রাগ কামোদ

রাগ কামোদ হল উত্তর ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের একটি স্বতন্ত্র ও সৌম্য রাগ, যা কল্যাণ ঠাট-এর অন্তর্গত। এটি একদিকে যেমন ললিত স্নিগ্ধ আবহ সৃষ্টি করে, তেমনি আবার এতে রয়েছে একধরনের চপলতা অলঙ্কারিক বৈশিষ্ট্য। এর ধ্বনি ও গঠন এমনভাবে সাজানো যে শ্রোতার মনে একধরনের রসাত্মক পরিবেশ গড়ে তোলে।

🎵 রাগ কামোদের প্রকৃতি চরিত্র

  • চঞ্চল বক্র স্বর প্রয়োগ এই রাগের মূল বৈশিষ্ট্য।
  • এতে দুই ধরনের মধ্যম (তীব্র শুদ্ধ) ব্যবহার হলেও শুদ্ধ মধ্যম অধিক ব্যবহৃত হয়।
  • তীব্র মধ্যম সাধারণত দ্রুত আরোহণে স্বল্পমাত্রায় প্রয়োগ করা হয়।
  • গান্ধার ()নিষাদ (নি) স্বর দুটিকে দুর্বল স্বর ধরা হয় এবং এই দুটি স্বর বক্রভাবে ব্যবহৃত হয়। এজন্য এই রাগে সরল সঞ্চার খুব কম শোনা যায়।
  • আলঙ্কারিক গঠন এবং সংগীতীয় অলঙ্কার (মূর্ছনা, গমক, কান, ঝালা ইত্যাদি) প্রয়োগ এই রাগের ভঙ্গিমাকে সমৃদ্ধ করে।

 

🎶 রাগ কামোদের টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ

বৈশিষ্ট্যবিবরণ
ঠাটকল্যাণ
জাতিসম্পূর্ণ-সম্পূর্ণ (৭+৭ স্বর)
প্রধান স্বর (বাদী)পঞ্চম (পা)
উপপ্রধান স্বর (সমবাদী)ঋষভ (রে)
প্রয়োগ অঙ্গপূর্বাঙ্গ
সময়রাতের প্রথম প্রহর (প্রায় ৯টা–১২টা)

 

📈 স্বর বিন্যাস:

  • আরোহণ (Ascending):
    স র প, ম̇ প ধ প, ন ধ র স
    (এখানে ম̇ = তীব্র মধ্যম)
  • অবরোহণ (Descending):
    স ন ধ প, ম̇ প গ ম প, গ ম র স

⚠️ গুরুত্বপূর্ণ যে, এই রাগে গা ও নি সরাসরি ব্যবহৃত না হয়ে অলঙ্কারে আসে। সোজাসুজি ব্যবহার করলে রাগ ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

 

🎧 পকড় (Pakar):

স র প, ম ম̇ ধ প, গ ম প, গ ম র স

এই পকড়টি রাগের মুখ্য রূপ প্রতিষ্ঠা করে এবং রাগকে সহজে ধরতে শেখায়।

 

🕊️ রাগ কামোদের অনুভব:

এই রাগ সাধারণত স্নিগ্ধ প্রেম, চপল আবেগ, আভিজাত্য এবং লঘু রস প্রকাশে উপযোগী। কামোদের গান বা আলাপ শুনলে মনে হয় যেন গায়ক বা বাদক স্বর দিয়ে অলংকার বুনছেন।

 

🎙️ বিখ্যাত পরিবেশন:

  • উস্তাদ আমির খান, পণ্ডিত ভীমসেন যোশী, কিশোরী আমোনকর এবং পণ্ডিত যশরাজ– এঁরা এই রাগে অসাধারণ বন্দিশ পরিবেশন করেছেন।
  • বিশিষ্ট ধ্রুপদ বা খেয়াল গায়করা প্রায়শই এই রাগে আলাপ শুরু করেন কারণ এটি রসনাত্মক এবং ধ্বনির প্রসার ঘটাতে সাহায্য করে।

📚 ঐতিহাসিক সাহিত্যিক প্রেক্ষাপট:

  • শারঙ্গদেবের সঙ্গীতরত্নাকর, ভরতের নাট্যশাস্ত্রচতুর্দণ্ডী প্রকাশিকা-য় রাগ সংজ্ঞা ও কাঠামো সংক্রান্ত বহু তথ্য আছে যা কামোদের মতো রাগ বুঝতে সাহায্য করে।
  • পুরন্দর দাসতানসেন এর মতো শিল্পীরা তাঁদের রচনায় এই রাগের ভাব ও প্রয়োগ ধরেছেন।

 

 

Google News Channel Logo

 

📖 তথ্যসূত্র:

  • শক্তিপদ ভট্টাচার্য, উচ্চাঙ্গ ক্রিয়াত্মক সঙ্গীত, নাথ ব্রাদার্স, ২২ সেপ্টেম্বর ১৯৮৭
  • বি. সুভ্রহ্মণ্যম, A Dictionary of South Indian Music and Musicians
  • কল্যাণ ঠাট রচনা সংকলন, ভারতীয় সঙ্গীত পরিষদ

Leave a Comment