রাগ আনন্দ ভৈরব

রাগ আনন্দ ভৈরব : উত্তর ভারতীয় সঙ্গীত পদ্ধতিতে ভৈরব ঠাটের অন্তর্গত রাগ বিশেষ। এটি মূলত ভৈরব রাগের একটি প্রকরণ। এর পূর্বাঙ্গের রয়েছে ভৈরব অঙ্গ এবং উত্তরাঙ্গে রয়েছে বিলাবল অঙ্গ। ফলে রাগটিকে সঙ্কর রাগ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। পূর্বাঙ্গের চলন সাধারণত ভৈরবের মতই। কিন্তু উত্তরাঙ্গে বিলাবলের প ধ ন র্স বা প ধ র্স সুরশৈলী ব্যবহৃত হয়। এছাড়া এতে কোমল নিষাদকে আগন্তুক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

রাগ আনন্দ ভৈরব

রাগ আনন্দ ভৈরব

এই রাগটি নিয়ে কিছু মতভেদ আছে। অনেকে আবার এই রাগটির সাথে আনন্দ-ভৈরবী নামক অপর একটি রাগের সাথে গুলিয়ে ফেলেন। মূলত আনন্দ-ভৈরব ও আনন্দ ভৈরবী পৃথক রাগ।

এটি অপ্রচলিত রাগ। এই রাগে প্রথম বাংলা গান রচনা করেছিলেন, কাজী নজরুল ইসলাম। ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের ৪ নভেম্বর (শনিবার, ২১ কার্তিক ১৩৪৬), সন্ধ্যা ৭.২০টায় অপ্রচলিত রাগ-ভিত্তিক অনুষ্ঠান ‘হারামণি’ দ্বিতীয় অনুষ্ঠানে- এই রাগে নিবদ্ধ কাজী নজরুল ইসলামের একটি গান প্রচারিত হয়েছিল। গানটি হলো-
‘জয় আনন্দ-ভৈরব [নজরুল ইসলাম] [তথ্য]।

অনুষ্ঠানটির সংগঠক ছিলেন- সুরেশ চক্রবর্তী ও কাজী নজরুল ইসলাম। পরবর্তী সময়ে নজরুল এই রাগটির একটি পরিচয় লিখেছিলেন। তাঁর মতে-

আরোহণ: স ঋ গ ম প ধ ন র্স

অবরোহণ : র্স ন ধ প ম গ ঋ র্স

 

রাগ আনন্দ ভৈরব

 

বাদীস্বর: অষ্টম (পঞ্চম)

সমবাদী স্বর: রেখাব
বর্ণ বা জাতি : সম্পূর্ণ
গাহিবার সময়: সকাল।

Google News Channel Logo

নজরুল মন্তব্যে লিখেছিলেন- ‘ইহার ধৈবত তীব্র, ভৈরোঁ ও বেলাবলের মিশ্রণে ইহার সৃষ্টি। কেহ কেহ অবরোহণে বক্রভাবে কোমল ধৈবত লাগান। ইহাতে এই রাগিনী মধুরতর শোনায়। এই ভাবে কোমল ধৈবত লাগান:
র্সা না ধা পা মা-দা -পা
মা গা ঋা সা।
এই মতে যাঁহারা পরিপোষক তাঁহারা মধ্যমে সম্বাদী ও ষড়জবাদী ধরিয়া আলাপ করেন। ‘

এই নজরুলের এই বিশ্লেষণ অনুসারে বাদী-সম্বাদী দাঁড়ায় যথাক্রমে ষড্‌জ ও মধ্যম। নজরুল এই রাগে তীব্র ধৈবতের কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু ‘মা’রিফুন্নাগমাত’ নামক সঙ্গীতগ্রন্থে উল্লেখ আছে- যদি এই রাগে তীব্র ধৈবত ব্যবহার করা যায় তাহলে এই রাগটি গ্রন্থে বর্ণিত ‘সূর্যকান্ত’ রাগে পরিণত হয়।’ এই বিচারে ধরা যায় এই রাগের স্বাভাবিক রূপে কোমল ধৈবত ব্যবহৃত হয়। অবশ্য ‘মা’রিফুন্নাগমাত’-এই রাগের লক্ষণগীত এবং ধ্রুপদে শুদ্ধ ধৈবতই ব্যবহার করা হয়েছে।

 

সুরেশ চক্রবর্তী তাঁর রাগ-রূপায়ণ প্রথম খণ্ডে বর্ণিত এই রাগের চলনের অংশবিশেষ নিচে তুলে ধরা হলো।
স, ঋ ঋ স, গ ম, গ ম ঋ, ঋ স। ন্ ধ্ প্ ধ্ স, ঋ স, গ ম প, গ ম, ঋ, স। ম গ মপ ধ, ধ প, ম ধ প ম গ ম, ঋ গ ম প ম, গ ম গ ঋ স।

 

তথ্যসূত্র:

রাগ-রূপায়ণ (প্রথম খণ্ড)। সুরেশ চক্রবর্তী।

মারিফুন্নাগমাত। রাজা নওয়াব আলী খান। অনুবাদ মকসুদুর রহমান হিলালী। বাঙলা একাডেমী, বর্ধমান হাউস জুলাই ১৯৬৭।

 

আরও পড়ুন:

Leave a Comment