ওস্তাদ জুলহাস উদ্দিন আহমেদ হলেন বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত নজরুল সঙ্গীত সাধক ও সঙ্গীত শিক্ষক। সঙ্গীতে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ২০১৭ সালে একুশে পদক লাভ করেন।
প্রারম্ভিক জীবন
জুলহাস উদ্দিন আহমেদ ১৯৩৩ সালের ১০ নভেম্বর মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার বাড়ৈখালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ইয়ার আলী বেপারি ও মাতার নাম হাসনা বেগম। এই দম্পতির ৫ ছেলে ও ৪ মেয়ের মধ্যে জুলহাসউদ্দীন সর্বকনিষ্ঠ।
আড়াই বছর বয়সে গুটি বসন্তে আক্রান্ত হওয়ার কারণে জুলহাসউদ্দীন চিরতরে দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে ফেলেন। তার পিতা-মাতা দুজনেই সঙ্গীত করতেন। এছাড়া তার নানা দেওয়ান আব্দুল কাদের অনেক দেহতত্বমূলক গান রচনা করেন এবং তাতে নিজেই সুর করেছেন। শৈশব থেকেই পারিবারিকভাবে সঙ্গীতের আবহে বেড়ে ওঠেন তিনি। ১৯৪০ সালে ৭ বছর বয়সে নিজ জেলায় সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে প্রথম স্থান অধিকার করে পদক লাভ করেন।
সঙ্গীতজীবন
১৯৪৯ সালে সঙ্গীতে প্রশিক্ষণ নিতে জুলহাস উদ্দিন আহমেদের বড় ভাই ফরহাদ হোসেন তাকে কলকাতাতে প্রেরণ করেন। সেখানে তিনি প্রথমে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী চিন্ময় লাহিড়ীর কাছে ও পরবর্তীতে তারাপদ চক্রবর্তীর কাছে উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে ৫ বছর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। কলকাতার বেলে ঘাটায় নারায়ণ মুখোপাধ্যায় নামে এক বন্ধুর বাড়িতে থেকে একই সময়ে তিনি সঙ্গীতের টিউশনি করা শুরু করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি পুনরায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) চলে আসেন। দেশে আসার পর রাজশাহীতে এক সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন ও স্বর্ণপদকসহ ‘সুর সাগর’ উপাধি লাভ করেন।
১৯৫৬ সালে তিনি পুনরায় কলকাতা গমন করেন এবং সেখানে আমির খাঁ, পণ্ডিত ওমকারনাথ ঠাকুর, নিসার হোসেন খাঁ ও বড়ে গুলাম আলী খানর সানিধ্য লাভ করেন। ১৯৬১ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি বেতারে নিয়মিত নজরুল ও আধুনিক গান পরিবেশন করেছেন। এছাড়া বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনে নজরুলসঙ্গীতের অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭৫ সালে তার কণ্ঠস্বর নষ্ট হয়ে যায়।
পুরস্কার ও সম্মননা
- নজরুল স্বর্ণপদক
- নাছিরউদ্দিন স্বর্ণপদক
- শিল্পকলা একাডেমী কর্তৃক সংবর্ধনা
- বুলবুল একাডেমী কর্তৃক সংবর্ধনা
- রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সংস্থা কর্তৃক সংবর্ধনা
- এবি ব্যাংক-চ্যানেল আই আজীবন সম্মাননা (২০১৬)
- একুশে পদক (২০১৭)
ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন
জুলহাস উদ্দিন আহমেদ ব্যক্তিগত জীবনে বিয়ে করেননি।তারা দাদার নাম মো. মনসুর উদ্দিন ও দাদির নাম আমেনা বেগম। তার বড় ভাই ফরহাদ হোসেন কুড়িগ্রাম জেলার এক সময়কার এসডিও ছিলেন।
আরও দেখুনঃ