রাগ কৌশিকী কানাড়া উত্তর ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত পদ্ধতিতে আশাবরী ঠাটের অন্তর্গত একটি বিশেষ রাগ। এটি মূলত গম্ভীর প্রকৃতির এবং গভীর ভঙ্গিমার জন্য পরিচিত। রাগাঙ্গের দৃষ্টিতে এটি কানাড়া শাখায় পড়ে, যা তার নিজস্ব স্বরসংগঠন ও ভাবের জন্য আলাদা করে চিহ্নিত। কৌশিকী কানাড়া রাগটি ঐতিহ্যবাহী ভঙ্গি ও উচ্চারণের মাধ্যমে শ্রোতাদের মুগ্ধ করে।
রাগের সঙ্গীত গঠন
-
আরোহণ (আরোহ): স (শব্দ) জ্ঞ (গন্ধার) ম (মধ্যম) দ (ধৈবত) ণ (কোমল ধৈবত) র্স (নিষাদ শুদ্ধ)
-
অবরোহণ (অবরোহ): র্স (নিষাদ শুদ্ধ) ন (পঞ্চম) দ (ধৈবত) ম (মধ্যম), প (পঞ্চম), জ্ঞ (গন্ধার), ম (মধ্যম) র (মধ্যম ও পন্চমের সংযোগ) স (ষাদজ)
-
ঠাট: আশাবরী
-
জাতি: ঔড়ব-সম্পূর্ণ (অর্থাৎ, आरोহণে ঔড়ব এবং অবরোহণে সম্পূর্ণ স্বর ব্যবহৃত)
-
বাদী স্বর: মধ্যম (ম)
-
সমবাদী স্বর: ষড়্জ (পঞ্চম)
-
অঙ্গ: পূর্বাঙ্গ (রাগের মূল অংশের ভিত্তি পূর্বাঙ্গে)
-
সময়: মধ্যরাতের সময়ে এই রাগের সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়, কারণ এটি গভীর ভাবপ্রকাশ ও ধ্যানমূলক পরিবেশ সৃষ্টি করে।
-
পকড়: জ্ঞম দম, প, জ্ঞমরস
রাগের বৈশিষ্ট্য ও ব্যবহার
রাগ কৌশিকী কানাড়া গম্ভীর এবং স্থির প্রকৃতির। এটি সাধারণত বিষাদের রং বহন করে এবং শ্রোতাকে গভীর ভাবনায় নিমজ্জিত করে। এই রাগে উচ্চারণের মধ্যে বেশ মৃদু ও নম্রতা থাকে, যা একধরনের রহস্যময় এবং মায়াময় পরিবেশ তৈরি করে।
উত্তর ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে কানাড়া রাগ পরিবার একাধিক রাগকে ধারণ করে, যার মধ্যে কৌশিকী কানাড়া অন্যতম। এই রাগে মধ্যম স্বরের গুরুত্ব বিশেষ, যা গম্ভীরতার মাত্রা বৃদ্ধি করে।
সংস্কৃতি ও রচনায় কৌশিকী কানাড়া
কৌশিকী কানাড়া রাগের ব্যবহার বিভিন্ন শাস্ত্রীয় গানে এবং আধুনিক সঙ্গীতেও দেখা যায়। বিশেষত, বাংলার জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের গানে এই রাগের ব্যবহার লক্ষণীয়। তার এক প্রসিদ্ধ গান “শ্মশান কালীর নাম শুনে রে” মিশ্র কৌশিকী কানাড়া রাগে রচিত, যা এই রাগের গভীরতা ও শোকাবহ আবেগকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করে।
আরও কিছু তথ্য
-
কৌশিকী কানাড়া মূলত মাধুর্য ও শীতলতার রাগ, যা রাগ কৌশিকী কানাড়া কে তার নিজস্ব মেজাজ প্রদান করে।
-
এই রাগে ব্যবহারকৃত ধৈবত (দ) ও নিষাদ (নি) স্বরগুলো মাঝে মাঝে বিশেষত অবরোহে বক্রভাবে ব্যবহৃত হয়, যা এর গম্ভীরতা বৃদ্ধি করে।
-
রাগের সংগীত রচনা ও পরিবেশন প্রায়শই ধ্যানমগ্ন ও গভীর ভাবের সাথে সম্পর্কিত।
রাগ কৌশিকী কানাড়া উত্তর ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের একটি মূল্যবান রাগ, যা তার গম্ভীর এবং মায়াময় সুরের কারণে শ্রোতাদের হৃদয়ে গভীর ছাপ ফেলে। এটি রাতের নিস্তব্ধতায় শ্রবণীয় একটি রাগ, যা দার্শনিক চিন্তা ও আবেগকে উদ্দীপ্ত করে। কাজী নজরুল ইসলামের গানসমূহে এই রাগের ব্যবহার তাৎপর্যপূর্ণ, যা বাংলা সঙ্গীতের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে।
আরও পড়ুন: