তারানা গান গীত ধারা নিয়ে আজকের আলোচনা। ভারতীয় সংগীতের ধারায় অর্থহীন কতগুলো ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টি সহযোগে চিত্ত হরণ করা যে বিশেষ শৈলীর গান পরিবেশন করা হয় তাকে বলে তারানা বা তেলেনা। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে সম্রাট আলাউদ্দিন খিলজির (১২৯৬-১৩১৬) উচ্চপদস্থ রাজসভাসদ ও সংগীতজ্ঞ হজরত আমির খসরু ব্যতিক্রম শৈলীর এই গান প্রবর্তন করেন।
তারানা গানে শুধুমাত্র স্থায়ী ও অন্তরা এই দুটি তুক বা ভাগ থাকে । খেয়াল গানের প্রক্রিয়ায় তারানা গাওয়া হলেও উভয়ের মধ্যে ভাষার পার্থক্য বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়। খেয়াল গান রচনায় ভাবসমৃদ্ধ ভাষা বেশ গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু তারানার ক্ষেত্রে কতগুলো অর্থহীন ধ্বনির সমন্বয় ঘটে। এই গীতশৈলীতে দেরেনা, নাদেরে, তানা, দানি, দেরদের, ইয়ালালোম, তা দেরে, দেরতুম, না, ওদিয়ানা, দ্রিম, ইয়ালালি ইত্যাদি কতগুলো অর্থহীন ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টি এবং কখনো কখনো অর্থহীন ফারসি শব্দের প্রয়োগও দেখা যায়। তারানা গানের রচনা সাধারণত এরকম ধ্বনিসমষ্টির সহযোগেই করা হয়ে থাকে। আবার কোনো কোনো সময় বৈচিত্র্য আনার জন্য এই রচনাগুলোর মধ্যে তবলা বা পাখোয়াজের বোল অত্যন্ত নান্দনিকতার সঙ্গে প্রয়োগ করা হয়।
তারানা গানে রাগ ও তালের প্রাধান্যই বেশি এবং দ্রুতলয়ে গাওয়া হয় বলে লয়কারীর চমৎকারিত্বে দর্শক-শ্রোতার চিত্ত প্রফুল্ল হয়ে ওঠে। কোনো কোনো সময় ছোট তানের প্রয়োগ এর রূপমাধুর্যকে অসম্ভব বাড়িয়ে দেয়। তারানা গান ত্রিতাল, একতাল, ঝাঁপতাল ইত্যাদিতে তুলনামূলকভাবে বেশি নিবদ্ধ হয়ে থাকে। জিহ্বার জড়তা কাটাতে তারানা অনুশীলন সংগীতগুণীজন মহলে অত্যন্ত সমাদৃত।
ওস্তাদ তানরস খাঁ, ওস্তাদ বাহাদুর হোসেন খাঁ, ওস্তাদ নথু খাঁ, ওস্তাদ নিসার হোসেন খাঁ প্রমুখ স্বনামখ্যাত সংগীতজ্ঞ শ্রেষ্ঠ তারানা রচয়িতা ও শিল্পীদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । খ্যাতিমান শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পীদের খেয়াল গাওয়ার পর ঠুংরি, ভজন ইত্যাদির পরিবর্তে তারানা পরিবেশন করতে দেখা যায়।
০ +
নাদেরে দেরে তা দেরে না দেরে না
নাদের দের তা দেরে না
ইয়ালালোম ইয়ালালোম
ইয়ালালি ইয়ালালে।
দের না তানা নানা নানা নানা
তাদের না ইয়ালালোম ॥
+
নাদের দেরতুম দেরদের তানা দেরে না
তানা তানা দেরে না
দের দের দের তা দারে দানি
তা দের না তানা দেরে না
দিম দের না দিম তানা
দের দের দের তা দারে দানি
ধা কেটে তাক ধুম কেটে তাক ধিৎ তা ক্রান
ধাতি ধা কেড়ে নাক তেরেকেটে তাক ক্রান
কেড়ে নাক তেরেকেটে ধাতি ধা ক্রান
তা ধা ইয়ালালোম ইয়ালালোম ॥
[ ঠাট : বিলাবল, রাগ : বিহাগ, বাদীস্বর : গান্ধার (গ), সমবাদীস্বর : নিশাত (ন), অঙ্গ : পূর্বাঙ্গ প্রধান, জাতি : ঔড়ব-সম্পূর্ণ, গায়ন সময়: রাত্রি দ্বিতীয় প্রহর, আরোহী : ন্ স গ ম প ন র্স, অবরোহী স ন ধ প ক্ষগ মগ রস ]
আরও দেখুন: