ভারতীয় উপমহাদেশের সঙ্গীত বতে একটা বড় অঞ্চলের সঙ্গীত সংস্কৃতিকে বোঝায়। সেটা আফগানিস্তান থেকে শুরু করে পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ হয়ে নেপাল পর্যন্ত বিস্তৃত । এই অঞ্চলে বিভিন্ন লোকসঙ্গীত থাকলেও শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের দুটো ধারা পুরো এলাকাকে বেঁধে রেখেছে তাদের অতীত ইতিহাসের সাথে। রাজনৈতিক ভূভাগ হয়ে গেলেও সঙ্গীত ভাগ হয়নি।
Table of Contents
ভারতীয় উপমহাদেশের সঙ্গীত:
ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন ধরণের সঙ্গীত:
ভারতীয় উপমহাদেশের শাস্ত্রীয় সঙ্গীত:
ভারতীয় উপমহাদেশের শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের চর্চা ভারতে বৈদিক যুগ হতেই চলে আসছে। প্রায় ২০০০ বছরের পুরোনো এই চর্চা মূলতঃ মন্দিরে পরিবেশিত স্তোত্র হতেই সৃষ্টি হয়েছে। সামবেদে সঙ্গীতকে একটি পূর্ণাঙ্গ ও বিস্তারিত বিষয় হিসেবে আলোচনা করা হয়েছে। বর্তমানে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রধান দুটি ধারা বিদ্যমান:
হিন্দুস্থানী ও কর্ণাটী সঙ্গীতের কিছু কাঠমোগত বৈশিষ্ট ও রীতি রয়েছে। উভয় ধরনের সঙ্গীতেই রয়েছে দুটি মৌলিক উপাদান যা তাল ও রাগ হিসেবে পরিচিত। রাগ সাতটি সুর সা-রে-গা-মা-পা-ধা-নি এবং ২২ টি শ্রুতির সমন্বয়ে সৃষ্টি হয়। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পরিবেশনা হয় মূলতঃ দু’ভাবে, কন্ঠে ও বাদ্যযন্ত্রে। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের এককভাবে পরিবেশনকারী যন্ত্রসমূহ হচ্ছে সরোদ, সেতার, সুরবাহার, বীণা, সারেঙ্গী, বাঁশী, হারমোনিয়াম, বেহালা, সন্তুর, তবলা, মৃদঙ্গ। এছাড়াও সহায়ক যন্ত্রসমূহ হচ্ছে তানপুরা, এস্রাজ, পাখোয়াজ ইত্যাদি। হিন্দুস্তানী উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের প্রচলন মূলতঃ উত্তর ভারতে এবং কর্ণাটকীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত মূলতঃ দক্ষিণ ভারতে দেখা যায়।
ভারতীয় উপমহাদেশের লোকসঙ্গীত:
ভারতীয় উপমহাদেশের প্রতিটি দেশের প্রতিটি লোকালয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা রঙ্গের, নানা ধরণের লোকসঙ্গীত। এর রকম স্বতন্ত্র লোকসঙ্গীতের বাহার আর কোন উপমহাদেশেই পাওয়া যায় না।
ভারতীয় উপমহাদেশের চলচ্চিত্র সঙ্গীত:
ভারতীয় উপমহাদেশের প্রতিটি দেশের নিজস্ব চলচ্চিত্র সঙ্গীতের ধারা তৈরি হয়েছে। তাছাড়া ভারতে একাধিক চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি রয়েছে তাদেরও ভিন্ন ভিন্ন সঙ্গীত রয়েছে। সব মিলিয়ে অত্যন্ত সমৃদ্ধ একটি সঙ্গীত ভাণ্ডার ভারতবর্ষের চলচ্চিত্র সঙ্গীত।
ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যান্য সঙ্গীত:
রবীন্দ্র সংগীত
রবীন্দ্র সংগীত হল কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ও সুরারোপিত গানসমূহের সমষ্টি, যা বাংলা ভাষার সঙ্গীতধারায় এক অনন্য উচ্চতায় অধিষ্ঠিত। প্রেম, প্রকৃতি, ভক্তি, দেশপ্রেম ও মানবতার নানা দিক এতে প্রতিফলিত হয়। এর সুরে ধ্রুপদ, খেয়াল, ঠুমরি, কীর্তনসহ নানা ভারতীয় শাস্ত্রীয় ও লোকসঙ্গীতের প্রভাব যেমন রয়েছে, তেমনি পাশ্চাত্য সঙ্গীতের সূক্ষ্ম ছোঁয়াও বিদ্যমান। রবীন্দ্র সংগীত শুধু গানের জগতে নয়, নাটক, নৃত্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গভীর প্রভাব বিস্তার করেছে।
ভারতীয় রক সংগীত
ভারতীয় রক সংগীত ১৯৬০-এর দশকে পাশ্চাত্যের রক সঙ্গীতের প্রভাবে গড়ে উঠলেও সময়ের সাথে সাথে এটি ভারতীয় সঙ্গীত উপাদান, যেমন রাগ, তবলা, সেতার এবং দেশীয় ছন্দের সঙ্গে একাত্ম হয়ে নিজস্ব স্বাদ তৈরি করেছে। ব্যান্ডসংগীতের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের কণ্ঠে সামাজিক, রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত অনুভূতির প্রকাশের মাধ্যম হয়েছে এটি। মাইলস, মোহিনের ঘরানা, পার্থিব ও প্যারালাল ব্যান্ডগুলো ভারতীয় রককে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পৌঁছে দিয়েছে।
ভারতীয় পপ সংগীত
ভারতীয় পপ সংগীত মূলত ১৯৮০ ও ৯০-এর দশকে বিশাল জনপ্রিয়তা পায়, যখন এটি বলিউড সংগীত, লোকসঙ্গীত ও পাশ্চাত্য পপের মিশ্রণে এক নতুন ধারা সৃষ্টি করে। এর মূল বৈশিষ্ট্য হল সহজ-সাবলীল সুর, মেলোডিক কণ্ঠ এবং জনপ্রিয় সংস্কৃতির সাথে মানানসই গীতবস্ত্র। আলিশা চিনয়, উদিত নারায়ণ, রেমো ফার্নান্ডেজ, লাকি আলি প্রমুখ শিল্পী এই ধারাকে জনপ্রিয় করে তোলেন। ভারতীয় পপ সংগীত আজও দেশীয় এবং প্রবাসী ভারতীয় শ্রোতাদের বিনোদনের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।