কালায় প্রাণটি নিল [Kalay Pranti Nilo] | রাধারমন দত্ত
“কালায় প্রাণটি নিল” গানটি লিখেছেন এবং সুর করেছেন রাধারমণ দত্ত । রাধারমন দত্ত একজন বাংলা সাহিত্যিক, সাধক কবি, বৈঞ্চব বাউল, ধামালি নৃত্য-এর প্রবর্তক। সংগীতানুরাগীদের কাছে তিনি রাধারমণ বলেই সমাধিক পরিচিত ।
কালায় প্রাণটি নিল [Kalay Pranti Nilo] | রাধারমন দত্ত
গীতিকার: রাধারমণ দত্ত
সুরকার: রাধারমণ দত্ত
কালায় প্রাণটি নিল লিরিক্স:
আমারে যে রেখে গেল
উদাসী বানাইয়া
কালায় প্রানটি নিল
বাঁশিটি বাজাইয়া
কে বাজাইয়া যাওরে বাঁশি
রাজপথ দিয়া
মনে লয় তার সঙ্গে যাইতাম
কুলমান ছেদিয়া
কালায়-প্রাণটি নিল
বাঁশিটি বাজাইয়া
অষ্ট আঙ্গুল বাঁশের বাঁশি
মধ্যে মধ্যে ছেদা
নাম ধরিয়া ডাকে বাঁশি
কলঙ্কিনী রাধা(রে)
কালায়-প্রাণটি নিল
বাঁশিটি বাজাইয়া
বাঁশিটি বাজাইয়া বন্ধে
থৈল কদমতলে
লিলুয়া বাতাসে বাঁশি
রাধা রাধা বলে(রে)
কালায়-প্রাণটি নিল
বাঁশিটি বাজাইয়া
ভাইবে রাধারমণ বলে
মনেতে ভাবিয়া
নিভিয়াছিল মনের আগুন
কে দিল জ্বালাইয়া(রে)
কালায়-প্রাণটি নিল
বাঁশিটি বাজাইয়া(২)
আমার যে থৈয়া গেল
উদাসী বানাইয়া(রে)
কালায়-প্রাণটি নিল
বাঁশিটি বাজাইয়া(২)
রাধারমন দত্তঃ
বাংলা লোকসংগীতের পুরোধা লোককবি রাধারমণ দত্ত। রাধা রমন নিজের মেধা ও দর্শনকে কাজে লাগিয়ে মানুষের মনে চিরস্থায়ী আসন করে নিয়েছেন। কৃষ্ণ বিরহের আকূতি আর না-পাওয়ার ব্যথা কিংবা সব পেয়েও না-পাওয়ার কষ্ট তাকে সাধকে পরিণত করেছে। শ্রীহট্ট বা সিলেট অঞ্চলের পঞ্চখণ্ডে ত্রিপুরাধিপতি ‘ধর্ম ফাঁ’ কর্তৃক সপ্তম শতকে মিথিলা হতে আনিত প্রসিদ্ধ পাঁচ ব্রাহ্মণের মধ্যে ‘আনন্দ শাস্ত্রী’ নামক বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব রাধারমণ দত্তের পুর্ব পুরুষ ছিলেন ।
১২৭৫ বঙ্গাব্দে মৌলভীবাজারের আদপাশা গ্রামে শ্রী চৈতন্যদেবের অন্যতম পার্ষদ সেন শিবানন্দ বংশীয় নন্দকুমার সেন অধিকারীর কন্যা গুণময়ী দেবীকে বিয়ে করেন। কালক্রমে তিনি একজন স্বভাব কবি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।
রচনা করেন হাজার হাজার বাউল গান । লিখেছেন কয়েকশ ধামাইল গান। ধামাইল গান সমবেত নারী কন্ঠেবিয়ের অনুষ্ঠানে গীত হয়। বিশেষত সিলেট, কাছাড়, ত্রিপুরা ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে একসময় এর প্রচলন খুব বেশি ছিল। রাধারমণ দত্ত একাধারে গীতিকার, সুরকার ও শিল্পী ছিলেন। জানা যায়, সাধক রাধারমণ দত্তও মরমি কবি হাসন রাজার মধ্যে যোগাযোগ ছিল।
১৯৯৭ সালে কেশবপুর গ্রামের বাসিন্দা তৎকালীন পাটলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর মিয়া ব্যক্তিগত উদ্যোগে কেশবপুর গ্রামে মরমী এ কবির শেষ স্মৃতিচিহৃ সমাধি মন্দিরকে ছোট একটি পাকা মন্দির নির্মাণ করে তা সংরক্ষনের ব্যবস্থা করে দেন।
ওই ছোট মন্দিরে একটি কুর্শিতে রাধারমণ দত্তের ছোট ছবি ও তার নিজের ব্যবহৃত খড়ম রয়েছে। ওই সমাধি মন্দিরের একপাশে বাস করা এক হিন্দু পরিবার যুগ যুগ ধরে বংশপরমপরায় মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষন করছেন।
কবি রাধারমণের পারিবারিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় উপাসনার প্রধান অবলম্বন সংগীতের সংগে তার পরিচয় ছিল শৈশব থেকেই। খ্যাতিমান লোককবি জয়দেবের গীতগৌবিন্দ এর বাংলা অনুবাদ করেছিলেন তার পিতা রাধামাধব দত্ত। পিতার সংগীত ও সাহিত্য সাধনা তাকেও প্রভাবিত করেছিল।১২৫০ বঙ্গাব্দে রাধারমণ পিতৃহারা হন এবং মা সুবর্ণা দেবীর কাছে বড় হতে থাকেন। তিনি বাল্যাবধি ঈশ্বরে বিশ্বাসী ও ধর্মানুরাগী ছিলেন। শাস্ত্রীয় পুস্তকাদীর চর্চা ও সাধু সন্ন্যাসীর সংস্পর্শে এসে তিনি শাক্ত, শৈব, বৈষ্ণব ইত্যদি নানা মত ও পথের সঙ্গে পিরিচিত হন। কবির সংসারজীবন সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায় নি।
তিনি ১৯১৫ সালে মারা যান ।
আরও দেখুনঃ