মতিউল হক খান হলেন একজন বাংলাদেশী সেতার বাদক ও যন্ত্র সঙ্গীতজ্ঞ। তিনি তার অনন্যসাধারণ অবদানের জন্য ২০১৩ সালে শিল্পকলা পদক লাভ করেন ও ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদক প্রদান করে।
Table of Contents
মতিউল হক খান । বাংলাদেশী সেতার বাদক ও যন্ত্র সঙ্গীতজ্ঞ
প্রাথমিক জীবন
মতিউল হক খান ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস হল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরে। তার পিতার হলেন বিখ্যাত সেতার বাদক ওস্তাদ এরশাদ আলী খান। তিনি ১২ বছর বয়স থেকে সেতার বাজানো শুরু করেন। শিক্ষা নেন পিতার নিকট।
কর্মজীবন
পঞ্চাশের দশকে ভারতে যান মতিউল। সেখানে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খান, আলী আকবর খান, নিখিল ব্যানার্জির কাছে তালিম নেন। আলী আকবর কলেজ অব মিউজিকে উচ্চাঙ্গসংগীত নিয়ে পড়ার সময় থেকেছেন তাঁর বাড়িতেই। সেখানে থাকতেই একবার বেশ অর্থকষ্টে পড়েন। পয়সার জন্য পা বাড়ান চলচ্চিত্রে। সত্যজিৎ রায়ের ‘দেবী’ এবং তপন সিংহর ‘ক্ষুধিত পাষাণ’ ছবির আবহসংগীতেও সেতার বাজিয়েছেন।
যখন দেশে ফেরেন, তখন আইয়ুব খানের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে দেশ উত্তাল। তার মধ্যেই যোগ দেন রেডিও পাকিস্তানে—মিউজিক প্রডিউসার হিসেবে। সংগীত পরিচালনা করতেন। সে সময়ই শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে। চাকরির কয়েক বছর না যেতেই দেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যোগ দেন বাংলাদেশ বেতারে। কিছুদিন পর বদলি হন চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রে। সেখানে কাটে ১৩ বছর। বাংলাদেশ বেতারের বিশেষ মানের উচ্চাঙ্গ সংগীতশিল্পী ছিলেন তিনি। সেতার বাজিয়ে দুটি অ্যালবামও প্রকাশ করেছেন। প্রথমটি বের হয় ১৯৯৫ সালে বিসিসি ফাউন্ডেশন থেকে।
আট বছর পর ২০০৩ সালে সংগীতার ব্যানারে বের করেন দ্বিতীয়টি। ‘হীরামন’ চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন সংগীত পরিচালক হিসেবে।কলকাতার কলেজ স্ট্রিটে বিশেষ অনুষ্ঠানে ওস্তাদ আলী আহমেদ খান, আলী আকবর খান, নিখিল ব্যানার্জি, বিসমিল্লাহ খান, পণ্ডিত রবিশংকরের মতো ব্যক্তিত্বদের সামনে সেতার বাজিয়ে বাহবা পেয়েছিলেন তিনি।
তুরস্ক, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারত, চীন ও জাপানের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সেতার বাজিয়েছেন। লন্ডনের বিবিসি স্টুডিওতে সেতার বাজানোর অভিজ্ঞতা আছে। বাংলাদেশের বহু গুণী ব্যক্তির সেতার শিক্ষক তিনি। দেশ-বিদেশে তাঁর অনেক শিক্ষার্থী। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মেন্টর ফেলোশিপ ইন মিউজিক প্রকল্পে শিক্ষকতা করেছেন দুই বছর। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারের উদ্বোাধনী অনুষ্ঠানেও সেতার বাজানোর অভিজ্ঞতা আছে। দীর্ঘ সংগীত ক্যারিয়ারে বেশ কয়েকটি পুরস্কারও পেয়েছেন।
ব্যাক্তিগত জীবন
খান ব্যক্তিগত জীবনে নুরজাহান খানের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। নুরজাহান খান ২০১৬ সালের ১৬ জানুয়ারি মৃত্যু বরণ করেছেন।