ওস্তাদ নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরী একজন বাংলাদেশি আধুনিক ও ধ্রুপদী সঙ্গীতশিল্পী।তিনি উস্তাদ আয়াতুল্লাহ খানের কাছ থেকে তালিম লাভ করেন।অতঃপর তিনি উপমহাদেশের দুই কিংবদন্তী কণ্ঠশিল্পী উস্তাদ আমানাত আলি খান এবং ফতেহ আলি খানের কাছ থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হন।
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরীর জন্ম ১৯৫২ সালের ২৫শে অক্টোবর। যদিও সার্টিফিকেটে ১৩ই জানুয়ারি হওয়ায় সবাই সেই তারিখটাকেই ফলো করে থাকেন, মিডিয়াগুলো সেই তারিখ অনুযায়ীই তাঁকে নিয়ে কাজ করে। তাঁর গ্রামের বাড়ি ও জন্মস্থান নরসিংদীর শিবপুর থানার খৈনকুট গ্রামে।
পরিবারের সবার সাথে শৈশবের কিছুটা সময় সেখানে কাটলেও মূলত ঢাকাতেই তিনি বড় হয়েছেন। ১৯৬৭ সালে ঢাকার বকশি বাজারের নবকুমার ইনস্টিটিউট থেকে এসএসসি, ১৯৬৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন তিনি। শিক্ষাজীবন শেষে পুরোপুরি গানের প্রতি ঝুঁকে পড়লেও মাঝখানে কিছুদিন লন্ডনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডন) শিক্ষকতাও করেন।
পারিবারিক জীবন
পারিবারিক জীবনে ওস্তাদ নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরী দুই সন্তানের জনক। ছেলে ফাইয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরী ও মেয়ে মেহনাজ চৌধুরী বারখা। পেশাদার শিল্পী না হলেও ছেলে-মেয়ে দুজনেই দারুণ গান করেন, বাবার মতোই শুদ্ধ সংগীতকে লালন করেন। ছেলে ফাইয়াজ বাবার সাথে কয়েকটি টিভি অনুষ্ঠানে মিউজিশিয়ান হিসেবে বাজিয়েছেন বিভিন্ন সময়। মেয়ে অবশ্য দেশের বাইরে থাকেন। তাঁর স্ত্রী সাবরা নিয়াজও সংগীত পরিবারের সন্তান। শ্বশুর সৈয়দ জাকির হোসেনও ছিলেন উপমহাদেশের একজন খ্যাতিমান সুরস্রষ্টা ও উচ্চাঙ্গ সংগীতের গুরু।
কর্মজীবন
নিভৃতচারী সুরসাধক নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরী প্রথম টেলিভিশনে আসেন ১৯৮৫ সালে, বিটিভিতে ‘আমার যত গান’ নামক অনুষ্ঠানে। আবু হেনা মোস্তফা কামাল ছিলেন এর উপস্থাপক। যদিও এর আগেই তিনি বিদেশে গাইতে শুরু করেছিলেন।
১৯৭৯ সালে প্রথমবার মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে গাইতে যান। এরপর একে একে বিভিন্ন দেশে গিয়ে নিজের কণ্ঠ আর সুরের মূর্ছনায় শ্রোতাদের সামনে দেশের, বাংলা গানের প্রতিনিধিত্ব করতে থাকেন। ক্রমশ দেশ-বিদেশের শ্রোতাদের মুগ্ধ করে উপমহাদেশের অন্যতম ধ্রুপদী শিল্পীতে পরিণত হন তিনি।
ভারতীয় শাস্ত্রীয় ও রাগ সংগীতের ওপর দুর্দান্ত দখল থাকা এই সাধক শিল্পী ঠুমরি, খেয়াল, গজলসহ সকল ঘরানাতেই নিজেকে মেলে ধরেছেন দারুণভাবে।
শাস্ত্রীয় সংগীতের পাশাপাশি নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরী গেয়েছেন আধুনিক বাংলা গানও। ভিন্ন স্বাদের দারুণ সব কথা ও সুরে বের হওয়া ‘জীবনানন্দ’, ‘আধুনিক বাংলা গান-১’, ‘স্বপনে’ ও ‘ওস্তাদ নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরী’ অ্যালবামগুলো সেটারই সাক্ষী দেয়। এসব অ্যালবামের বেশ কিছু গান হয় শ্রোতাপ্রিয়ও।
আরও দেখুনঃ