ফাতেমা তুজ জোহরা । বাংলাদেশী সঙ্গীতশিল্পী

ফাতেমা তুজ জোহরা একজন বাংলাদেশী সঙ্গীতশিল্পী। তিনি নজরুলগীতি ও আধুনিক গান করে থাকেন। তিনি টেলিভিশন নাটকে অভিনয়, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশনা এবং উপস্থাপনা করেন। এছাড়া তিনি একটি কবিতার বই, দুটি ছড়ার বই, একটি উপন্যাস, একটি গল্প ও কলাম সংকলন এবং নজরুলের গান নিয়ে একটি সঙ্গীতের বই প্রকাশ করেছেন। সঙ্গীতে অবদানের জন্য তিনি ২০০৬ সালে বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক রাষ্ট্রীয় সম্মান একুশে পদকে ভূষিত হন।

ফাতেমা তুজ জোহরা । বাংলাদেশী সঙ্গীতশিল্পী

প্রারম্ভিক জীসঙ্গীত খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পরিচিতির সূচিবন

ফাতেমা তুজ জোহরা তৎকালীন বৃহত্তর বগুড়া জেলার জয়পুরহাটে এক সংস্কৃতিমনা পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা সৈয়দ ফরিদ উদ্দিন একজন রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী ছিলেন। জোহরা জয়পুরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন। সেই সময় থেকে তিনি সঙ্গীত চর্চা শুরু করেন, পাশাপাশি অভিনয়ও করতেন জোহরা সঙ্গীতচর্চা শুরু করেন ১৯৬৩ সালে হাবীবুর রহমান সাথীর নিকট।

তিনি ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত তার নিকট সঙ্গীতের তালিম গ্রহণ করেন। এরপর তিনি মিথুন দে’র নিকট সঙ্গীতের তালিন নেন। এছাড়া তিনি নগেন ঘোষ এবং রফিকুল আলমের কাছে গানের তালিম নেন। গান শেখা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমার বাবা বা আমার গুরুরা, ওস্তাদ হাবীবুর রহমান, নগেন ঘোষ ও রফিকুল আলম, কেউ আমাকে বলে নি যে বড় শিল্পী হতে হবে, বরং তারা আমাকে শিখিয়েছে কীভাবে সঠিকভাবে গান করতে হয়।”

ফাতেমা তুজ জোহরা । বাংলাদেশী সঙ্গীতশিল্পী

সঙ্গীত জীবন

২০০৮ সালে জোহরা তার আধুনিক গানের একক অ্যালবাম রূপের বাজার প্রকাশ করেন। এছাড়া তিনি তার মেয়ে নাজিয়া বিশকাত তমার সাথে যৌথভাবে মিশ্র অ্যালবাম প্রথম প্রদীপ জ্বালো প্রকাশ করেন।

সরাসরি পরিবেশনা

২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে চ্যানেল আইয়ে জোহরা ও তার মেয়ে তমা একসাথে একটি সরাসরি প্রচারিত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন এবং নজরুলগীতি পরিবেশন করেন। পরের দিন সকালে মোহনা টিভির সরাসরি প্রচারিত সঙ্গীতানুষ্ঠানে, দুপুরে একুশে টেলিভিশনের “একুশে দুপুর” অনুষ্ঠানে, বিকালে এনটিভিতে সরাসরি প্রচারিত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। পাশাপাশি সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে নজরুলসঙ্গীত পরিবেশন করেন।

২০১৬ সালের ২৭ মে নজরুলের ১১৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে জোহরা কুমিল্লা টাউন হলে আয়োজিত নজরুল উৎসবের শেষ দিনে ১৫টি নজরুলগীতি পরিবেশন করেন। তার পরিবেশিত উল্লেখযোগ্য গানগুলো হল “পাষাণে ভাঙ্গালে ঘুম”, “বসন্ত মুখরি রাগ”, “সবার কথা কইলে এবার নিজের কথা কও”, “মোর প্রথম মনের মুকুল”, “দূর দ্বীপবাসিনী”, এবং “মোর প্রিয়া হবে এসো রানী”।

ফাতেমা তুজ জোহরা । বাংলাদেশী সঙ্গীতশিল্পী

২০১৭ সালের ২৪ মে তিনি এবং আরেক নজরুলগীতি শিল্পী নাশিদ কামাল বাংলাভিশনে প্রচারিত সরাসরি কনসার্ট “মিউজিক ক্লাব” অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন। নজরুলের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত এই বিশেষ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন তানিয়া হোসেন। পরের দিন সকালে একুশে টেলিভিশনের একটি অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠানটি শেষ তিনি ময়মনসিংহের ত্রিশালে সরকারিভাবে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন। পরের দিন ২৬ মে সকালে এনটিভিতে একটি সরাসরি প্রচারিত অনুষ্ঠানে এবং বৈশাখী টিভিতে পারিহার উপস্থাপনায় সেলিব্রেটি টকশো আলাপ-এ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন এবং সঙ্গীত পরিবেশন করেন।

সাহিত্য জীবন

জোহরা তার কলেজ জীবন থেকে লেখালেখি শুরু করেন। ১৯৯২ সালে তিনি তার প্রথম কবিতার বই যেখানে ভালোর বাস প্রকাশ করেন। তিনি নিয়মিত “শব্দঘর” পত্রিকায় কলাম লিখতেন। পরে তার সেই কলামের সংকলনসহ কয়েকটি গল্প সংবলিত কিছু নিয়ে কিছু কথা প্রকাশিত হয়। তিনি ছড়ার উপর দুটি বই – তাল বাহারি ছড়া ও ছড়ায় গড়ে বোল প্রকাশ করেন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভিত্তিক একটি উপন্যাস রচনা করেন। ২০১৭ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় নজরুলগীতির উপর তার রচিত গীত ও সুরের ভিন্ন ঊর্মিমালায়: নজরুল সঙ্গীত বই অনিন্দ্য প্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয়।

ফাতেমা তুজ জোহরা । বাংলাদেশী সঙ্গীতশিল্পী

ব্যক্তিগত জীবন

জোহরার মেয়ে নাজিয়া বিশকাত তমা একজন সঙ্গীতশিল্পী। জোহরা রম্য ও ব্যঙ্গাত্মক গল্প পছন্দ করেন। তার প্রিয় লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী এবং সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়।

সম্মাননা

  • সঙ্গীতে অবদানের জন্য একুশে পদক (২০০৬)
  • প্রেস ক্লাব পুরস্কার
  • নজরুল পুরস্কার
  • থিয়েটার সম্মাননা
  • শের-এ-বাংলা স্মৃতি পদক
  • স্বাধীনতা ফোরাম সম্মাননা
  • লন্ডন থেকে শুদ্ধ মঞ্চ পুরস্কার
  • ব্রিটিশ কলম্বিয়া সম্মাননা পুরস্কার[২]
  • বাংলা একাডেমির ফেলো (২০১৫)
  • নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় পুরস্কার (২০১৫)
  • নজরুল ইনিষ্টিটিউট পুুরস্কার।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment