রহমতউল্লাহ আল মাহমুদ সেলিম যিনি সংক্ষেপে মাহমুদ সেলিম নামে পরিচিত হলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত গণসংগীতশিল্পি, গীতিকার, সুরকার ও নাগরিক অধিকার কর্মী। তিনি ১৯৭৮ সাল থেকে ৯ বারে মোট ২৫ বার সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী’র সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে তিনি সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন কবছেন। “ইতিহাস কথা কও” গীতিআলেখ্যটি তার এক অনবদ্য সৃষ্টি।
রহমতউল্লাহ আল মাহমুদ সেলিম । বাংলাদেশী গণসংগীতশিল্পি, গীতিকার, সুরকার
প্রারম্ভিক জীবন
মাহমুদ সেলিম ১৯৫৪ সালের ১ জুলাই ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বক্সনগর ইউনিয়নের ছোটরাজপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন মোল্লা ও মাতার নাম বেগম ফাতিমা খাতুন।
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন
৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি ন্যাপ-কমিউনিস্ট পাটি-ছাত্র ইউনিয়নের বিশেষ গেরিলা বাহিনীর হয়ে অংশ নিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি পুরোমাত্রায় সাংস্কৃতিক সংগ্রামকে নিজেকে নিয়োজিত করেন। বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে তিনি শক্ত ভিত্তি দেন এ সংগঠনকে।
১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বরণের পর সমগ্র দেশ যখন স্তম্ভিত, তখন তিনি ‘ইতিহাস কথা কও’ গীতি আলেখ্য রচনা করে ১৯৭৬ এর ১৬ই ডিসেম্বর প্রথম মঞ্চায়ন করেন। এর মাধ্যমে কঠিন সামরিক শাসনের মধ্যেও স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস ও বঙ্গবন্ধুর অবদান প্রকাশ্যে তুলে ধরে জাতির প্রাণে সাহসের সঞ্চার করেন এবং জনগণকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় পুনরুজ্জীবিত করেন।
বাংলাদেশের গণ সাংস্কৃতিক অঙ্গনে স্বমহিমায় ভাস্বর মাহমুদ সেলিম (যার প্রকৃত নাম রহমত উল্লাহ আল মাহমুদ সেলিম) ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার ছোটরাজপাড়া গ্রামে ১৯৫৪ সালের ১লা জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। মা বেগম ফাতেমা খাতুন এবং বাবা মো. জালাল উদ্দিন মোল্লাহ।১৯৭১ সনে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ এবং ১১ নভেম্বর ১৯৭১ বেতিয়ারা যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন।
উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী
১৯৭২-৭৪ বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন নারায়ণগঞ্জ জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক।
১৯৭৪ এ বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় সংসদের সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৭৮ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত ৯ বারে মোট ২৫ বছর উদীচীর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এবং ১৯৭৫ পরবর্তী সকল সামরিক ও স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে তীব্র সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক সংগ্রাম গড়ে তোলায় উদীচীকে নেতৃত্ব প্রদান করেন।
১৯৭৯-এ প্রফেসর আবদুল মতিন চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত ‘বঙ্গবন্ধু পরিষদ’-এর প্রথম জাতীয় পরিষদ-এর সদস্য নির্বাচিত হন।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ভ্রুণ সংগঠন ‘একুশে উদযাপন কমিটি’ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। পেশাগত জীবনে তিনি একজন সফল ব্যাংকারও। তিনি কাজ করতেন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সোনালী ব্যাংকে। তিনি সোনালী ব্যাংক সাংস্কৃতিক বিভাগেরও মূল সংগঠক ছিলেন।
সোনালী ব্যাংক অফিসার্স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ১৯৯৭-৯৮ পর্যন্ত।
১৯৯১-এর পর স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতি ও বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ হিসেবে শিশু-কিশোরদের সচেতন করার জন্য তিনি ‘স্বাধীনতার ইতিহাস প্রতিযোগিতা পরিষদ’ গঠন করেন। উদীচীর মাধ্যমে ১৯৯৫-এ ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ: কিশোর ইতিহাস’ বইটির ৫০,০০০ কপি ছাপিয়ে শিশু-কিশোরদের মধ্যে স্বল্পমূল্যে বিতরণ এবং দেশের ১৯০টি উপজেলায় লিখিত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে তারই একান্ত উৎসাহ ও উদ্যোগে।
১৯৯৬-এ ‘জনতার মঞ্চ’ ও ২০০১-এর নির্বাচনে সঙ্গীত পরিবেশনের অপরাধে ২০০২ সালে ক্ষমতায় এসেই তৎকালীন সরকার তার উপর হয়রানি শুরু করে। ফলে তিনি সোনালী ব্যাংকের চাকুরি থেকে স্বেচ্ছা অবসর নিতে বাধ্য হন।
২০০৩-এ সারাদেশে সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘জাতীয় শিক্ষা সংস্কৃতি আন্দোলন পরিষদ’ গঠন এবং এর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মাহমুদ সেলিম।
২০১০ থেকে ২০১২ পর্যন্ত ‘বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি’র সঙ্গীত ও নৃত্যকলা বিভাগের পরিচালকের দায়িত্ব পালন।
আশৈশব সঙ্গীতশিল্পী মাহমুদ সেলিম বেতার টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত শিল্পী। তিনি বহু গণসঙ্গীত ও গীতি নৃত্য আলেখ্য রচনা ও সুরারোপ করেন।তিনি ‘জাগরণ সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্র’ কর্তৃক প্রকাশিত দুটি অ্যালবামের দেড় শতাধিক গণসঙ্গীতের মূল প্রশিক্ষক।সঙ্গীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘সঙ্গীত ভবন’ এর শিক্ষক ও যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন বহুদিন।
বর্তমানে তিনি ‘রাধারমণ সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্র’ এর সভাপতি, বাংলাদেশ উচীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সহ-সভাপতি এবং ‘গানবাংলা টেলিভিশন’ এর গবেষণা প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন।
পুরস্কার ও সম্মননা
সংগীতে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ২০১৭ সালে একুশে পদক লাভ করেন।
আরও দেখুনঃ