ভজন গান গীত ধারা নিয়ে আজকের আলোচনা। ভজন শব্দের অর্থ হলো ঈশ্বর বা দেব-দেবীর স্তুতি করা, গৌরব বর্ণনা করা, গুণকীর্তন করা, প্রশংসা করা, কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা। আর যে গানের মাধ্যমে ঈশ্বর বা দেব-দেবীর স্তুতি অর্থাৎ ভজন করা হয় তাকেই বলে ভজন। ভক্তিরস থেকে উদ্ভূত এই গানের কথা মূলত হিন্দু ধর্মীয় অধ্যাত্মবাদের ওপর প্রতিষ্ঠিত। সাধারণত আত্মনিবেদনের সুর যে কোনো ভক্তমনে সাড়া জাগাতে সক্ষম। তাই গিরিধারী লাল বা গিরিধারী নাগর কিংবা শ্রীকৃষ্ণবিষয়ক ভাষার প্রয়োগ ভাবপ্রধান এই গানকে আরো বেশি আবেগাপ্লুত করে দেয়।
ভক্তিরসের ব্যাঘাত ঘটতে পারে বলে ভজন গানে সাংগীতিক নানা কুশলতা, তান, লয়কারীর প্রয়োগ সম্পূর্ণভাবে নিষেধ করা হয়। বাংলাভূমির ভক্তবহুল বহু সাধক এই গানের মাধ্যমে ভগবানের উপাসনা করে সিদ্ধি লাভ করেছেন। তাঁদের রচিত ও প্রচারিত ভজন ব্যাপক আদৃত ও জনপ্রিয় হয়েছে।
ভক্তিরস আশ্রিত ভজন গানে রাগের বিশুদ্ধতার প্রতি সবসময় দৃষ্টি দেওয়া হয় না। বাণীর সঙ্গে মিলেমিশে হৃদয়ের ভক্তিভাবকে অনেক বেশি জাগ্রত করে তোলে এমন সুরই ভজন গানের জন্য উপযুক্ত। তাই প্রায় সব ভজন গানেই একাধিক রাগের মিশ্রণ ঘটে থাকে। হিন্দি ভাষায় রচিত ভজন গানের প্রচলন সবচেয়ে বেশি হলেও ভারতবর্ষে রাজ্যভেদে প্রায় সব ভাষাতেই ভজন গান শোনা যায়। আধুনিককালে বাংলা ভাষায় রচিত অনেক ভজন শোনা যায়, যা বাংলাভাষী ভক্তবৃন্দের কাছে অসম্ভব জনপ্রিয়।
ভজন রচয়িতা সংগীতজ্ঞদের মধ্যে নায়ক কবীর, তুলসীদাস, নাগরী দাস, নানক, ব্যাসদাস, ব্রহ্মানন্দ, মীরা বাঈ, রুহিদাস, নায়ক সুরদাস প্রমুখ গুণীজনের নাম ভারতবর্ষের সংগীত ইতিহাসে এখনো হয়ে আছে সমুজ্জ্বল। এই গান সাধারণত দাদরা, কাহারবা ও ত্রি-তালের সঙ্গে বাঁধা হয়ে থাকে। ভজন গানের বিষয়বস্তুর মধ্যে থাকে ঈশ্বরের সঙ্গে মিলনের জন্য আকুতি, তাঁকে অদর্শনের বেদনা, সুখ-দুঃখের চিরসাথী হিসেবে ভজনা, তাঁর লীলা বা গুণের বর্ণনা ইত্যাদি। মীরা বাঈয়ের একটি বিখ্যাত ভজন উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা হলো –
বরসে বাদারিয়া সাবান কী
সাবান কী মন ভাবন কী।।
সাবান সে উমাঙ্গ মেরি মনওয়া
ভনক শুনি হরি আবন কী।
উমড় ঘুমড় চাই দিশসে আয়ো
দামিনী দমকে ঝাড় লাবন কী ॥
নানহী নানহী বুদন মেহা বরসে
শীতল পবন সোহাবান কী।
মীরাকে প্রভু গিরিধারী নাগর
আনন্দ মঙ্গল গাওয়ান কী ॥
[গীতিকার, সুরকার ও শিল্পী মীরা বাঈ, রাগ: মিশ্র ইমন, তাল: কাহারবা (৮ মাত্রা)
আরও দেখুন: