Site icon সঙ্গীত গুরুকুল, GOLN

প্রবেশিকা সংগীত শিক্ষা পদ্ধতি – ওস্তাদ মুনশী রইসউদ্দিন

প্রবেশিকা সংগীত শিক্ষা পদ্ধতি, ১ম সংস্করণ, গ্রন্থকারের বক্তব্য – ওস্তাদ মুনশী রইসউদ্দিন: সংগীত শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে ওস্তাদ মুনশী রইসউদ্দিন একটি মূল্যবান বই লিখেছেন। ওস্তাদ মুনশী রইসউদ্দিন এর রচিত বইটির নাম “প্রবেশিকা সংগীত শিক্ষা পদ্ধতি”। সঙ্গীত শিক্ষার সাথে সঙ্গীতের ইতিহাস নিয়ে তিনি বিস্তর আলোচনা করেছেন। সঙ্গীত বিষয়ক শিক্ষার্থীদের এসব তথ্য সহায়তা করবে ভেবে আমরা সেই পুস্তক থেকে কিছু অধ্যায় আর্টিকেল আকারে পাঠকদের জন্য যুক্ত করে দিলাম। আশা করি আপনাদের সঙ্গীত বিষয়ক শিক্ষায় সহায়ক হবে।

প্রবেশিকা সংগীত শিক্ষা পদ্ধতি – ওস্তাদ মুনশী রইসউদ্দিন :

জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সমগ্র কলাবিদগণ এমনকি ধনী, গরিব ও জ্ঞানীগণ পুঁথিগত চৌষট্টি প্রকার কলাবিদ্যার মধ্যে সঙ্গীতকেই শীর্ষস্থানীয় বলে স্বীকার করেন।

পাশ্চাত্যের বিখ্যাত রসজ্ঞ মিঃ পিটার সঙ্গীতকলাকে সকল কলার আদর্শ স্থানীয় বলেছেন। উপমহাদেশীয় কলা-বিচার প্রসঙ্গেও এরূপ উক্তি করে বিশেষজ্ঞগণ বলেছেন— “ন-বিদ্যা সঙ্গীতাৎপরাঃ।”

প্রবেশিকা সংগীত শিক্ষা পদ্ধতি – ওস্তাদ মুনশী রইসউদ্দিন

প্রাচীন যুগের মার্কেণ্ডেয়ও কোনো এক ক্ষেত্রে বলেছেন— “নৃত্যের বিধি না জানলে চিত্রকলা জানা যায় না—আবার সঙ্গীতকলা না জানলেও নৃত্যকলা সম্বন্ধে জ্ঞান হয় না। কাজেই দেখা যায় যে, সঙ্গীতকলা জানা সকল কলা সম্বন্ধে পরিচয়ের প্রধান সহায়।

বিদ্যা বা ভাষাশিক্ষা যেমন মানবের বুদ্ধিবৃদ্ধি-বিকাশের চরম উপাদান, তেমনি মনের প্রবাহ আনন্দময় করে তুলবার পক্ষে সঙ্গীতানুশীলনও মানবের প্রধানতম উপাদান। এজন্য সঙ্গীতশিক্ষা মানব-জীবনের কয়েকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় বিষয়ের অন্যতম হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষা যেমন মানুষের একান্ত প্রয়োজন, তেমনি সঙ্গীতশিক্ষার প্রয়োজনীয়তারও মূল্য কম নয়।

এ হলো আদর্শের দিক থেকে। এই আদর্শ ছাড়াও, বিশেষত আমাদের দেশে সঙ্গীতশিক্ষার অন্তত যথাসাধ্য অনুশীলনেরও যথেষ্ট উপযোগিতা রয়েছে। এটা যুগধর্মেরই নীতি।

বর্তমান যুগে এই দেশে সঙ্গীতানুশীলনের একটি নবীনতম চেতনা এসেছে। অবশ্য আশানুরূপ না হলেও এরূপ চেতনা বা জাগরণ যে উপমহাদেশীয় সংস্কার ও শ্রেষ্ঠ কলাবিদ্যার সংরক্ষণ ও ক্রমবিকাশের অনুকূল সে বিষয়ে সন্দেহের কারণ থাকতে পারে না।

এরূপ ক্ষেত্রে পূর্ব-পাকিস্তান সেকেন্ডারি এডুকেশন বোর্ড (১৯৫৩ সালে) প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রাথমিকভাবে কণ্ঠ-সঙ্গীতে পরীক্ষা দেবার আইন প্রবর্তন করে যুযোপযোগী ব্যবস্থা অবলম্বন করেছেন। শিক্ষার্থীরা যাতে শিক্ষায় অধিকতর উৎসাহী হয় এবং নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে তার তালিম নেয়ার অবকাশ পায়, তাই এই ব্যবস্থার উদ্দেশ্য।

কিন্তু বিশুদ্ধ ও প্রণালীবদ্ধ সঙ্গীত ধারাবাহিক এবং নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে শিক্ষা করার মতো উপযোগী কোনো পাঠ্যপুস্তক আদৌ এদেশে না থাকায় সঙ্গীতশিক্ষার মান (Standard) খুবই হীনতর হতে চলেছে। বিগত ১৯৫৬ সালে সংবাদপত্রে মাধ্যমিক মিউজিক সিলেবাস অনুযায়ী বাংলা ভাষায় উচ্চাঙ্গ (Classical music) সঙ্গীতের (Vocal) একখানা পাঠ্যপুস্তক (Text Book) লিখে অনুমোদনার্থে দাখিল করতে নোটিশ জারি করায় বিগত ১৯৫৭ সালের ৬ই মে তারিখ ৬৯৯ পৃষ্ঠার একখানা পাণ্ডুলিপি (Manuscript) লিখে বোর্ডে সাবমিট করা হয়।

পরে বোর্ড কর্তৃপক্ষের মনোনীত অভিজ্ঞ রিভিউয়ারগণের পরামর্শ অনুযায়ী সংশোধন করে এই বইখানা প্রকাশিত হলো।

আমি সাহিত্যিক নই এবং সঙ্গীতবিদও নই। সঙ্গীতে জ্ঞান আমার গভীর নয়। সঙ্গীত অনন্ত মহাসমুদ্রবিশেষ। সারা জীবন সাধনা করে তার বিন্দুমাত্রের যথার্থ স্বাদও কম লোকের ভাগ্যেই কদাচিৎ মেলে বলে আমার ধারণা। কাজেই এই পুস্তকের যাবতীয় বিষয়ই যে সঠিক হবে তা আমি সাহস করে কখনও বলতে সাহস করিনি।

তবে বাল্যকাল হতে বিভিন্ন ওস্তাদ ও সঙ্গীতবিদগণের কৃপায় ও শিক্ষাদানে সঙ্গীত সম্বন্ধে যতটুকু জ্ঞানার্জন করতে সক্ষম হয়েছি এবং দীর্ঘদিনের সঙ্গীতচর্চা ও শিক্ষালব্ধ কিঞ্চিৎ অভিজ্ঞতায় এই গ্রন্থখানা লিখে আমার দেশের সঙ্গীতানুরাগী ভাই-বোন ও সঙ্গীত শিক্ষার্থীদের হাতে সাদর উপহার প্রদান করতে সাহসী হয়েছি মাত্র।

সঙ্গীত অতি প্রাচীনকাল থেকেই জনসমাজে প্রচলিত হয়ে আসছে। জনরুচির সঙ্গে সঙ্গে যুগে যুগে বিভিন্ন পরিবর্তন ও প্রবর্তনের মাধ্যমে সঙ্গীত তার স্বরূপ প্রকাশ করে আসছে। ফলে, উপমহাদেশীয় সঙ্গীতে বহু মতবাদের সৃষ্টি হয়েছে। ধারাবাহিক ও প্রণালীবদ্ধ শিক্ষাধারারও যথেষ্ট পরিণতি ঘটেছে।

এতদৃষ্টে বিগত ১৯১৬, ১৯১৮ ও ১৯২৩ সালে (ইতিহাস দ্রষ্টব্য) সর্বভারতীয় গুণী, পণ্ডিত ও সঙ্গীতবিদগণ সমবেতভাবে সঙ্গীতসম্বন্ধীয় বিভিন্ন মতবাদের সমাধানার্থে সমালোচনায় প্রবৃত্ত হন এবং উপমহাদেশীয় ঔপপত্তিক ও ক্রিয়াত্মক (Theoretical & Practical) সঙ্গীতের শিক্ষাধারার মোটামুটি একটা কাঠামো (Standard and Fixation) প্রণয়ন করেন।

তাঁদের প্রবর্তিত শিক্ষাধারা বা সিদ্ধান্ত অনুসারেই পরবর্তীকালে উপমহাদেশের সমগ্র উত্তরাঞ্চলে বিশেষ করে বিদ্যালয়ে (Academically) শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। সঙ্গীত শিক্ষাধারার এই স্ট্যান্ডার্ড অনুসারেই এ গ্রন্থের যাবতীয় বিষয় এবং রাগসঙ্গীতের ভাব-বৈশিষ্ট্য ও সাধনভঙ্গিকে (Style of demonstration) বজায় রেখেই গ্রন্থখানা লিখেছি বলে মনে করতে পারি। মোটামুটি চারটি অধ্যায়ে গ্রন্থখানি শেষ হয়েছে। তন্মধ্যে

ক. প্রথম অধ্যায় : প্রবেশিকা সংগীত শিক্ষা পদ্ধতি

এ ঐতিহাসিক হেডিং-এর উপমহাদেশীয় সঙ্গীতের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও ক্রমবিকাশকালকে মোটামুটি প্রাচীন যুগ, মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগ’ এই তিনটি যুগে বিভক্ত করেছি। দার্শনিকতার প্রাচুর্য অধিক হেতু বই (Volume) বৃদ্ধির ভয়ে ও প্রাথমিক শিক্ষার পরিপন্থী বলে প্রাচীনযুগীয় ‘হিন্দু-সঙ্গীত’-এর ঐতিহাসিক আলোচনায় বিরত থাকতে বাধ্য হয়েছি। মধ্য ও আধুনিক যুগের সঙ্গীত ইতিহাস ও ক্রমবিকাশ সম্বন্ধেই সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেছি।

এই অধ্যায়ের শেষাংশে জীবনচরিত বিভাগে মডার্ন কম্পোজার হিসেবে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কবি নজরুল ইসলাম, কবি অতুলপ্রসাদ সেন, কবি জসীম উদ্দীন ও কবি গোলাম মোস্তফা প্রমুখ গুণীবৃন্দের বিভিন্ন প্রতিভার আলোচনা অফুরন্ত হলেও স্থানাভাবে এ অবস্থানুসারে অতি সংক্ষেপেই আলোচিত হলো।

খ. দ্বিতীয় অধ্যায় : প্রবেশিকা সংগীত শিক্ষা পদ্ধতি

এ সিলেবাসে বর্ণিত ঔপপত্তিক (Theoretical) বিষয়গুলো সহজ-সরল ব্যাখ্যা দ্বারা বুঝাবার চেষ্টা করা হয়েছে।

গ. তৃতীয় অধ্যায় : প্রবেশিকা সংগীত শিক্ষা পদ্ধতি

এ সিলেবাসে বর্ণিত ‘ইমন, বাগেশ্রী, জেনীপুরী, বিহাগ, বৃন্দবনী সারং, ভৈরো, কেদারা ও দেশ’ এই আটটি রাগসহ ‘খাম্বাজ, কাফি ও ভৈরবী’ রাগ তিনটির একাধিক খেয়াল গানের স্থায়ী অন্তরা ত্রিতাল, একতাল ও ঝাপতালে স্থায়ীর আলাপ, অন্তরার আলাপ (স্বর-বিস্তার) ও বিভিন্ন ছন্দের (ক্রমবিকাশ হিসেবে) তান-পালূটা, বোলতান, দুনর্বাট-তিহাইযুক্ত লয়ের কাজসহ খেয়াল ও গায়কী এবং ‘খাম্বাজ, দেশ, ঝিঁঝিট, তিলক-কামোদ, পুিল ও ভৈরবী’ রাগগুলির কয়েকটি ঠুগ্মী গান ও ঠুমরী-গায়কী সন্নিবেশিত করা হলো।

প্রতিটি রাগের মোটামুটি শাস্ত্রীয় (Grammear) পরিচয়, বিশুদ্ধ আরোহাবরোহী পক্যড় বা মুখ্যাঙ্গ ও সপাট-তান ছাড়াও প্রণালীবদ্ধ ধারাবাহিক রাগশিক্ষার অনুকূল হিসেবে প্রতিটি রাগের সার্গাম-গীত (স্বর মালিকা) ও লক্ষণ-গীতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তৎসহ কোনো কোনো রাগে চৌতাল-ধ্রুপদ এবং চতুরঙ্গ ও তারানা (তেলেনা) গানের স্বরলিপি দেওয়া হয়েছে। এই অধ্যায়ের শেষভাগে সিলেবাস অনুযায়ী কয়েকটি ‘নজরুল-সঙ্গীত ও রবীন্দ্র সঙ্গীত’-এর স্বরলিপির উদ্ধৃতি দেওয়া হলো।

ঘ. চতুর্থ অধ্যায় : প্রবেশিকা সংগীত শিক্ষা পদ্ধতি

অর্থাৎ গ্রন্থের পরিশিষ্টাংশে শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক রাগ সঙ্গীত শিক্ষার প্রয়োজন হেতু সিলেবাস-বহির্ভূত ‘বিলাবল, আসাবরী, মারবা, পূরবী এবং টোড়ি বা তোড়ি’ এই পাঁচটি ঠাটের ব্যাখ্যা ও আশ্রয়-রাগগুলির সংক্ষিপ্ত শাস্ত্রীয় পরিচয়সহ বিশুদ্ধ আরোহাবরোহী পক্যড়, সপাট-তান, একটি করে সার্গাম গীত (স্বর-মালিকা) এবং লক্ষণ-গীত সংযোজিত করা হয়েছে। অতঃপর যুগোপযোগী রাষ্ট্রীয় (National Anthem) সঙ্গীতটি এতদ্দেশীয় স্কুল-কলেজ ও সকল প্রকার সভা-সমিতি-মহফিলাদিতে স্রোত ও উদ্বোধনী (Prayer song and Opening Song) সঙ্গীত হিসেবে পরিগণিত হওয়ায় তার স্বরলিপি দেয়া হলো।

এ ছাড়া সঙ্গীতশিক্ষায় শিক্ষার্থীগণের নিতান্ত প্রয়োজনীয় কয়েকটি পারিভাষিক শব্দের ব্যাখ্যা সরল ও সহজভাবে বোঝাবার চেষ্টা করেছি। অতঃপর শিক্ষার্থীদের জ্ঞাতার্থে ও জ্ঞানলাভের জন্য খেয়াল ও ঠুমরি গাইবার পদ্ধতি, কণ্ঠে ‘সা’ নির্ধারণ, প্রয়োজনীয় যন্ত্রাদির সাজ করা বা সুর মিলানো বা বাধনপ্রণালী, শিক্ষার্থীগণের প্রতি উপদেশবাক্য ও কয়েকটি আদর্শ প্রশ্ন এবং মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড প্রণীত সিলেবাসের True-copy সংযোজন করা হয়েছে।

বিদ্যাশিক্ষা ও অনুশীলন করা, বিদ্যার উচ্চ আদর্শ ও মর্যাদা রক্ষা করা প্রভৃতি সঙ্গীতবিদ্যার বিভিন্ন আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে চর্চা ও সাধনালব্ধ জ্ঞান, সঙ্গীত ও জ্ঞানপিপাসুদর মধ্যে অকাতরে বিতরণ করার নীতি ও আদর্শকে অনুসরণ করেই নির্দিষ্ট প্রণালীতে সঙ্গীতশিক্ষা গ্রহণ করার উপযোগী পাঠ্যপুস্তক (Text Book) হিসেবে প্রবেশিকা সঙ্গীত শিক্ষা পদ্ধতি নামে এই ক্ষুদ্র গ্রন্থখানি লেখা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যাতে করে সহজেই এই গ্রন্থের সাহায্যে তাদের প্রয়োজনমতো শিক্ষা লাভ করতে পারে এবং সফলকাম হতে পারে, সেদিকে সাবধানতার সাথে দৃষ্টি রেখে যুগোপযোগী হিন্দুস্থানী পদ্ধতি মোতাবেক লিখিত হলো।

মহান আল্লাহ্তায়ালার দেওয়া হিম্মৎ ও হিকমত এবং পীর-আউলিয়ার দোয়ার বরকতে আজ এই গ্রন্থখানি লিখতে সক্ষম হয়েছি, সর্বাগ্রে তাঁর ও তাঁদের প্রতি সভক্তি-বিশ্বাস রেখে শিক্ষাদাতা দগণকে কদমবুচি ও শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করি। পরে আমার লেখা পাণ্ডুলিপি (কার্বন কপি) নকল করতে যাদের অকৃত্রিম পরিশ্রম, সাহায্য ও আন্তরিক সহানুভূতি পেয়েছি এবং যাদের লেখা ও সমালোচনা থেকে কিছুও সংগ্রহ বা উদ্ধৃতি দিতে বাধ্য হয়েছি, তাঁদেরকেও আমার অন্তরের কৃতজ্ঞতা জানাই ।

সর্বশেষে পূর্ব পাকিস্তান (ঢাকা) আর্টিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য যে, এই বইখানা প্রকাশনার জন্য তাঁদের নিকট হতে কাগজ ক্রয়ের সাহায্য বাবদ এককালীন ৫০০/= (পাঁচশত টাকা) সাহায্য পাওয়ায় কৃতার্থ হয়েছি এবং তাঁদেরকে জানাই আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা। পাইওনিয়ার প্রেসের স্বত্বাধিকারী আমার বন্ধুবর জনাব মোহাম্মদ আবদুল মোহায়মেন সাহেব আমাকে সর্বপ্রথম ১৬ রিম কাগজ দিয়ে বই ছাপার কাজ শুরু করার ব্যবস্থা করে দেন। তাই তিনিও আমার চিরস্মরণীয়।

মুদ্রণ-ত্রুটি সম্বন্ধে দু’এক কথা

ছাপাখানার ভূতের দৌরাত্ম্যের কথা আমার পূর্ববর্তী গ্রন্থকার ও লেখকদের সমালোচনায় সকলে জ্ঞাত থাকবেন। ইহা ছাড়াও এই ধরনের স্বরলিপি-তে বহু প্রকার হরফ ও সাংকেতিক চিহ্নাদির প্রয়োজন, যা স্থানীয় Type Foundry-তে আদৌ পাওয়া না যাওয়ায় বিশেষ করে প্রথম সংস্করণে এ ধরনের ভুলত্রুটি এড়ানো দায়।

পূর্বেই বলেছি—আমি ‘ভাষাবিদ’ নই। তাই ভাষার ত্রুটি থাকবেই। সঙ্গীতেও আমি ‘সবজান্তা’ নই। তাই সহৃদয় পাঠক-পাঠিকাগণের প্রতি আমার একান্ত অনুরোধ, যে কোনো ভুলত্রুটি নিজ গুণে ও জ্ঞানে সংশোধন করে নেবেন। অস্পষ্ট ও দুর্বোধ্য বিষয়াবলীর সমাধানার্থে প্রয়োজনবোধে যোগাযোগ করলে এবং পরবর্তী সংস্করণে গ্রন্থখানার নিখুঁত ও সর্বাঙ্গীণ সৌন্দর্যবিষয়ক উপদেশবাণী প্রদান করলে তা সাদরে গ্রুণ করবো ও আনন্দিত হবো।

পরিশেষে এই বলেই আমার বক্তব্য শেষ করছি যে, এই ক্ষুদ্র গ্রন্থখানি যদি জনসমাজে কিঞ্চিও আদর লাভ করে ও সঙ্গীতপিপাসুদের উপকারে আসে এবং দেশের স্কুল ও সঙ্গীত বিদ্যালয়ের শ্রদ্ধেয় অধ্যাপকবৃন্দ নিজ নিজ স্কুলে পাঠ্য করে এই গ্রন্থকার ও শিক্ষককে বাধিত করেন, তবেই শ্রম সফল হয়েছে মনে করবো।

খোদা হাফেজ।

খেদমঙ্গার

মুনশী রইসউদ্দীন

গ্রন্থকার,  ১.১২.১৯৫৮ ইং

মিউজিক টিচার্স ট্রেনিং সেন্টার, ১৩৬/২, হাজী ওসমান গনি রোড, আলুবাজার ঢাকা ১০০০

 

প্রবেশিকা সংগীত শিক্ষা পদ্ধতি, ২য় সংস্করণ প্রসঙ্গে – এ. এফ. এম. আলিমউজ্জামান :

প্রবেশিকা সংগীত শিক্ষা পদ্ধতি, ২য় সংস্করণ প্রসঙ্গে – এ. এফ. এম. আলিমউজ্জামান

সংগীত শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে ওস্তাদ মুনশী রইসউদ্দিন একটি মূল্যবান বই লিখেছেন। ওস্তাদ মুনশী রইসউদ্দিন এর রচিত বইটির নাম “প্রবেশিকা সংগীত শিক্ষা পদ্ধতি”। সঙ্গীত শিক্ষার সাথে সঙ্গীতের ইতিহাস নিয়ে তিনি বিস্তর আলোচনা করেছেন।

সঙ্গীত বিষয়ক শিক্ষার্থীদের এসব তথ্য সহায়তা করবে ভেবে আমরা সেই পুস্তক থেকে কিছু অধ্যায় আর্টিকেল আকারে পাঠকদের জন্য যুক্ত করে দিলাম। আশা করি আপনাদের সঙ্গীত বিষয়ক শিক্ষায় সহায়ক হবে।

প্রবেশিকা সংগীত শিক্ষা পদ্ধতি : দ্বিতীয় সংস্করণ প্রসঙ্গে :

একথা না বললে ঠিক হবে না যে আমার আব্বার লেখা প্রবেশিকা সঙ্গীত শিক্ষা পদ্ধতি এতদ্দেশের সমাদৃত উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের প্রথম সঙ্গীতগ্রন্থ। এর চাহিদা শুধু বাংলাদেশেই নয় ভারতেও। প্রচুর অনুরোধপত্র এসেছে আমার কাছে গ্রন্থটি পুনঃমুদ্রণের জন্য। তবুও নানা কারণে বহুবিলম্বিত হলেও এর দ্বিতীয় সংস্করণ বের করতে পেরে, সঙ্গীতানুরাগীদের হাতে তুলে দিতে পেরে নিজেকে যারপরনাই ধন্য মনে করছি।

আপনারা জানেন ১১ এপ্রিল ১৯৭৩ ইং সালে আব্বা ইন্তেকাল করেছেন। তাঁর জীবিতকালে দ্বিতীয় সংস্করণটি প্রকাশিত হয়ে যেত। কিন্তু তাঁর দীর্ঘকাল স্থায়ী অসুখের জন্য সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

প্রথম অধ্যায় : প্রবেশিকা সংগীত শিক্ষা পদ্ধতি – ওস্তাদ মুনশী রইসউদ্দিন :

উল্লেখ্য যে, প্রবেশিকা সংগীত শিক্ষা পদ্ধতি গ্রন্থটির এই সংশোধিত ও পরিবর্ধিত সংস্করণে শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে বিভিন্ন প্রসঙ্গে আলোকপাত করা হয়েছে। যেন প্রথম অধ্যায়ে উপমহাদেশীয় সঙ্গীতের ধারাবাহিক ইতিহাস ও ক্রমবিকাশ হতে তৎকালীন গুণী সঙ্গীতজ্ঞদের জীবনী ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

দ্বিতীয় অধ্যায় : প্রবেশিকা সংগীত শিক্ষা পদ্ধতি – ওস্তাদ মুনশী রইসউদ্দিন :

দ্বিতীয় অধ্যায়ে বর্ণিত ঔপপত্তিক বিভাগে প্রায় ১১৫টি পারিভাষিক শব্দ বিবরণীর উদাহরণ, ১৬টি তালের বিশদ বিবরণী, স্বরলিপি প্রকরণ, শিক্ষার্থীদের কণ্ঠে ‘সা’ নির্ধারণ, যন্ত্র মিলোনো পদ্ধতি বিষয়গুলি সরল ব্যাখ্যা দ্বারা বোঝানো হয়েছে।

তৃতীয় অধ্যায় : প্রবেশিকা সংগীত শিক্ষা পদ্ধতি – ওস্তাদ মুনশী রইসউদ্দিন :

তৃতীয় অধ্যায়ে ‘ইমন, বিহাগ, বাগেশ্রী, জৌনপুরী, বৃন্দাবনী সারং, কেদারা, দেশ, ভৈরো, ভীমপলশ্রী, মালকৌষ, জয়জয়ন্তী, কাফি এই ১২টি রাগসহ খাম্বাজ, দেশ, ভৈরবী, তিলক-কামোদ, পুিল, ঝিঁঝিট রাগগুলির গায়কীসহ ঠুমরী এবং পূর্বোল্লিখিত প্রত্যেকটি রাগেই নতুন নতুন প্রচলিত, অপ্রচলিত খেয়াল বন্দেশসহ গ্রন্থে উল্লেখিত প্রত্যেকটি রাগের শাস্ত্রীয় পরিচয় ছাড়াও প্রণালীবদ্ধ ধারাবাহিক রাগ শেখার জন্য প্রতিটি রাগের নতুন নতুন প্রচলিত, অপ্রচলিত খেয়াল বন্দেশসহ বিভিন্ন ধরনের আলাপ বিস্তার তারানা, তানর্বাট, বোলতান, কয়েকটি রাগে বাংলা বন্দেশসহ উল্লেখিত প্রত্যেকটি রাগের শাস্ত্রীয় পরিচয় ছাড়াও প্রণালীবদ্ধ ধারাবাহিক রাগ শেখার জন্য প্রতিটি রাগের সার্গাম-গীত (স্বর মালিকা), লক্ষণ-গীত এবং কোনো কোনো রাগে চৌতাল, ধ্রুপদ ও চতুরঙ্গ সন্নিবেশ করা হয়েছে।

চতুর্থ অধ্যায় : প্রবেশিকা সংগীত শিক্ষা পদ্ধতি – ওস্তাদ মুনশী রইসউদ্দিন :

চতুর্থ অধ্যায়ের পরিশিষ্ট বিভাগে শিক্ষার্থীদের উপকারার্থে সিলেবাস-বহির্ভূত বিলাবল, আসাবরী, মারবা, পূরবী ও টোড়ি এই পাঁচটি ঠাট-রাগের শাস্ত্রীয় বিবরণসহ সার্গাম-গীত, লক্ষণ-গীত ও নতুন করে খেয়াল সংযোজন করা হয়েছে। জাতীয় সঙ্গীত, শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু জ্ঞাতব্য বাক্য, গায়ক-দোষ ও গুণ, সিলেবাস অনুযায়ী ৬০টি প্রশ্ন, উপমহাদেশীয় ৮ জন বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও সঙ্গীতজ্ঞের জীবনী এবং সর্বশেষে গ্রন্থকার-পরিচিতি ও বর্তমান সিলেবাস উল্লেখ করা হয়েছে।

আর দু-একটা ভুল-ভ্রান্তি থাকলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে সংশোধন করে নিতে অনুরোধ রইল এবং এ ব্যাপারে আমাকে সময়মতো জানালে পরবর্তী সংস্করণে সংশোধন করা হবে।

প্রসঙ্গত অগণিত শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ তাগিদ ও দেশের সঙ্গীত বিদ্যায়তনের শিক্ষকবৃন্দের উৎসাহে অনেক অনেক শ্রম, ত্যাগ ও কষ্টকর প্রচেষ্টার ফলশ্রুতি হিসেবে প্রবেশিকা শিক্ষা পদ্ধতি ২৫ বছর পর দ্বিতীয় সংস্করণের মুখ দেখলো, এ ছাড়া এই সংস্করণ প্রকাশ না করে উপায় ছিল না। তাঁদের পুনঃ পুনঃ আন্তরিকতাপূর্ণ তাগিদ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে বর্তমান প্রকাশনায়। গ্রন্থটি পুনঃপ্রকাশের ব্যাপারে সর্বাগ্রে স্মরণ করছি মরহুম আব্বার অনুমতি ও পরম শ্রদ্ধেয়া আগার নির্দেশ, পরামর্শ ও উৎসাহ, অনুপ্রেরণা।

বর্তমানে এই প্রবেশিকা সংগীত শিক্ষা পদ্ধতি গ্রন্থপ্রকাশের ব্যয়ভার কিভাবে সম্পন্ন হয়েছে তা না বলাই শ্রেয়। তবু বাংলাদেশে যখন প্রকাশনা সঙ্কট চলছে তখন এই ব্যয়বহুল ছাপানোর কাজ শুরু করে শেষ করতে গিয়ে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি আমি। একদিকে যেমন মুদ্রণ-খরচ বেড়েছে উচ্চহারে, তেমনি কাগজের দামও বেড়েছে কয়েকগুণ। তাই এই প্রকাশনার ব্যাপারে আমি বিশেষভাবে স্মরণ করছি আমার স্নেহাস্পদ অনুজ এ. এফ. এম. আসাদুজ্জামান ও মামা জনাব আবদুল মালীককে, তাদের বিজ্ঞ পরামর্শ, আন্তরিক আগ্রহ ও প্রত্যক্ষ সহযোগিতার জন্য।

স্মরণ করছি লোকসঙ্গীত জগতের পুরোধা ব্যক্তিত্ব, গীতিকার, সুরকার ও শিল্পী শ্রদ্ধেয় জনাব আব্দুল লতিফ ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী থেকে আমার আব্বার জীবনীকার, আব্বার অফুরান স্নেহধন্য অন্যতম ছাত্র ও আমার অগ্রজপ্রতিম, গীতিকার ও সুরকার সৈয়দ শামসুল হুদাকে যিনি আব্বা রচিত কয়েকটি খেয়াল বন্দেশ বাংলায় রূপান্তর করেছেন। এদেশের বিশিষ্ট উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদ ফুল মোহাম্মদ ও নজরুলগীতি বিশেষজ্ঞ শ্রীসুধীন দাশের কাছে উপদেশ, পরমার্শ ও সহযোগিতা পেয়েছি অন্তহীন।

আব্বার স্নেহের ছাত্র জনাব ওমর ফারুকের বেশ কয়েকটি বিজ্ঞোচিত উপদেশ, পরামর্শ ও সহযোগিতা আমার গ্রন্থের মান ও সৌন্দর্যবৃদ্ধিতে সাহায্য করেছে। আব্বার সবচেয়ে অভিজ্ঞ ছাত্র শ্রীগোপালচন্দ্র দাশ ও আরেকজন ছাত্র শ্রীপ্রভাতচন্দ্র ধরের উপদেশ ও পরামর্শ আমাকে করেছে ধন্য।

প্রবেশিকা সংগীত শিক্ষা পদ্ধতি গ্রন্থটির সঠিক মুদ্রণ এবং সার্বিক ও সুষ্ঠু তত্ত্বাবধানের জন্য দি ক্রাউন প্রেসের স্বত্বাধিকারী জনাব এমডি. এম. খান, ফারুক খান ও ফিরোজ খান এবং এক্ষেত্রে আরেকজনকে বিশেষভাবে স্মরণ করছি—তিনি হচ্ছেন উক্ত প্রেসের সবচেয়ে অভিজ্ঞ কম্পোজিটর জনাব মোঃ মোসলেম আলী (পুটু ভাই), তাঁর প্রত্যক্ষ ও প্রাণান্তকর সহযোগিতা ছাড়া এ গ্রন্থ কোনোরকমেই সুষ্ঠুভাবে প্রকাশ পাওয়া নিতান্ত দুরূহ ব্যাপার ছিল।

ঢাকার বিশিষ্ট বাদ্যযন্ত্রের দোকান বুদ্ধ এন্ড কোং ও সুর নিকেতনও ধন্যবাদাহ্।

সবশেষে যার কথা না বললেই চলে না, তিনি হলেন আব্বার আরেক স্নেহধন্য ছাত্র বুলবুল একাডেমীর শিক্ষক জনাব মুহাম্মদ আবদুল মুত্তালিব বিশ্বাস (বাদল ভাই), যিনি আমাদের সঙ্গীতসমাজে একজন গঠনমূলক সঙ্গীত সমালোচক ও বোদ্ধা হিসেবে পরিচিত। বিভিন্ন আঙ্গিকে তাঁর বিভিন্ন প্রকার আন্তরিক সহযোগিতা, উপদেশ, পরামর্শ ছাড়া এ গ্রন্থের মানোন্নয়ন ও সৃজনশীলতা রক্ষায় দারুণভাবে বিঘ্ন ঘটত। সময় নেই, অসময় নেই যে সময় যে অবস্থাতেই তাঁর কাছে গেছি, সেই মুহূর্তেই তাঁর আদরআপ্লুত প্রসারিত হাত আমার দিকে এগিয়ে এসেছে।

এ গ্রন্থে উল্লেখকৃত সঙ্গীতের কিছু কিছু জটিল (Technical) বিষয়ে তাঁর পরামর্শ ও সহযোগিতা আমাকে এ গ্রন্থের পরিপূর্ণতা এনে দিতে সর্বতোভাবে সাহায্য করেছে। উল্লেখিত শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ববৃন্দের কাছে রইল আমার

আন্তরিক সশ্রদ্ধ কৃতজ্ঞতা। একথা নিশ্চয়ই উল্লেখের অপেক্ষা রাখে না যে, বাংলাদেশে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের সুষ্ঠু অনুশীলনের ক্ষেত্রে আব্বার অবদান সর্বাগ্রে স্মরণীয়। সর্বংসহ সঙ্গীতসাধক ছিলেন তিনি। অজস্র অকৃপণ সাধনার ফসল রেখে গেছেন তিনি সঙ্গীতানুরাগী সকলের জন্যে। আশীর্বাদ প্রার্থনা করি, যেন কালক্রমে তাঁর সকল অবদান উপহারস্বরূপ নিবেদন করতে পারি আপনাদের।

অনিবার্য মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে মুদ্রণ ও বাঁধাই খরচের উচ্চহার এবং কাগজের কয়েকগুণ মূল্যবৃদ্ধিই প্রধান। এবারের সংস্করণে সার্বিক মানোন্নয়নের চেষ্টা করা হয়েছে।

এতদ্দেশে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের প্রচার, প্রসার ও মানোন্নয়নের জন্য আমার আব্বা জীবনপাত করে গেছেন। তাঁর সঙ্গীতাবদানের আলোয় সঙ্গীতের ক্ষেত্রে অবক্ষয়ের প্রতিরোধ সম্ভব হোক, হোক ক্রম-অপসংস্কৃতির কালোছায়া অপসারিত সঙ্গীতপিয়াসী সকলের কাছে এই গ্রন্থ প্রার্থিত আনন্দ বয়ে নিয়ে যাবে, আব্বার সঙ্গীতাত্মা অলক্ষ্যে কিছুটা শাস্তি পাবে এ বিশ্বাস ও প্রার্থনা রাখি।

বিনয়াবনত

এ. এফ. এম. আলিমউজ্জামান

১ জুন, ১৯৮৫

 

প্রবেশিকা সংগীত শিক্ষা পদ্ধতি, ৩য় সংস্করণণ প্রসঙ্গে – এ. এফ. এম. আলিমউজ্জামান :

সংগীত শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে ওস্তাদ মুনশী রইসউদ্দিন একটি মূল্যবান বই লিখেছেন। ওস্তাদ মুনশী রইসউদ্দিন এর রচিত বইটির নাম “প্রবেশিকা সংগীত শিক্ষা পদ্ধতি”। সঙ্গীত শিক্ষার সাথে সঙ্গীতের ইতিহাস নিয়ে তিনি বিস্তর আলোচনা করেছেন। সঙ্গীত বিষয়ক শিক্ষার্থীদের এসব তথ্য সহায়তা করবে ভেবে আমরা সেই পুস্তক থেকে কিছু অধ্যায় আর্টিকেল আকারে পাঠকদের জন্য যুক্ত করে দিলাম। আশা করি আপনাদের সঙ্গীত বিষয়ক শিক্ষায় সহায়ক হবে।

প্রবেশিকা সংগীত শিক্ষা পদ্ধতি – ওস্তাদ মুনশী রইসউদ্দিন : তৃতীয় সংস্করণ প্রসঙ্গে :

একথা না বললে ঠিক হবে না যে আমার আব্বার লেখা প্রবেশিকা সঙ্গীত শিক্ষা পদ্ধতি এই দেশের সমাদৃত উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের প্রথম প্রামাণ্য গ্রন্থ। এর চাহিদা ভারতেও প্রচুর রয়েছে।

আপনারা সবাই জানেন ১১ এপ্রিল ১৯৭৩ ইং সালে আব্বা ইন্তেকাল করেন এবং প্রবেশিকা সংগীত শিক্ষা পদ্ধতির দ্বিতীয় সংস্করণও গত ১৯৮৫ ইং সালে প্রকাশিত হয়। সেই সংস্করণে বেশ কিছু সংশোধন, পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা হয়। তদুপরি উল্লিখিত গ্রন্থ প্রকাশিত হবার পর প্রশংসা জানিয়ে প্রচুর পত্র এসেছে আমার কাছে। প্রাপ্ত পত্রে প্রবেশিকা সংগীত শিক্ষা পদ্ধতি গ্রন্থটির কিছু কিছু বিষয়ের আরো বিশদ ব্যাখ্যাসহ বিলম্বিত একতালে নিবন্ধ প্রচলিত খেয়াল বন্দেশ উল্লেখ করে পরবর্তী সংস্করণে প্রকাশ করার অনুরোধও ছিল।

একই সাথে আরো কিছু সঙ্গীতজ্ঞের সঙ্গীতে অবদানসহ জীবনী সংযোজনের জন্যও জানানো হয়েছিল। তাই এ সকল বিষয়ের ব্যাপারে নানান চিন্তা-ভাবনা করে দেশের বিশিষ্ট উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিল্পী ও শিক্ষকদের সাথে বারংবার গঠনমূলক আলোচনা করে যাতে করে গ্রন্থটির মানোন্নয়ন আরো পরিশীলিত ও মার্জিত হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে) বর্তমান সংস্করণ প্রকাশ করার কাজ হাতে নেয়া হয়।

একই সাথে প্রবেশিকা সংগীত শিক্ষা পদ্ধতি বইটির টাইপসহ ছাপানোর ব্যাপারেও আরও উন্নত প্রযুক্তিগত পদ্ধতি প্রয়োগের কথা খেয়াল রেখে লেটার প্রেসে হ্যান্ড কাস্টিংয়ে না ছাপিয়ে অনেক বেশি অর্থ ব্যয় করে কম্পিউটারে কম্পোজ করে পি.এস. প্লেটে অফসেটে ছাপানো হয়েছে। বর্তমান প্রবেশিকা সংগীত শিক্ষা পদ্ধতি গ্রন্থে সন্নিবেশিত সকল বিভাগের সংশোধিত ও পরিবর্ধিতকরণ সংক্রান্ত ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে বিভিন্ন অধ্যায় সম্পর্কে বিশদভাবে আলোকপাত করা হল।

প্রবেশিকা সংগীত শিক্ষা পদ্ধতি বইয়ের অধ্যায় বিভাজন:

ক. প্রথম অধ্যায়ে পূর্বের সংস্করণে উল্লেখ করা প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞদের সাথে পণ্ডিত বিষ্ণু নারায়ণ ভাতখণ্ডে, স্বামী হরিদাস ও যদুভট্টের মতো প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞের জীবনী অতিরিক্ত সংযোজন করা হয়েছে।

খ. দ্বিতীয় অধ্যায়ে বর্তমানে একতালের (বিলম্বিত মাত্রার) বোলবাণী উল্লেখসহ মোট ১৭টি তালের বিবরণ উল্লেখ করা হয়েছে। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বাদ্যযন্ত্র তানপুরার চিত্রসহ পূর্ণাঙ্গ বিবরণ এবার দেয়া হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে বলে আশা করি।

গ. তৃতীয় অধ্যায়ে দেশের সকল শিক্ষা বোর্ডের এবং বিভিন্ন সঙ্গীত একাডেমীর সিলেবাসের সাথে সামঞ্জস্য বজায় রেখে ভূপালী, দুর্গা, আলাহিয়া বিলাবল ও দরবারী এই অতিরিক্ত ৪টি রাগের শাস্ত্রীয় বিবরণসহ খেয়াল গানের বন্দেশ, তান এবং অন্যান্য সকল রাগের কিছু নতুন বন্দেশ সংযোজন করা হয়েছে এবং পূর্বোল্লিখিত প্রায় প্রতিটি রাগের শাস্ত্রীয় বিবরণসহ পদ্ধতিগতভাবে প্রণালীবন্ধ ধারাবাহিকতা বজায় রেখে রাগ শেখানোর এবং শেখার নিমিত্তে সার্গাম-গীত, লক্ষণ-গীত, খেয়াল, ঠুম্ী, আলাপ, বিস্তার, তানবাট ও বোলতানসহ নতুনভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

ঘ. চতুর্থ অধ্যায়ের ব্যাপারে বিশেষভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে গত প্রকাশনাতে বেশ কিছু খেয়াল বন্দেশ উল্লেখ করা হয় নি যা বিভিন্ন সময়ে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিল্পী ও শিক্ষকরা পরবর্তী সংস্করণে সংযোজন করতে অনুরোধ করেছেন। তাঁদের বারংবার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান সংস্করণে উপমহাদেশের বিদগ্ধ। ও প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ কর্তৃক রচিত প্রায় ৪০টি প্রচলিত ও জনপ্রিয় খেয়াল বন্দেশ, স্বরলিপিসহ নতুনভাবে সংযোজন করা হল।

নতুন সংযোজিত বন্দেশগুলোর মধ্যে বেশির ভাগ বন্দেশ আমার আকার অন্যতম প্রবীণ ও অভিজ্ঞ ছাত্র শ্রীগোপালচন্দ্র দাস ও বুলবুল একাডেমীর (বাফা) উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিক্ষক আমার অনুজপ্রতিম সহকর্মী শ্রীমঙ্গলচন্দ্র মণ্ডল তাঁদের মূল্যবান সময় ব্যয় করে বন্দেশগুলোর সুরের সাঙ্গীতিক বিন্যাস করে স্বরলিপিসহ প্রদান করেছেন। আরেকজন প্রবীণ সঙ্গীতজ্ঞ শ্রীগোপাল দত্ত বর্তমান সংস্করণের জন্য ২টি বন্দেশ দিয়েছেন।

সেজন্য তাঁদের প্রতি রইল আমার আন্তরিক সশ্রদ্ধ কৃতজ্ঞতা। উল্লিখিত নতুন বন্দেশগুলোর মধ্যে আমার আব্বাসহ সঙ্গীতগুরুদের কাছে তালিম পাওয়া কিছু জনপ্রিয় খেয়াল বন্দেশের সাঙ্গীতিক বিন্যাসসহ স্বরলিপিও দেয়া হয়েছে।

এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে এই উপমহাদেশে এ যাবৎকােল প্রকাশিত উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের সকল গ্রন্থে সংযোজিত একতালের (বিলম্বিত) খেয়াল বন্দেশসহ স্বরলিপি দুই মাত্রায় ভাগ করে মোট ২৪ মাত্রায় এবং কোনো কোনো গ্রন্থে ৩৬ মাত্রায় উল্লেখ করা হয়েছে। সাধারণত ২৪ বা ৩৬ মাত্রায় কোনো খেয়াল বন্দেশ গাওয়া হয় না। এমনকি আব্বার কাছেও প্রত্যক্ষভাবে জেনেছি যে তাঁর সঙ্গীতগুরু স্বর্গীয় সঙ্গীতবিশারদ শ্রীগিরিজাশংকর চক্রবর্তীও কখনো ২৪ বা ৩৬ মাত্রায় বিলম্বিত একতালে কোনো খেয়াল গান পরিবেশন করেননি কিংবা আব্বাসহ অন্যান্য কোনো শিষ্যকেও তালিম দিয়ে যাননি।

আব্বার মুখ থেকে এও জানতে পেরেছি যে কদাচিৎ দু’একজন সঙ্গীতজ্ঞ মাঝেমধ্যে ২৪ বা ৩৬ মাত্রায় বিলম্বিত খেয়াল পরিবেশন করেছেন বা করে থাকেন যার পরিমাণ অতি নগণ্য বলেই প্রতীয়মান হয়।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

সাধারণত উপমহাদেশের প্রায় সকল সঙ্গীতজ্ঞ ও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিল্পীরা একতালে নিবন্ধ বিলম্বিত ছন্দকে ৪৮ ভাগে ভাগ করে খেয়াল গানের বন্দেশ পরিবেশন করে থাকেন। আব্বা তাঁর সঙ্গীতগুরুর নিকট থেকে বিভিন্ন রাগে সন্নিবেশিত বিলম্বিত একতালের খেয়াল বন্দেশ ৪৮ মাত্রায় তালিম পেয়েছেন এবং গুরুজীর তালিম পাওয়া পদ্ধতি মতে আব্বা বিলম্বিত একতালে খেয়াল পরিবেশন করতেন এবং তাঁর সকল শিষ্য/শিষ্যাকেও একই পদ্ধতিতে একতালকে ৪৮ ভাগে ভাগ করে বিলম্বিত খেয়াল শেখাতেন। উল্লেখ যে, একতাল ১২ মাত্রায় নিবন্ধ একটি সমপদী ছন্দের তাল।

সেই ধারাকে মূল ভিত্তি হিসেবে পরিগণিত করে আব্বা রচিত প্রবেশিকা সঙ্গীত শিক্ষা পদ্ধতি গ্রন্থের চতুর্থ অধ্যায়ে নতুন সংযোজিত বিলম্বিত একতালে নিবন্ধ সমস্ত খেয়াল বন্দেশগুলোকে ৪৮ ভাগে ভাগ করে স্বরলিপিসহ উল্লেখ করা হয়েছে। এতদ্দেশের যে সকল সঙ্গীত শিক্ষকের বিলম্বিত একতাল সম্বন্ধে কিছুটা ধারণাও রয়েছে, তাঁরাসহ অন্যান্য সকল শ্রদ্ধেয় শিক্ষকবৃন্দ এবং উপরের শ্রেণীর শিক্ষার্থীরাও এই সকল খেয়াল বন্দেশ গ্রন্থে সংযোজিত করায় বিশেষভবে উপকৃত হবেন বলে বিশ্বাস করি।

প্রবেশিকা সংগীত শিক্ষা পদ্ধতি গ্রন্থটির (পঞ্চম বা শেষ অধ্যায়ে) একটি রাগের মোটামুটি পূর্ণতা আনার পরিপ্রেক্ষিতে সন্নিবেশিত রাগগুলোতে বর্তমানে কয়েকটি তান নতুনভাবে সংযোজন করা হয়েছে যাতে করে শিক্ষার্থীরা আরও উপকৃত হবে বলে মনে করি। গ্রন্থটির বর্তমান সংস্করণের সঠিক ও সুষ্ঠু কম্পিউটার কম্পোজের জন্য প্রিসিশন কম্পিউটারের স্বত্বাধিকারী রোজী, মাহবুব ও মুকুলকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ রইল। তাঁদের আন্তরিক সহযোগিতা ও পরামর্শ আমাকে এ গ্রন্থের পূর্ণতা এনে দিতে সর্বতোভাবে সাহায্য করেছে।

এক্ষেত্রে আরেকজনকে বিশেষভাবে স্মরণ করছি—তিনি হচ্ছেন উক্ত কম্পিউটার প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে অভিজ্ঞ প্রোগ্রামার জনাব আহ্সান কবীর। তাঁর প্রত্যক্ষ ও প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা এবং দূরদর্শী চিন্তা ও সহযোগিতার কারণে গ্রন্থটির সার্বিক মানোন্নয়ন ও সৃজনশীলতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ বিভিন্ন রাগের স্বরলিপি সংশোধনের ক্ষেত্রে পরিবর্তন বা পরিবর্ধন এবং সংযোজনের ক্ষেত্রে আমার কিছু কিছু ভুলভ্রান্তিকেও কবীর তাঁর অভিজ্ঞতা দিয়ে শুধরিয়ে দিয়ে বইয়ের মান ও সৌন্দর্যকে আরও উন্নত করেছেন। তাই তাঁকেও রইল আমার আন্তরিক সশ্রদ্ধ কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, বর্তমান কলেবরে প্রবেশিকা সংগীত শিক্ষা পদ্ধতি প্রকাশ করার জন্য অগণিত সঙ্গীত শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ তাগিদ ও দেশের সঙ্গীত বিদ্যালয়গুলোর শ্রদ্ধেয় শিক্ষকবৃন্দের উৎসাহে অনেক অনেক শ্রম, ত্যাগ ও কষ্টকর প্রচেষ্টার ফলশ্রুতি হিসেবে এই গ্রন্থটির বর্তমান সংস্করণ পূর্বের সংস্করণ থেকে প্রায় ৯ বছর পর প্রকাশিত হল।

প্রবেশিকা সংগীত শিক্ষা পদ্ধতি গ্রন্থটি পুনঃপ্রকাশের ব্যাপারে স্মরণ করছি মরহুম আব্বার অনুমতি এবং পরম শ্রদ্ধেয়া আমার নির্দেশ, পরামর্শ, উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা। আমার অনুজদের নিকট থেকেও পরামর্শ ও অনুপ্রেরণা লাভ করেছি। বর্তমানে এই গ্রন্থ প্রকাশের বিপুল ব্যয়ভার কিভাবে সম্পন্ন হয়েছে তা না বলাই শ্রেয়। তবু বাংলাদেশে যখন প্রকাশনার সঙ্কট চলছে তখন এই ব্যয়বহুল ছাপানোর কাজ শুরু করে শেষ করতে গিয়ে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি আমি। একদিকে যেমন মুদ্রণ খরচ বেড়েছে উচ্চহারে, তেমনি কাগজের দামও বেড়েছে কয়েক গুণ।

তাই আমার এই প্রকাশনার ব্যাপারে সবশেষে বিশেষভাবে যার নাম উল্লেখ করতে হয় তিনি হচ্ছেন সালমানী প্রিন্টার্সের অংশীদার ও আমাদের সাহিত্যজগতের একজন সাহিত্য-পাগল সাহিত্যিক মানুষ জনাব বুলবুল চৌধুরী। তাঁর নিঃস্বার্থ প্রসারিত হাতের ছোঁয়ার কারণে এই গ্রন্থের গুণগত মান দারুণভাবে উচ্চাস্থানে বজায় রাখা গিয়েছে। সময় নেই, অসময় নেই যখন যে সময়, যে অবস্থাতেই তাঁর কাছে গিয়েছি সেই মুহূর্তেই তাঁর আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়েছি।

আর্থিকভাবে তাঁরই প্রত্যক্ষ সহযোগিতার কারণে এই গ্রন্থ প্রকাশ করা সম্ভব হয়েছে। তাই বুলবুল ভাইকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে খাটো করতে চাইনে। তিনি আমার মনের মণিকোঠায় রইলেন অনন্তকালের জন্য।

বর্তমান সংস্করণের মুদ্রণপ্রমাদের কারণে দু-একটি ভুলভ্রান্তি থাকলে তা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে সংশোধন করে নিতে অনুরোধ রইল এবং এ ব্যাপারে আমাকে সময়মতো জানালে পরবর্তী সংস্করণে পুনরায় সংশোধন করা হবে বলে অঙ্গীকার রইল।

একথা নিশ্চয়ই উল্লেখের অপেক্ষা রাখে না যে, বাংলাদেশে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের সুষ্ঠু অনুশীলনের ক্ষেত্রে  আব্বার অবদান সর্বাগ্রে স্মরণীয়। সর্বংসহ সঙ্গীতসাধক ছিলেন তিনি। অজস্র অকৃপণ সাধনার ফসল রেখে গেছেন তিনি সঙ্গীতানুরাগী সকলের জন্যে। আশীর্বাদ প্রার্থনা করি, যেন কালক্রমে তাঁর সকল অবদান উপহারস্বরূপ নিবেদন করতে পারি আপনাদের।

অনিবার্য মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে মুদ্রণ ও বাঁধাই-খরচের উচ্চহার এবং কাগজের কয়েক গুণ মূল্যবৃদ্ধিই প্রধান। এবারের সংস্করণে সার্বিক মানোন্নয়নের চেষ্টা করা হয়েছে।

এতদ্দেশে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের প্রচার, প্রসার ও মানোন্নয়নের জন্য আমার আব্বা জীবনপাত করে গেছেন। তাঁর সঙ্গীতাবদানের আলোয় সঙ্গীতের ক্ষেত্রে অবক্ষয়ের প্রতিরোধ সম্ভব হোক, হোক ক্রম-অপসংস্কৃতির কালোছায়া অপসারিত। সঙ্গীতপিয়াসী সকলের কাছে এই গ্রন্থ প্রার্থিত আনন্দ বয়ে নিয়ে যাবে, আব্বার সঙ্গীতাত্মা অলক্ষ্যে কিছু শাস্তি পাবে এ বিশ্বাস ও প্রার্থনা রাখি।

বিনয়াবনত
এ. এফ. এম. আলিমউজ্জামান

৯ নভেম্বর ১৯৯৩

 

আরও পড়তে পারেন:

Exit mobile version