Site icon সঙ্গীত গুরুকুল, GOLN

প্রণব রায় | গীতিকার [ ৫ ডিসেম্বর, ১৯১১ – ৭ আগস্ট, ১৯৭৫ ]

প্রণব রায় প্রণব রায় | গীতিকার [ ৫ ডিসেম্বর, ১৯১১ - ৭ আগস্ট, ১৯৭৫ ]

প্রণব রায় [ ইংরেজি: Pranab Roy ] বাংলা গানের স্বর্ণযুগের প্রখ্যাত কবি ও গীতিকার। বিশ শতকের মধ্যে তিনের ও চারের দশকে, আধুনিক ও চিত্রগীতির সবচেয়ে জনপ্রিয় ও প্রবাদ প্রতিম, ‘থ্রি মাস্কেটিয়ার্স’- গীতিকার এর (অজয় ভট্টাচার্য, শৈলেন রায় ও প্রণব রায়) অন্যতম ছিলেন তিনি। প্রণব রায়ের জন্ম ১৯১১ সালের ৫ ডিসেম্বর, প্রখ্যাত সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবারে। সাবর্ণ পরিবারের সুসন্তান প্রণব রায়ের রচিত প্রায় সাড়ে তিন হাজার গান রয়েছে যা বাংলা আধুনিক গানের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে।

 

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন:

প্রণব রায়ের জন্ম বৃটিশ ভারতের কলকাতার বেহালা বড়িশার সাবর্ণ রায়চৌধুরীর বংশে। পিতা ছিলেন দেবকুমার রায়চৌধুরী। ব্রাহ্ম বয়েজ স্কুল থেকে কৃতিত্বের সাথে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সিটি কলেজে ভর্তি হন। ছাত্রাবস্থা থেকেই তিনি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাবশিষ্য ছিলেন এবং তার রচনার প্রতি আকর্ষণ ছিল। এমনিতেই ছোটবেলা থেকে প্রণবের কবিতার প্রতি ভালোবাসা ছিল। কলেজ জীবনে স্বদেশী আন্দোলনে অংশ নেন। ‘বিশ্বদূত’ পত্রিকায় তিনি প্রথম ‘কমরেড’ শীর্ষক এক কবিতা লেখেন এবং সেজন্য তাঁকে কারাবাস করতে হয়। পড়াশোনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

 

কর্মজীবন:

জেল থেকে বেরিয়ে গান লিখতে আরম্ভ করেন। ইতিমধ্যে তিনি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সংস্পর্শে আসেন। গীতিকার হওয়ার প্রেরণা পেয়েছিলেন কবির কাছ থেকে। তার রচিত চারটি গান কাজী নজরুল ইসলামের অনুমোদনে ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে শারদীয়ায় হিজ মাস্টার্স ভয়েস রেকর্ডে প্রথম প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে কমলা ঝরিয়ার কণ্ঠে তুলসীদাস লাহিড়ীর সুরে দু-টি ভাটিয়ালি গান – ‘ও বিদেশী বন্ধু’ এবং ‘যেথায় গেলে গাঙের চরে’ অসাধারণ জনপ্রিয়তা লাভ করে। তার রচিত ‘সাঁঝের তারকা আমি পথ হারায়ে’ ও ‘ আমি ভোরের যূথিকা’ গান দুটি যূথিকা রায়ের কণ্ঠে সমান জনপ্রিয়তা পায়।

এতে যূথিকা রায় যেমন জনপ্রিয় শিল্পী হিসাবে পরিচিতি পান, তেমনি গীতিকার হিসাবে প্রণব রায়ও খ্যাতি অর্জন করেন। সহজ কথায় হালকা ছন্দে যে-কোন ভাব বা অনুভূতিকে প্রকাশ করার তার বিশেষ ক্ষমতা ছিল। দীর্ঘ চল্লিশ বছরে তিনি দু-হাজারেরও বেশি গান লিখেছেন। বাংলা আধুনিক গানের সাথে ছায়াছবির জন্যও গান লিখেছেন। ছবির পরিবেশের সাথে সাযুজ্য রেখে কাব্যগুণসমন্বিত গান রচনা করতেন।

১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে ‘পণ্ডিত মশাই’ ছায়াছবিতে প্রথম গান রচনা করেন এবং এটি কমল দাশগুপ্তের সুরে ভবানী দাস কণ্ঠ দিয়েছেন। এর সাথে তিনি যে গল্পগীতি গুলি রচনা করেছেন সেগুলির প্রতি ছন্দে জীবনের সূক্ষ্ম অনুভূতি ধরা পড়ে। জগন্ময় মিত্রের কণ্ঠে তার লেখা ‘চিঠি’ ও ‘সাতটি বছর আগে পরে’ ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। তার রচিত গানের কয়েকটি উল্লেখকরা হল।

 

প্রণব রায় এর গান

আধুনিক বাংলা গান:

ছায়াছবিতে ব্যবহৃত গান :

প্রণব রায় শুধু গীতিকারই ছিলেন না। বহুমুখী প্রতিভার মানুষ ছিলেন তিনি। চিত্রনাট্যকার, কাহিনিকার হিসাবে কয়েকটি কথাচিত্রের কাহিনী, সংলাপ ও চিত্রনাট্য রচনা করেছেন। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় ও জহর রায় অভিনীত বিখ্যাত কমেডি ‘ভানু গোয়েন্দা জহর অ্যাসিস্টেন্ট’ এর কাহিনী প্রণব রায় রচনা করেন। আবার পরিচালক হিসাবে তার প্রথম ছবি ‘রাঙামাটি’১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়। তার রচিত কিছু গোয়েন্দা কাহিনিও আছে। গীতিকার, চিত্রনাট্যকার, কাহিনিকার প্রণব রায়ের সাংবাদিক হিসাবেও আরেকটা পরিচয় ছিল। ‘বসুমতী’ পত্রিকায় প্রায় এক বছর বার্তা সম্পাদক হিসাবে কাজ করেছেন। ব্রিটিশবিরোধী পত্রিকা ‘নাগরিক’-এর সম্পাদনাও করতেন তিনি।

 

জীবনাবসান:

বাংলা সংস্কৃতি জগতের প্রতিভাধর গীতিকার প্রণব রায় ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ৭ ই আগস্ট কলকাতায় প্রয়াত হন।

Exit mobile version