ধীর আলী মিয়া । বাংলাদেশী যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পী, সঙ্গীতশিল্পী, সঙ্গীত পরিচালক ও সুরকার

ধীর আলী মিয়া ছিলেন একজন বাংলাদেশী যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পী, সঙ্গীতশিল্পী, সঙ্গীত পরিচালক ও সুরকার। সঙ্গীত পরিচালনার জন্য তিনি ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক প্রদত্ত তমঘায়ে ইমতিয়াজ এবং যন্ত্র ও লোকসঙ্গীত এ  অবদানের জন্য ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন।

ধীর আলী মিয়া । বাংলাদেশী যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পী, সঙ্গীতশিল্পী, সঙ্গীত পরিচালক ও সুরকার

প্রাথমিক জীবন

ধীর আলী মিয়া ১৯২০ সালের ১ জানুয়ারি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) মুন্সীগঞ্জ জেলার টংগিবাড়ী উপজেলার বাঁশবাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পরে সোনারং উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন। কিন্তু সঙ্গীতের প্রতি অনুরাগবশত পড়ালেখায় ইস্তফা দিয়ে প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ পিতৃব্য সাদেক আলীর নিকট শৈশব থেকেই বংশীবাদনে পাঠগ্রহণ শুরু করেন। ধীর আলী বাঁশি ছাড়া বেহালা, গিটার এবং ক্লারিওনেট বাদনেও বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। তবে বংশীবাদক হিসেবেই তাঁর খ্যাতি সর্বাধিক। আধুনিক বাংলা গানে লোকসঙ্গীতের সুর সংযোজন করে তিনি এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেন।

কর্মজীবন

ধীর আলী মিয়ার কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৪৫ সালে অল ইন্ডিয়া রেডিওর ঢাকা কেন্দ্রে অনিয়মিত বংশীবাদক হিসেবে। ভারত বিভাগের পর ১৯৪৮ সালে ঢাকা কেন্দ্রে তিনি নিজস্ব শিল্পী হিসেবে যোগ দেন।১৯৫২ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত লাহোরে অনুষ্ঠিত ‘অল পাকিস্তান রেডিও মিউজিক কনফারেন্স’-এ শিল্পী ও প্রযোজক হিসেবে তিনি নিয়মিত অংশগ্রহণ করেন এবং বাংলা সঙ্গীতকে অবাঙালি বিশেষজ্ঞ-শ্রোতাদের নিকট তুলে ধরেন।

ধীর আলী মিয়া । বাংলাদেশী যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পী, সঙ্গীতশিল্পী, সঙ্গীত পরিচালক ও সুরকার

এছাড়া ভারতে অনুষ্ঠিত বঙ্গ সংস্কৃতি সম্মেলনেও তিনি দুবার অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭২ সালে তিনি ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিদলের সদস্যরূপে তিনি রাশিয়া এবং আফগানিস্তানও সফর করেন।

১৯৮৩ সালে উপপ্রধান সঙ্গীত প্রযোজক পদে থাকাকালীন চাকরি থেকে অবসর নেন। তিনি বুলবুল ললিতকলা একাডেমি ও আর্টস কাউন্সিলের প্রশিক্ষণ কোর্সের শিক্ষকতা করেন। তিনি ‘ঢাকা অর্কেস্ট্রা’ নামক একটি ঐকতান-বাদকদল গঠন করেন, যা বাংলাদেশের সঙ্গীতের উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

হিজ মাস্টার্স ভয়েজ এবং ঢাকা গ্রামোফোন কোম্পানি থেকে ধীর আলীর সুরে ও পরিচালনায় অনেক গানের রেকর্ড প্রকাশিত হয়। সেসবের মাধ্যমে তাঁর সঙ্গীতপ্রতিভার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।

ধীর আলী মিয়া চলচ্চিত্রের গানের সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক হিসেবেও কাজ করেন। তিনি বাংলার লোকসঙ্গীতে আধুনিক ধারার প্রবর্তক। পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশে নির্মিত প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র মুখ ও মুখোশ-এ তিনি সমর দাসের সহকারী সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। পরবর্তীতে তিনি নাচঘর, উজালা, জোয়ার এলো, কাঞ্চনমালা, আবার বনবাসে রূপবান, দস্যুরানী, কাজলরেখা চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করেন।

ধীর আলী মিয়া । বাংলাদেশী যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পী, সঙ্গীতশিল্পী, সঙ্গীত পরিচালক ও সুরকার

মৃত্যু

ধীর আলী ১৯৮৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment