মলয় ঘোষ দস্তিদার একজন বাংলাদেশী গীতিকার, সুরকার এবং চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের পথিকৃৎ শিল্পী, চারণ কবি ও রাজনীতিবিদ। তিনি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় প্রথম গান রচয়িতা। মাস্টার দা সূর্য সেন এর শিষ্য। ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী গায়ক অগ্নি যুগে অগ্নি রোষে পড়ে গানের জন্য ১৯৫২ সালে তিনি কারাবরণ করেন। তার উল্লেখ্যযোগ্য গানের মধ্যে আছে ছোড ছোড ডেউ তুলি, আঁরা চাটগাঁইয়া নওজোয়ান, বাহার মারি সাম্পান যার, ব্রিটিশ কোম্পানি গাট্টি বোস্কা বান্ধি ধাইলিনি, মা বাপরে চাইতা বলি। ছোড ছোড ডেউ তুলি গানটি তিনি ১৯৪১ সালে রচনা করেন। বিশেষ করে গানটিকে চাটগাঁইয়া আঞ্চলিক গানের ন সঙ্গীত বলা হয়। তার রচিত গানটি স্বীয় কন্ঠে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক গানের প্রথম রেকর্ডকৃত গান।
Table of Contents
মলয় ঘোষ দস্তিদার । বাংলাদেশী গীতিকার, সুরকার
প্রারম্ভিক জীবন
১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ জুন রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। বাবা নতুনচন্দ্র ঘোষ দস্তিদার, মা বগলা ঘোষ দস্তিদার। বাবার উৎসাহে শৈশবকাল থেকে সংগীতচর্চা শুরু। গঙ্গাপদ আচার্যের হাতে উচ্চাঙ্গসংগীতের মাধ্যমে সঙ্গীত চর্চার প্রাথমিক যাত্রা হয়। পরে ধ্যান সেন, চুনুরি বাবু ও সমীরণ বন্দোপাধ্যের কাছে সঙ্গীতের তালিম গ্রহণ করেন।
সঙ্গীত সাধনা
তৎকালীন বিপ্লবী গায়ক তেজেন ঘোষের অনুপ্রেরণায় ব্রিটিশ বিরোধী গান গেয়ে কিশোর বয়সেই সুনাম অর্জন করে। ১৯৪০ সালে আর্য সঙ্গীত সমিতির আয়োজিত সংগীত প্রতিযোগিতায় ভজন ও আধুনিক গানে প্রথম স্থান অধিকার করে। ১৯৪১ সালে তিনি বেতারে প্রথম গান পরিবেশন করে। পরবর্তীতে কলকাতায় গিয়ে মিনার্ভ থিয়েটারে চাকরি করে। একইসময়ে কলকাতার কলম্বিয়া গ্রামোফোন কোম্পানি তার রচিত ও সুরাপিত প্রথম গানের রেকর্ড বের করে।
তিনি শুধু গায়কই নন-সুরকার, নাট্যকার, চারণকবি, গীতিকার, সংগ্রামী রাজনীতিবিদ, মঞ্চ রূপসজ্জাকার এবং মাষ্টার দা সূর্যসেনের ছাত্রও ছিলেন। অগ্নিযুগের অগ্নিরোষে পড়ে গানের কারণে কিছুকালের জন্য কারাবরণ করেন।মলয় ঘোষ দস্তিদার আঞ্চলিক ভাষার তথা চট্রগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় প্রথম গান রচয়িতা।
তার রচিত আঞ্চলিক গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ছোড ছোড ঢেউ তুলি পানিত, আঁরা চাডগাঁইয়া নওজোয়ান, কাট্রল পাক্অ কাট্রল পাক্অ, বাহার মারি সাম্পান যার, মা বাপারে চাইতা বুলি, বিটিশ কোম্পানি গাট্রি বোস্কা বান্ধি ধাইলিনি, কেমন করে গর বানাইলা ইত্যাদি। তার লেখা সুর করা এবং গাওয়া ‘ছোড ছোড ঢেউ তুলি পানিত……’ আঞ্চলিক গানটি ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে রেকর্ড করা হয়। ফলে গানটি চট্রগ্রামের আঞ্চলিক গান হিসেবে প্রথম রেকর্ড করা গানের স্বীকৃতি পায়। অন্যদিকে দেশে-বিদেশে চট্রগ্রামের পরিচয় তুলে ধরতে অসাধারণ ভূমিকাও পালন করেন।
তিনি ভাষা আন্দোলনের একজন কর্মী অন্যদিকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিকও ছিলেন। জীবদ্দশায় কিংবা মরণোত্তর রাষ্ট্রীয় সম্মাননা না পেলেও তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পুরস্কারের পাশাপাশি ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে সংকেত সাংস্কৃতিক গোষ্ঠি কর্তৃক সংকেত পদক-এ ভূষিত হন। শেষ জীবনে এই কিংবদন্তিসম মলয় ঘোষ দস্তিদার পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৬২ বছর বয়সে ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দের ১২ মার্চ চট্রগ্রামের ফতেয়াবাদ গ্রামে বসত ভিটায় পরলোকগমন করেন।
বৈবাহিক জীবন
১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে চট্রগ্রামে ফিরে এসে রমা ঘোষকে বিয়ে করেন এবং বৈবাহিক সূত্রে চট্রগ্রামের ফতেয়াবাদে বাড়ী করে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বসবাস করে ছিলেন।
পুরস্কার ও সম্মাননা
চট্টগ্রাম আবসর সাংস্কৃতিক গৌষ্ঠী প্রবর্তিত স্মৃতি পুরস্কার মলয় ঘোষ দস্তিদার সাহিত্য পুরস্কার,
সংকেত সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী কর্তৃক সংকেত পদক (১৯৮০ সাল)
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কর্তৃক একুশে স্মারক সম্মাননা পদক (মরণোত্তর–২০১৫ সাল)
আরও দেখুনঃ