“কৃষ্ণ হারা হলেম জগতে” — এই অন্তর্দর্শী ও দার্শনিক বাউল গানটি রচনা করেছেন বাংলা মাটির মহান সাধক ফকির লালন শাহ। লালন ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, সমাজচিন্তক ও মানবতাবাদী দর্শনের প্রচারক। তার গান শুধু সংগীত নয়, জীবনের দর্শন ও আত্মানুসন্ধানের পথরেখা।
এই গানে “কৃষ্ণ” প্রতীক হয়ে এসেছে ঈশ্বর, প্রেম বা চেতনার। “কৃষ্ণ হারা হলেম জগতে” — এই কথার মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায় আত্মিক বেদনাবোধ, এক মহা বিচ্ছেদের উপলব্ধি, যেখানে মানুষ নিজের ভেতরের কৃষ্ণ বা সত্তাকে হারিয়ে ফেলে সংসারের মোহে। গানে উঠে আসে ভক্তির গভীরতা, বাউল-দর্শনের অনন্ত অনুসন্ধান, এবং আত্মিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষা।
লালনের এই গান তার সাম্যবাদী ও অসাম্প্রদায়িক চিন্তার একটি অনুপম প্রতিফলন, যেখানে মানুষ, ধর্ম ও সত্তার একক সুর তৈরি হয়।
কৃষ্ণ হারা হলেম জগতে
গো বৃন্দে ললিতে।
আমি কৃষ্ণহারা হলাম এ জগতে।।
ও সখিরে চলো আমরা বনে যাই
বন্ধুর দেখা নাই
বৃন্দাবন আছে কতো দূরে;
ছাড়িয়া ভাবের মায়া
দেহ করিলাম পদছায়া
ললিতে তাঁর পায়ের ধ্বনি শুনিতে।।
আগে সখি পাছে সখি
শত শত সখি দেখি
সব সখির কর্ণে সোনারে;
নদীর কূলে বাজায় বাঁশি
কপালী তিল তোরসী
রাধিকার বন্ধু হয় কোন জনেতে।।
বনের পশু যারা
আমার থেকে ভালো তারা
সঙ্গে লয়ে থাকে আপন পতিরে;
তারা পতির সঙ্গে করে আহার
পতির সঙ্গে করে বিহার
লালন বলে মজে থাকে আপনার পিরিতে।।

কৃষ্ণ হারা হলেম জগতে – কভার :