তানজির তুহিন বাংলাদেশী সঙ্গীতশিল্পী, গায়ক-গীতিকার, অভিনেতা এবং স্থপতি। তিনি বাংলা রক ব্যান্ড শিরোনামহীনের সাবেক কণ্ঠশিল্পী ছিলেন। ২০১৭ সালে তিনি শিরোনামহীন ত্যাগ করেন। ২০১৮ সালে নতুন ব্যান্ড আভাস গঠন করেন। সঙ্গীতের পাশাপাশি কয়েকটি টেলিভিশন নাটকেও অভিনয় করেছেন তিনি।
প্রাথমিক জীবন
তানজির তুহিন ১৯৭৪ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের ঢাকায় জন্ম নেন এবং সেখানে তার ছেলেবেলা কাটে। তিনি ধানমন্ডি গভ: বয়েজ হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন। তুহিন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্যকলায় স্নাতক অধ্যয়ন করেন।
তানজির তুহিন প্রথম কয়েক বছরের জন্যে বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে (বাফা) নজরুল সঙ্গীত এবং শাস্ত্রীয় সঙ্গীত বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। তিনি রবীন্দ্রসঙ্গীতেরও তামিল নিয়েছিলেন। যেখানে তার সঙ্গীতগুরুদের মধ্যে ছিলেন ওস্তাদ আখতার সাদমানি, কিরণ চন্দ্র রায়, নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরী এবং ওস্তাদ নারায়ণ চন্দ্র বসাক।তুহীন পেশায় একজন স্থপতি।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নকালে বাংলা রক ব্যান্ড শিরোনামহীনের প্রতিষ্ঠিাতা সদস্য এবং বেসবাদক জিয়াউর রহমানের সাথে তার পরিচয় হয়। তারা দুজনই সে সময়ে সহপাঠী ছিলেন। ২০০০ সালে শিরোনামহীনের তৎকালীন ভোকাল মহিন দেশ ত্যাগ করায়, সে বছরের ডিসেম্বরে ভোকাল হিসেবে তুহিন শিরোনামহীনে যোগ দেন। জিয়া তাকে শিরোনামহীনে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানান।
শিরোনামহীনের সাথে তুহিন
শিরোনামহীনের সাথে তুহিনের প্রথম প্রকাশিত অ্যালবাম জাহাজী (২০০৪)। তুহিনের গাওয়া অ্যালবামের সাইকেডালিক রক ঘরানার “হাসিমুখ” গানটি ব্যপক জনপ্রিয়তা লাভ করে, যা মূলত শিরোনামহীনকে প্রাথমিক পরিচিতি এনে দিয়েছিল। পরবর্তীতে সতের বছরে দলটির সঙ্গে তিনি ইচ্ছে ঘুড়ি (২০০৬), বন্ধ জানালা (২০০৯), শিরোনামহীন রবীন্দ্রনাথ (২০১০), শিরোনামহীন শিরোনামহীন (২০১৩) অ্যালবামগুলি প্রকাশ করেন।
২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে তুহিন শিরোনামহীনের সাথে অন্তর্দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। সে সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তিনি জানান, “আমি ব্যক্তিগত কারণে শিরোনামহীন ছাড়ছি, কিন্তু গান নয়।”সে সবছরই ৭ অক্টোবর তুহিন ব্যান্ড ত্যাগ করেন। নতুন ভোকাল হিসেবে শেখ ইশতিয়াক শিরোনামহীনে যোগ দেন।
২০১৮ সালে তুহিন আভাস নামে নতুন ব্যন্ড গঠনের পরপরই শিরোনামহীনের সাথে আইনি দ্বন্ধে জড়িত হন। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের ভাষ্য অনুযায়ী শিরোনামহীনের গানসমূহের গীতিকার এবং সুরকার সূত্রে আইনগত সত্ত্বাধিকারী দলটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য জিয়া।সে দিক বিবেচনায় জিয়ার অনুমতিসাপেক্ষে এ সকল গান পরিবেশনের আইনত বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি হয়।
সে বছরের আগস্টে কপিরাইট অফিসের রায় অগ্রাহ্য করে তুহিন আভাস বান্ডের হয়ে শিরোনামহীনের গানগুলি পরিবেশন করছিলেন। ফলে ২০১৯ সালে আগস্টে শিরোনামহীন আদালতে অভিযোগ জানায়। আদালত তুহিন এবং তার ব্যান্ড আভাসের প্রতি শিরোনামহীনের গান পরিবেশনের আইনগত নিষেধাজ্ঞা জারি করে।এই রায়ের বিরুদ্ধে আভাস ব্যান্ড আপিল জানায়। ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর শিরোনামহীন ব্যান্ডের ৪৯টি গানের বিষয়ে আদালতের দেয়া নিষেধাজ্ঞা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে উচ্চ আদালত।
ফলে ২০২০ সাল নাগাদ তুহিন এবং তার ব্যান্ড আভাস গানগুলো পরিবেশন করতে পারছিলেন। পরবর্তীতে উক্ত আইনেই প্রেক্ষিতে শিরোনামহীন ব্যান্ড দল পুনারায় উচ্চ আদালতে আপিল জানালে ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি শিরোনামহীন নিজেদের পক্ষে মাললা জিতে।তুহিন শিরোনামহীনের তিনটি গান: “হয় না”, “পরিচয়” এবং “আহত কিছু গল্প” পরিবেশন করতে পারবেন, কারণ এই গানগুলোর গীতিকার-সুরকার ছিলেন তুহিন।
টেলিভিশন কর্মজীবন
সঙ্গীতচর্চার পাশাপাশি তানজির তুহিন কয়েকটি বাংলা টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেছেন। মধ্যরাত্রিতে তিনজন দুর্ভাগা তরুণ নাটকের মাধ্যমে অভিনয়ে তার অভিষেক ঘটে। নাটকটি বাংলাদেশি লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবালের একই নামের গল্প অবলম্বনে নির্মিত।
২০১১ সালে তিনি মাসুদ হাসান উজ্জ্বল পরিচালিত থতমত এই শহরে টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেন অপি করিমের সাথে। ২০১৩ সালে তিনি মিজানুর রহমান আরিয়ান পরিচালিত ট্রাম কার্ড নাটকে জিকো চরিত্রে অভিনয় করেন বিদ্যা সিনহা সাহা মীমের বিপরীতে।অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি বিটিভিতে প্রচারিত, চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া মোকাবেলার উদ্দেশ্যে নির্মিত বিবিসির “আমরাই পারি” রিয়েলিটি টেলিভিশন ধারাবাহিকে উপস্থাপনার কাজ করেছেন।
ব্যান্ড অ্যালবাম
- জাহাজী (২০০৪)
- ইচ্ছে ঘুড়ি (২০০৬)
- বন্ধ জানালা (২০০৯)
- শিরোনামহীন রবীন্দ্রনাথ (২০১০)
- শিরোনামহীন শিরোনামহীন (২০১৩)
- মানুষ(আভাস ব্যান্ডের প্রথম গান)
ব্যান্ড মিক্সড অ্যালবাম
- নিয়ন আলো স্বাগতম (২০০৭)
- স্বপ্নচূড়া ২ (২০০৬)
- স্বপ্নচূড়া ৩ (২০০৭)
- বন্ধুতা (২০০৮)
- রক ১০১ (২০০৮)
- রক ২০২ (২০০৯)
- জয়োধ্বনি (২০১১)
- গর্জে উঠো বাংলাদেশ (২০১১)
আরও দেখুনঃ