মুস্তাফা জামান আব্বাসী হলেন একজন বাংলাদেশি সঙ্গীতজ্ঞ এবং সঙ্গীত বিষয়ক অধ্যাপক ও গবেষক। তিনি লোক সঙ্গীতশিল্পী ও সুরকার আব্বাসউদ্দীন আহমদের কনিষ্ঠপুত্র। সঙ্গীতে অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদকে ভূষিত হন। তিনি ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির “কাজী নজরুল ইসলাম এবং আব্বাসউদ্দীন আহমদ গবেষণা ও শিক্ষা কেন্দ্র” এর গবেষক। নজরুল ইসলামকে নিয়ে তার কাজের জন্য তিনি ২০১৩ সালে নজরুল মেলায় আজীবন সম্মাননা লাভ করেন।
মুস্তাফা জামান আব্বাসী । বাংলাদেশি সঙ্গীতজ্ঞ এবং সঙ্গীত বিষয়ক অধ্যাপক
প্রারম্ভিক জীবন
আব্বাসী ১৯৩৬ সালের ৮ ডিসেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমান ভারত) পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহার জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লোক সঙ্গীতশিল্পী ও সুরকার আব্বাসউদ্দীন আহমদের তৃতীয় এবং কনিষ্ঠ পুত্র। তার বড় ভাই মোস্তফা কামাল ছিলেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি। তার বোন ফেরদৌসী রহমান একজন সুরকার ও সঙ্গীতশিল্পী। আব্বাসী ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদ মুহম্মদ হোসেন খসরু এবং ওস্তাদ গুল মোহাম্মদ খাঁর নিকট সঙ্গীতের তালিম গ্রহণ করেন।
কর্মজীবন
লোকসংগীতে তার অবদান অগ্রণী-অতুলনীয়। আধুনিক গান, স্বদেশী, ইসলামি, মরমী, পল্লীগীতি, লালনগীতি এবং উর্দুগান সবই তিনি গেয়েছেন। তবে পল্লীগীতিতে তার মৌলিকতা ও সাফল্য সবচেয়ে বেশি। পল্লীগানের সম্রাট বাংলাদেশের একজন ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীত শিল্পী আব্বাসউদ্দীনের সন্তান তিনি। গান-সংগীতের পাশাপাশি লেখালেখিতেও তিনি সিদ্ধহস্ত। মুস্তাফা জামান আব্বাসীর ৫৪টি গ্রন্থ পাঠকনন্দিত। জাতীয়-আন্তর্জাতিক বিভিন্ন অ্যাওয়ার্ড-সম্পননা পেয়েছেন তিনি।
বর্তমানে তিনি ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের কাজী নজরুল ইসলাম এণ্ড আব্বাসউদ্দীন আহমদ রিসার্চ এণ্ড স্ট্যাডি সেন্টারের কনভেনর ও সিনিয়র রিসার্চ স্কলার হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। মুস্তাফা জামান আব্বাসী রচিত গ্রন্থের মধ্য থেকে মুহাম্মদের নাম, যে নামেই ডাকি, সুফি কবিতা, গালিবের হৃদয় ছুঁয়ে, কাজী নজরুল ইসলামের জীবনীকেন্দ্রিক একমাত্র উপন্যাস পুড়িব একাকী, রুমির অলৌকিক বাগান, জলসা থেকে জলসায়, আব্বাসউদ্দিন মানুষ ও শিল্পী, স্পষ্ট জ্যোতি আল কুরআন, জীবন নদীর উজানে, লালন যাত্রীর পশরা ইত্যাদি গ্রস্থগুলো প্রত্যেকজন সুফিবাদী ও শুভ্র মানসিকতার ধারকের পড়া একান্ত উচিত।
ব্যক্তিগত জীবন
মুস্তাফা জামান আব্বাসী আসমা আব্বাসীর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। আসমা একজন শিক্ষাবিদ ও লেখিকা। তাদের দুই কন্যা – সামিরা আব্বাসী এবং শারমিনী আব্বাসী। সামিরা লোকসঙ্গীত, নজরুল সঙ্গীত ও আধুনিক গানের চর্চা ও গবেষণা করছেন।
সম্মাননা
- সঙ্গীতে অবদানের জন্য একুশে পদক, ১৯৯৫
- চট্টগ্রাম সংস্কৃতি কেন্দ্র থেকে ফররুখ স্মৃতি পুরস্কার, ২০১১
- চ্যানেল আই নজরুল মেলা আজীবন সম্মাননা, ২০১৩
- এপেক্স ফাউন্ডেশন পুরস্কার
- নাট্যসভা পুরস্কার
- বাংলা শতবর্ষ পুরস্কার
- আব্বাসউদ্দীন স্বর্ণ পদক
- মানিক মিয়া পুরস্কার
- সিলেট সঙ্গীত পুরস্কার
- লালন পরিষদ পুরস্কার
- বাংলা একাডেমী ফেলোশিপ
আরও দেখুনঃ