তুই হেসে উঠলেই – গানটি কবীর সুমনের ১৯৯২ সালে প্রকাশিত এ্যলবাম “তোমাকে চাই” এর একটি গান।
তুই হেসে উঠলে ….
তুই হেসে উঠলে, সূর্য লজ্জা পায়
আলোর মুকুট খানা তোকেই পরাতে চায়
তুই হাততালি দিলে যাকির হোসেন
তবলা বাজানো ছেড়ে পায়রা পোষেন
তুই নেচে উঠলেই ছন্দের ছুটি
ছান্দসিকেরা হাল ছাড়ে মোটামুটি
তুই গেয়ে উঠলেই ভেঙে খানখান
কপট ভণ্ড যত পরিচিত গান
তুই কথা বললেই সন্ধি-সমাস
ব্যাকরণ থেকে ছুটি চায় তিন মাস
তোর মুখ ভার হয়ে বিষাদজনিত
কারণে তাই নিশানগুলো অর্ধনমিত
গর্বের তুই ফিক করে হেসে দিলে
নিশানে হাততালি আকাশে নীলে।
এই এলবামটির স্মৃতিচারণ করে কবীর সুমন লিখেছিলেন:
‘তোমাকে চাই’ এলবামটি বেরিয়েছিল আজকের দিনে, ১৯৯২ সালে। তাও – দ্যাখো-দ্যাখো করে চব্বিশ বছর হয়ে গেল। আমার লেখা সুরে প্রথম এলবাম। বেরোত না যদি রবি কিচলু নামে এক অবাঙালি ভদ্রলোক না থাকতেন তখনকার গ্রামোফোন কম্পানি অফ ইণ্ডিয়াতে আর থাকতেন শ্রীযুক্ত ঝা নামে আর-একজন অবাঙালি ভদ্রলোক যিনি গ্রামোফোন কম্পানি অফ ইণ্ডিয়ার মুম্বই অফিসে চাকরি করতেন।
এইচ এম ভির (গ্রামোফোন কম্পানি অফ ইণ্ডিয়ার) রেকর্ড কেন বিক্রী হচ্ছে না, বাজারে কোনও জায়গা পাচ্ছে না তা যাচাই করার জন্য শ্রী ঝা-কে মুম্বই থেকে কলকাতায় আনা হয়েছিল।রেকর্ড ও গানের গন্ধ শুঁকে বলে দিতে পারতেন অনেক কিছু। এই গল্পটা আমায় বলেছিলেন রবি কিচলু সাহেব তাঁর মৃত্যুর আগে। দমদমে, গ্রামোফোন কম্পানির স্টুডিয়ো সংলগ্ন একটা ঘরে ঝা সাহেব বসে বসে শুনছেন ক্যাসেটের পর ক্যাসেট। একটাও পছন্দ হচ্ছে না।
হঠাৎ তিনি দেখতে পেলেন একটা টেবিলের তলায় একটা ক্যাসেট পড়ে। জিনিসটি দেখতে চাইলেন। বাঙালি বড়-কর্তারা তাঁকে বললেন, ‘ওটা নেহাতই ফালতু। নতুন একটা বিভাগ (রবি কিচলু সাহেবের অধীনে, অর্থাৎ গ্রামোফোন কম্পানির মূল A & R বা Artists and Repertoire বিভাগের প্রযোজনায় ‘তোমাকে চাই’ বেরোয়নি) ওটা বের করেছে। মালটার sample সব ডীলার ফেরত পাঠিয়েছে। কেউ নিতে চাইছে না।’
ঝা সাহেবের রোখ চেপে গেল। উনি বললেন, আমি শুনব। – বাঙালি বড়-দাদারা প্রাণপণ চেষ্টা করে গেলেন তাঁকে নিরস্ত করতে, কিন্তু পেরে উঠলেন না। ঝা সাহেব বসে বসে ‘তোমাকে চাই’-এর দুটো পিঠ শুনলেন। সময় নষ্ট না করে Print Order-এর ফর্ম নিয়ে তাতে যা যা লেখার লিখে নির্দেশ দিলেন – আজই তিরিশ হাজার কপি ছাপানো হোক, কাল থেকে দোকানে দোকানে সাপ্লাই। এক মাসের মধ্যে আরও তিরিশ হাজার ও সরবরাহ। দসজ দিনের মধ্যে ‘তোমাকে চাই’ বিক্রী হতে লাগল ঝড়ের মতো। উমাসের মধ্যে ষাট হাজার কপি বিক্রী হয়ে গেল। তার পরেও …
ঝা সাহেবকে যদি গ্রামোফোন কম্পানি মুম্বই থেকে কলকাতায় না আনতেন এবং এখানকার A & R বিভাগের বাঙালি কর্তাদের অনবধানবশত এক খণ্ড ‘তোমাকে চাই’ যদি অডিশন কক্ষের একটা টেবিলের নিচে পড়ে না থাকত তাহলে?
রবি কিচলু আমায় জানিয়ে দিয়েছিলেন – কলকাতার বড় কর্তারা এবং নামজাদা শিল্পীদের মধ্যে অনেকে, এমনকি মুম্বই-এর এক জগদবিখাত কন্ঠশিল্পী ব্যক্তিগতভাবে চেষটা করেছিলেন ‘তোমাকে চাই’ যাতে না বেরোয়। বড় কর্তা তাঁর মত চেয়েছিলেন এবং তিনি তা লিখিতভাবে দিয়েছিলেন – এই ব্যক্তির গান যেন না বের করা হয়। আরও অনেক কিছু আমি জানি, কিন্তু তা এখানে লিখছি না। কী লাভ।
আমার নিজের ধারণা, ‘তোমাকে চাই’-এর চেয়ে ঢের জরুরি গান আমি তার পরে বানিয়েছি, এখনও বানাচ্ছি। সত্যি বলতে, ‘পাগল’, ‘দশ ফুট বাই দশ ফুট’ – ঐ এলবামের অনেক জরুরি গান।
আরও দেখুন: