রাগ কোমল আশাবরী হল ভৈরবী ঠাটের অন্তর্গত একটি রাগ, যা উত্তর ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে স্বতন্ত্র স্থানে অধিষ্ঠিত। এই রাগের চলন ও প্রকৃতিকে সঙ্গীতজ্ঞ সুরেশচন্দ্র চক্রবর্তী তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ রাগ-রূপায়ণ [প্রথম খণ্ড]-এ বিস্তারিতভাবে সংরক্ষণ করেছেন। রাগটি বর্তমানে কোমল আশাবরী নামেও পরিচিত।
রাগের মৌলিক চলন নিম্নরূপ:
প, দ, প, দ ম পদ র্স, ন দ প, প ণ দ ম প দ, ম
প দ ম প জ্ঞ, ঋ ঋ স
ঋ ণ্, স ঋ জ্ঞ ঋ, ম প দ প, দ ণ দ প, দ ম
প দ র্স, ণ র্স র্ম র্জ্ঞ, র্জ্ঞ , র্স, ঋ ণ র্স দ, প ণ দ প ম, প দ, ম জ্ঞ, ঋ ম প দ, প ণ দ, ম
এই চলনটি প্রাচীন আশাবরীর বিকৃত রূপের মতো হলেও, পরবর্তী সময়ে কোমল আশাবরীর আরোহণে শুদ্ধ ঋষভ স্বরের প্রবর্তন ঘটে। তখন আরোহণ ও অবরোহণ ছিল:
-
আরোহণ: স র, ম, প, দ, র্স
-
অবরোহণ: র্স ণ দ, প, ম জ্ঞ, ঋ স
এই রাগের ধ্বনি বৈশিষ্ট্য এবং স্বর বিন্যাসে ভৈরবী ঠাটের প্রভাব স্পষ্ট। স্বরবিন্যাসের মধ্যে ঋষভ, ধৈবত ও গন্ধার স্বরগুলির ব্যবহার রাগের আঙ্গিককে পূর্ণতা দিয়েছে।
রাগের প্রাত্যহিক বৈশিষ্ট্য:
-
ঠাট: ভৈরবী
-
জাতি: ঔড়ব-সম্পূর্ণ
-
বাদীস্বর (Vadi Swar): ধ
-
সমবাদী স্বর (Samvadi Swar): গ
-
অঙ্গ: উত্তরাঙ্গ
-
সময়: দিবা, দ্বিতীয় প্রহর
-
পকড়: সঋমপ, দপ, মজ্ঞঋস
রাগের চলনের ব্যাখ্যা
কোমল আশাবরী মূলত ভৈরবী ঠাটের সৌম্য আঙ্গিকে প্রতিষ্ঠিত। রাগের আরোহণ ও অবরোহণে স্বরের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে সঙ্গীতজ্ঞরা সহজে রাগের স্বরলীলায় প্রবেশ করতে পারেন। পকড় বা সংক্ষিপ্ত ধারা রাগের আবেগ ও আঙ্গিক প্রকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রাগের উচ্চাঙ্গ ও নিম্নাঙ্গে স্বরগুলির স্পর্শ, ধৈবত ও গন্ধারের ব্যবহার রাগের শুদ্ধতা এবং সঙ্গীতিক ভারসাম্য নিশ্চিত করে। পূর্বাঙ্গে স্বরের প্রয়োগ রাগের উদ্ভাসিত সুরের সূচনা করে, যেখানে উত্তরাঙ্গের ধ্বনি শ্রীবদ্ধ এবং আবেগপ্রবণ।
প্রসঙ্গ
বর্তমানে এই রাগটি তুলনামূলকভাবে কম প্রচলিত। তবে শাস্ত্রীয়ভাবে এর প্রাথমিক রূপ এবং আরোহণ-অবরোহণ সংরক্ষিত। রাগের ক্ষুদ্র প্রকৃতি সঙ্গীত শিক্ষার্থী ও গবেষক উভয়ের জন্য এটি গভীরভাবে অধ্যয়নযোগ্য।
সূত্র
-
উচ্চাঙ্গ ক্রিয়াত্মক সঙ্গীত – শক্তিপদ ভট্টাচার্য, নাথ ব্রাদার্স, ২২ সেপ্টেম্বর ১৯৮৭
-
মগনগীত ও তান মঞ্জরী (প্রথম খণ্ড) – চিন্ময় লাহিড়ী, ১৪ এপ্রিল ১৯৮৫
-
রাগ বিন্যাস (প্রথম কলি) – শ্রীশচীন্দ্র নাথ ভট্টাচার্য্য, এস. চন্দ্র এন্ড কোং, শারদীয়া সপ্তমী, সেপ্টেম্বর ১৯৭৬
-
রাগ রূপায়ণ (প্রথম খণ্ড) – সুরেশচন্দ্র চক্রবর্তী
-
সঙ্গীত শাস্ত্র (তৃতীয় খণ্ড) – শ্রীইন্দু ভূষণ রায়
-
हिन्दुस्थानी सङ्गीत पद्धति क्रमिक पुस्तक मालिका दुसरी पुस्तक – পণ্ডিত বিষ্ণুনারায়ণ ভাতখণ্ডে, এপ্রিল ১৯৫৪