গীতগোবিন্দ ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীত

গীতগোবিন্দ ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীত নিয়ে আজকের আলোচনা। জয়দেবের ‘গীতগোবিন্দ প্রবন্ধ শ্রেণীর সঙ্গীত অর্থাৎ এই গানগুলি কলিদ্বারা নিবন্ধ। আধুনিক পাঠক ‘গীতগোবিন্দের’ ২৪টি গানেই বেশী মুগ্ধ “মধুর কোমল কান্ত – পদাবলীং শুনুদী জয়দেব সরস্বতীম”

গীতগোবিন্দ ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীত

 

গীতগোবিন্দ রচনার পরপরই দক্ষিণ ভারতে এর অনুশীলন বিস্তার লাভ করে। কিন্তু নানা কারণে উত্তর ভারতে এর ধারাবাহিকতা প্রচলনের সূত্রটি লুপ্ত হয়ে পড়ে বিক্ষিপ্তভাবে গীতগোবিন্দের দু’ একটি অক্টাপনীর প্রচলন থাকলেও সামগ্রিকভাবে এর নৃত্যসঙ্গীতনাট্য সমন্বিত রূপচর্চা লোপ পায়।

জয়দেবের মৃত্যুর দ্বিশতাধিক বৎসর পরে মেবারের রানাকৃষ্ণ গীতগোবিন্দের পদগান নবভাবে প্রচলনের প্রয়াস পান বহুভাষা এ শাস্ত্রবিধ সঙ্গীতগুণি রানা কুম্ভের রাজত্বকালে (১৪৩৩-১৪৬৮ খ্রিস্টাব্দে)। তিনি রসিক প্রিয়া নামে গীতগোবিন্দের টিকা প্রণয়ন করেন এবং ‘সঙ্গীতরাজ’ গ্রন্থে জয়দেবের পদাবলীর রাগ বিশ্লেষণ করে অষ্টমপদীসমূহে নুতন করে সংযোজনা করে জনপ্রিয়তার সঙ্গে প্রচলিত করেন।

গীতগোবিন্দের ২৪টি পদে জয়দেব যেভাবে রাগ ও তালের বিন্যাস করেছিলেন তার প্রচলিত রূপের অবর্তমানে রানাকুম্ভ নিজেই তাতে রাগতাল যোজনা করেন। এই নবসঙ্গীত যোজনায় তিনি পূর্বেকার সঙ্গীতশাস্ত্রী ভরত মতঙ্গ প্রমুখের সঙ্গীত ভাবনাকে অনুসরণ করেছেন বলে কুম্ভ নিজেই জানিয়েছেন তাঁর রসিকপ্রিয়ার সূচনায়। গীতগোবিন্দের প্রথম গানটি জয়দেব মালব গৌড় রাগে প্রথিত করেন।

কিন্তু রানাকুম্ভ তাতে সংযোগ করেন মধুমাধবী রাগ। দ্বিতীয় অষ্টপদীটি জয়দেব প্রথিত করেন গুর্জরী রাগে, কুম্ভ তাতে যোজনা করেন ললিতরাগ ও লঘুআদি তাল। তৃতীয় গানটির মূলরাগ ছিল বসন্ত এবং তাল ছিল যতি। কুম্ভ তাতে বসন্ত রাগ এবং ঝাঁপতাল প্রয়োগ করেন। প্রথম সর্গের চতুর্থ গানটি জয়দেব গৃহিত করেছিলেন রামকিরি রাগে ও যতি তালে। কুম্ভ তাতে গুর্জরী রাগ ও ঝম্পতাল যুক্ত করেন।

৫ম গানটি বা দ্বিতীয় সর্গের প্রথম গানটি জয়দেব রচনা করেন গুর্জরী রাগে ও যতি তালে। রানা কুম্ভ তাতে আরোপ করেন ভৈরব রাগ ও যতি ভাল। এমনিভাবে কু গীতগোবিন্দের অষ্টাপদীসমূহকে নবভাবে রাগতালে বিন্যস্ত করেন।

গীতগোবিন্দে যে রাগের ব্যবহার দেখা যায় তা হল-মধুমাধবী, গুর্জরী, ললিত, বসন্ত, রামকিরী, পঞ্চম, ধানসী, মালবগৌড়, ভৈরব, গৌড়কৃতি, দেশাখ, মালবশ্রী, কেদার, মালব, স্থানগৌড়, শ্রীরাগ, মল্লার, বরাটি, মেঘ, নট, গৌস্তকৃতি, নন্দ, শ্রী, ভৈরবী, কর্ণাট, বঙাল ইত্যাদি।

কুম্ভ কতৃক প্রযুক্ত তাল হচ্ছে : আদি, নিসার, যতি, লঘু-আদি, ঝম্প, একতালী, প্রতিমষ্ঠ, অড্ডা, দ্রুতমষ্ঠ, ত্রিতাল, রূপক, ত্রিপুট, জয়শ্রী, জয়মঙ্গল ও বিজয়ামন্দ । উপরোক্ত বিষয়াদি থেকে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, গীতগোবিন্দে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অবস্থান সুদৃঢ় ।

Leave a Comment