল বি-ফ্ল্যাট মেজর কর্ড। একবার। পালাই। না, সে হয় না। আমার পেছনেই মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী, তাঁর পাশেই দ্বিজেনদা। কোথায় দিন যদি হলো অবসান!!! কিছু মনে পড়ছে না যে!! — দ্বিতীয়বার বেজে উঠল কর্ডটা। বেহালায় শুনছি বি-ফ্যাটের ষড়জ শোনাচ্ছে ছড়। দ্বিজেনদা, আমায় ছেড়ে দিন, আপনার পায়ে পড়ি। আমায় গাইতে দিন। খোদার কসম আমি ‘দিন যদি হলো অবসান’ গাইতে চাইছি, আপনি এসে দাঁড়াচ্ছেন আপনার ‘আপনি’টা নিয়ে রবীন্দ্রনাথের ঐ গান আর আমার মাঝখানে। —- তৃতীয়বার বেজে উঠল কর্ড। আমি গান ধরলাম। ধরেই বুঝলাম আমি ভুলে যাচ্ছি। এতো অসহায় কোনদিন বোধ করিনি। রবীন্দ্রনাথ – বাঁচান আমায়। আকশটা দেখা যাচ্ছে। দেখছি। কে বাঁচাবে আমায়…
“ঐ তব এলো আহ্বান” ভুলে গেলাম। লড়ছি। পারলাম না। “তব”টা হয়ে গেল “বুঝি”। বাকি সব ঠিকঠাক। গাইতে গাইতে আমি মনে করার চেষ্টা করছি হারিয়ে যাওয়া কথাটা কী, কোথায়? আমিও লড়তে জানি। কিন্তু আশি-পেরনো বাঙলার শিল্পী দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়ের এই বয়সের লড়াই-এর কাছে হেরে গেল আমার লড়াই। গোটা পরিবেশনায় একবারও “তব” এলো না।
না। আমি লজ্জিত নই। বরং গর্বিত যে আমার গুরস্থানীয় এক শিল্পী এই বয়সেও এমন গান শোনালেন যে আমি আমার গানটা ভুলেই গেলাম। আমি জানি আর কেউ আমায় ক্ষমা না করুন রবীন্দ্রনাথ করবেনই।
সেই থেকে কেমন যেন আছি। বিচিত্র। রবীন্দ্রনাথের গানের নামে কিছু বছর যাবৎ যে সব গান শুনতে বাধ্য হই মাঝেমাঝেই, আধুনিক গানের নামেও, তাতে নিজেকে অশুচি মনে হয়। দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় আমায় স্নান করিয়ে দিলেন। “ডি-টক্সিকেট” করে দিলেন।
রবীন্দ্রনাথের গান যে ভুল একটি কথা দিয়ে গাইলাম? এ আমার পরাজয়। এক বিরাট শিল্পীর শিল্পের কাছে আমার ক্ষুদ্রতার নজির। আমার ব্যর্থতা। সব গুলিয়ে দিলেন তিনি।
তাঁর গান শুনতে শুনতে, তাঁর গাওয়ার ভঙ্গি দেখতে দেখতে আমার অসহায়তা, আমার পালাই-পালাই ইচ্ছে, আমার গুলিয়ে যাওয়া গুলিয়ে ফেলা সমালোচকের খাদ্য হলেও আমার কাছে প্রমাণ করল – আমি এখনও মরে যাইনি। একটা গোটা শ্রেণীর, গোটা দেশের ঘনিয়ে ওঠা সাংস্কৃতিক পচ্যতা ও যথেচ্ছাচার আমার মনটাকে এখনও ধ্বংস করে দিতে পারেনি। এখনও উপযুক্ত জিনিস শুনলে নিজের অক্ষমতাটা আমায় জানান দেয়, আমার ভেতরে ওলটপালট করে দেয়। আমায় দিয়ে ভুল করায়। সেই ভুলের মধ্য দিয়ে আমি এখনও শিখি। এখনও আমি এক কৃতজ্ঞ শিক্ষার্থী যে কোনওদিন নিখুঁত হবে না, হতে পারবে না। যার খুঁত, দুর্বলতা থেকে যাবেই। যাবেই। তাও সে লড়বে। কেউ শুনবে বলে না। সুরে থাকার লড়াইটাই সব, তাই।
বিনীত
সদ্য দ্বিজেনায়িত, ভুল গাওয়া কবীর সুমন
১১-০৫-২০১৫
