রাগ বিভাস ভারতীয় সঙ্গীত পদ্ধতিতে একটি রাগ বিশেষ। এই রাগটি চারটি ঠাটে পাওয়া যায়। এই ঠাট ৪টি হলো– পূরবী, বিলাবল, ভৈরব ও মারবা।
রাগ বিভাস
১. পূরবী অঙ্গের বিভাস
সঙ্গীত পারিজাত-এ এই রাগের উল্লেখ আছে। তাই ধারণা করা হয়, এটি বেশ প্রাচীন রাগ। ভৈরব ঠাটের বিভাসে মধ্যম ব্যবহৃত হয় না। সম্ভবত এই কারণে ভৈরব ঠাটের এই রাগকেও আগে পূরবী ঠাটের বিভাস বলা হতো। কিন্তু ভৈরব ঠাটের বিভাসে ভৈরবের অনুরূপ আস্বাদন পাওয়া যায় বলে- একে এখন ভৈরব ঠাটের বিভাসই বলা হয়। এটি সন্ধ্যা বেলার রাগ। এতে আরোহণে গান্ধার ও নিষাদ বর্জিত। বর্তমানে এই রাগটি প্রায় অপ্রচলিত হয়ে গেছে।
আরোহণ: স ঋ হ্ম প দ র্স
অবরোহণ : র্স ন দ প হ্ম গ ঋ স
ঠাট : পূরবী
জাতি : ঔড়ব-সম্পূর্ণ
বাদীস্বর : দ
সমবাদী স্বর : ঋ
অঙ্গ : উত্তরাঙ্গ।
সময় : সন্ধ্যাকালীন রাগ।
তথ্য সূত্র :
রাগ-রূপায়ণ। সুরেশচন্দ্র চক্রবর্তী। জেনারেল প্রিন্টার্স য়্যান্ড পাব্লিশাসার্স প্রাইভেট লিমিটেড। ?।
সংগীত পরিচিতি (উত্তরভাগ)। শ্রীনীলরতন বন্দ্যোপাধ্যায়। ৪ঠা এপ্রিল, ১৯৭৯।
২. বিলাবল অঙ্গের বিভাস
এই বিভাস মূলত বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলের রাগ। বাংলার বাইরে এই রাগ প্রচলিত নেই। অখণ্ড বাংলায় এক সময় এই রাগ ধ্রুপদে ব্যবহার হতো। অনেকে মনে করেন এই রাগের ভিতর বাংলা লোকসঙ্গীতের সৌরভ পাওয়া যায়। এই কারণে বাংলাদেশে এই রাগ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। বিলাবল ঠাটের দেশকার রাগের সাথে এই রাগের বেশ মিল আছে। মূলত দেশকার রাগের অবরোহে নিষাদ প্রয়োগ করলে বিলাবল ঠাটের বিভাস পাওয়া যায়। বাংলাদেশে প্রচলিত এই রাগটি মূলত বিষ্ণুপুর ঘরানার রাগ হিসাবে চিহ্নিত হয়ে থাকে। রবীন্দ্রনাথ এই রাগে যে কয়টি গানে ব্যবহার করেছেন তার অধিকাংশই বাউল ও কীর্তনাঙ্গের। ধ্রুপদাঙ্গের গান রয়েছে মাত্র দুটি। গান দুটো হলো- ‘ওঠো ওঠো রে’ এবং জাগ্রত বিশ্বকোলাহল মাঝে।
অবরোহণে নিষাদ স্বরটি প্রযুক্ত হওয়ায়, এই রাগটিতে সকাল বেলার আমেজ পাওয়া যায়।
আরোহণ: স র গ প ধ র্স
অবরোহণ : র্স ন ধ প গ র স
ঠাট : বিলাবল
জাতি : ঔড়ব-ষাড়ব
বাদীস্বর : ধ
সমবাদী স্বর : গ
সময় : দিবা প্রথম প্রহর
তথ্য সূত্র :
রাগ-রূপায়ণ। সুরেশচন্দ্র চক্রবর্তী। জেনারেল প্রিন্টার্স য়্যান্ড পাব্লিশাসার্স প্রাইভেট লিমিটেড। ?।
রাগাঙ্কুর। শ্রীপ্রফুল্লকুমার দাস। [?]
৩. ভৈরব অঙ্গের বিভাস
এটি ভৈরব ঠাটের রাগ। এই রাগে মধ্যম ও নিষাদ বর্জিত। প্রভাতের রাগ হিসাবে একে সন্ধিপ্রকাশ রাগ বলা হয়। এর প্রকৃতি শান্ত ও গম্ভীর। কিন্তু মধ্য ও তার সপ্তকে এর বিস্তার বেশি হয়। এই রাগে গান্ধার ও পঞ্চমের স্বরসঙ্গতি বিশেষ মাধুর্যপূর্ণ হয়।
আরোহণ: স ঋ গ প দ র্স
অবরোহণ : র্স দ প গ ঋ স
বা- র্স দ প, গ প দ প, গ ঋ স
ঠাট : ভৈরব
জাতি : ঔড়ব-ঔড়ব
বাদীস্বর : ধ
সমবাদী স্বর : (মতান্তরে গ)
সময় : দিবা প্রথম প্রহর (প্রাতঃকাল)
তথ্য সূত্র :
রাগ-রূপায়ণ। সুরেশচন্দ্র চক্রবর্তী। জেনারেল প্রিন্টার্স য়্যান্ড পাব্লিশাসার্স প্রাইভেট লিমিটেড। ?।
সঙ্গীত শাস্ত্র (তৃতীয় খণ্ড)। শ্রীইন্দু ভুষণ রায়। ৩০ আষাঢ়, ১৩৮৭।
সংগীত পরিচিতি (উত্তরভাগ)। শ্রীনীলরতন বন্দ্যোপাধ্যায়। ৪ঠা এপ্রিল, ১৯৭৯।
৪. মারবা অঙ্গের বিভাস
মারবা ঠাটের রাগ। এটি একটি গম্ভীর প্রকৃতির রাগ। তবে গান্ধার ও পঞ্চমের স্বরসঙ্গতি লক্ষণীয়। এটি প্রাতঃকালের সন্ধিপ্রকাশ রাগ হিসাবে বিবেচিত হয়। কারো কারো মতে এই রাগটি দেশকার ও গৌরীর মিশ্রণে সৃষ্টি হয়েছিল।
আরোহণ : স ঋ স গ প ধ প ধ র্স
অবরোহণ : র্স ন ধ প হ্ম- প গা ঋ স
অবরোহণ : মারবা
জাতি : ঔড়ব-সম্পূর্ণ (আরোহণে মধ্যম ও নিষাদ বর্জিত)
বাদীস্বর : ধ
সমবাদী স্বর: ঋ
সময় : দিবা প্রথম প্রহর (প্রাতঃকাল)
চলন: স ঋ গ, ঋ স, ন্ ধ্ স, স ঋ গ ঋ স, স ঋ গ হ্ম গ হ্ম গ প ধ, ধ প, প গ ঋ স
তথ্য সূত্র :
- মারিফুন্নাগমাত। রাজা নওয়াব আলী খান। অনুবাদ মকসুদুর রহমান হিলালী। বাঙলা একাডেমী বর্ধমান হাউস। ঢাকা।
- রাগ-রূপায়ণ। সুরেশচন্দ্র চক্রবর্তী। জেনারেল প্রিন্টার্স য়্যান্ড পাব্লিশাসার্স প্রাইভেট লিমিটেড। ?।
- নজরুল যখন বেতারে। আসাদুল হক
- সংগীত পরিচিতি (উত্তরভাগ)। শ্রীনীলরতন বন্দ্যোপাধ্যায়। ৪ঠা এপ্রিল, ১৯৭৯।
আরও পড়ুন: