রাগ চন্দ্রকোষ

রাগ চন্দ্রকোষ উত্তর ভারতীয় সঙ্গীত পদ্ধতিতে ভৈরবী ঠাটের অন্তর্গত একটি বিশেষ রাগ। এটি সাধারণত বাজনার শেষ পর্যায়ে কিংবা কর্ণাটিক সঙ্গীতের হালকা উপস্থাপনায় ব্যবহার করা হয়। যখন রাগ মালকোষের কোমল নিষাদ শুদ্ধ নিষাদ দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়, তখন রাগ চন্দ্রকোষ সৃষ্টি হয়। এই রাগের শুদ্ধ নিষাদ শুধু রাগ মালকোষ থেকে এর পার্থক্য তৈরি করে না, বরং শ্রোতাদের মনে একটি স্থায়ী ও অনন্য ছাপ ফেলে। রাগ চন্দ্রকোষে শুদ্ধ নিষাদ একটি গুরুত্বপূর্ণ নোট, যা পরিবেশে উদ্বেগ ও উত্তেজনার সঞ্চার করে।

রাগ চন্দ্রকোষ

 

Music Gurukul Logo 512x512

 

কিছু বিশেষজ্ঞ এই রাগ থাটকে ভৈরবী বা কাফি হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করেছেন। এটি একটি উত্তরং প্রধান রাগ। চন্দ্রকৌন্স নামটি “চন্দ্র” অর্থ চাঁদ থেকে উদ্ভূত হয়েছে এবং “কাউনস” শব্দটি অস্পষ্ট যদিও প্রায়ই অদুভ (পেন্টাটোনিক) রাগগুলির জন্য ব্যবহৃত হয়। আসলে চন্দ্রকৌঁসের দুটি সংস্করণ রয়েছে: একটি পুরোনো এবং অপ্রচলিত, আর একটি আধুনিক। আধুনিক সংস্করণটি একটি আড়ব প্রকৃতির রাগ, যা কিছুটা পরিবর্তন করলে মালকৌঁসের কাছাকাছি হয়ে যায়। চন্দ্রকৌঁসে নিষাদ কোমলের পরিবর্তে শুদ্ধ ব্যবহৃত হয়। এই পরিবর্তনটি রাগটিতে উদ্বেগ এবং উত্তেজনাপূর্ণ একটি পরিবেশ সৃষ্টি করে, যা চন্দ্রকৌঁসকে এত আকর্ষণীয় এবং সুন্দর করে তোলে। এই উত্তেজনা সঙ্গীতশিল্পীকে ত্বরা ও ক্ষোভ সহ নানা রকমের অনুভূতি প্রকাশে সাহায্য করতে পারে।

এই রাগটি যদি মধ্য অষ্টক এবং উপরের অষ্টকের উচ্চ অংশে গাওয়া বা বাজানো হয়, তাহলে এটি আবেগের আবেদনকে আরও তীব্র করে তোলে। এটি একটি রাত্রিকালীন রাগ, যা সাধারণত রাত দশটা থেকে মধ্যরাতের মধ্যে পরিবেশিত হয়। চন্দ্রকৌঁসের আবেগময় সুর শ্রোতার মধ্যে সূক্ষ্ম রোমান্স, একাকীত্ব এবং আকাঙ্ক্ষার অনুভূতি জাগাতে পারে। এই রাগটি শ্রিংগার (রোমান্টিক) রসের পাশাপাশি ভক্তি (ভক্তিমূলক) রসের মাধ্যমে ঈশ্বরের প্রতি নিবেদনও প্রকাশ করতে সক্ষম।

 

 

Google news

 

শুধুমাত্র পাঁচটি স্বর হলেও এই রাগটি গভীর ও বিশদ রাগগুলির মধ্যে একটি। এজন্য রাগটি খুব ধীরে সুস্থে দীর্ঘ করে বাজানো কঠিন। এই রাগটি ঠিকমতো ফোটাতে অলঙ্কার (অলঙ্করণ) এবং শ্রুতির পারদর্শী ব্যবহার প্রয়োজন। এই রাগটি ফোটাতে ধীরগতির এবং শান্তিপূর্ণ পারফরম্যান্স জরুরী। তাড়াহুড়ো করলে এর গভীরতা ও সৌন্দর্য নষ্ট হতে পারে।

চন্দ্রকৌন্স “নাভি” সক্রিয় করতে সহায়ক, যা “মণিপুরা চক্র” নামেও পরিচিত। এটি নাভির পেছনে অবস্থিত এবং আপনার শক্তি ও আত্মবিশ্বাসের মূল কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। সংস্কৃত ভাষায়, “নাভি” মানে নাভি এবং “মণিপুরা” মানে উজ্জ্বল রত্ন। এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত গুণাবলী পাচনতন্ত্র এবং মধ্যচ্ছদা শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। “সৌর প্লেক্সাস চক্র” নামেও পরিচিত এই চক্রটি বিপাকীয় শক্তি ও স্বায়ত্তশাসনের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। রাগ থেরাপিতে, চন্দ্রকৌন্স ইনসুলিন নিঃসরণকে উদ্দীপিত করতে সহায়ক বলেও পরিচিত।

 

রাগের কারিগরি প্যারামিটার:

আরোহণ: স জ্ঞ প দ ন র্স
অবরোহণ : র্স ন দ ম জ্ঞ স।
ঠাট : ভৈরবী

জাতি : ঔড়ব-ঔড়ব (ঋষভ ও পঞ্চম বর্জিত)।
বাদীস্বর : মধ্যম
সমবাদী স্বর : ষড়্‌জ
অঙ্গ : পূর্বাঙ্গ।
সময় : মধ্যরাত।
পকড় : জ্ঞম, জ্ঞস ন্ স দ্‌ন্ স।

 

রাগ চন্দ্রকোষ

 

তথ্যসূত্র:
উচ্চাঙ্গ ক্রিয়াত্মক সঙ্গীত। শক্তিপদ ভট্টাচার্য। ১৫ এপ্রিল ১৯৮৩।

 

আরও দেখুন:

Leave a Comment