রাগ ভৈরব বাহার উত্তর ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের একটি মিশ্র রাগ, যা মূলত ভৈরব ও বাহার—এই দুটি রাগের সংমিশ্রণে গঠিত। এই রাগকে সাধারণত মিশ্র ঠাট (ভৈরব–কাফি)-এর অন্তর্ভুক্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
সংগঠন ও বৈশিষ্ট্য
উপাদান | বিবরণ |
ঠাট | মিশ্র (ভৈরব-কাফি) |
জাতি | সম্পূর্ণ-সম্পূর্ণ |
আরোহণ | স ঋ গ ম প, ম ধ ণ র্ স |
অবরোহণ | র্ স ণ ধ প ম গ র, জ্ঞ ঋ স, ন ঋ স |
বাদী স্বর | মধ্যম |
সমবাদী স্বর | ষড়্জ |
অঙ্গ | পূর্বাঙ্গে ভৈরব, উত্তরাঙ্গে বাহার |
সময় | প্রাতঃকাল (সকালবেলা পরিবেশনের জন্য উপযুক্ত) |
পকড় | ধ ণ ধ প, ম গ র, জ্ঞ ঋ স |
রাগের বৈশিষ্ট্য
- পূর্বাঙ্গে (রাগের প্রথমার্ধে) ভৈরব রাগের ছায়া স্পষ্ট, যেখানে ঋষভ ও ধৈবত কোমল সুরে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, স ঋ গ ম, প ম গ ম ঋ।
- উত্তরাঙ্গে (পরবর্তী অংশে) বাহার রাগের বৈচিত্র্য মেলে, যেমন: ধ ণ ধ প ম ধ ণ র্ স।
- বিশেষ পকড় বা স্বরবিন্যাস রাগের পরিচিতিকে সূচিত করে: ধ ণ ধ প, ম গ র, জ্ঞ ঋ স।
শ্রুতিমাধুর্য ও রস
রাগ ভৈরব বাহার এক অনন্য আবহ তৈরি করে, যা ভৈরব রাগের গম্ভীরতা এবং বাহার রাগের প্রফুল্লতার সংমিশ্রণে এক ধরনের ভাবগম্ভীর মাধুর্য প্রকাশ করে। এটি মূলত ভোরবেলা পরিবেশিত হয়, যখন প্রকৃতির শান্ত ও নির্মল সৌন্দর্যের সঙ্গে এর ভাব সঙ্গতিপূর্ণ হয়।
অতিরিক্ত প্রাসঙ্গিক তথ্য
- এই রাগে অলঙ্কার (আলংকারিক চলন) ও গৎ (বাঁধা বন্দিশ) গানে ভৈরব ও বাহার রাগের দ্বৈত অনুভব পাওয়া যায়, যা একে অনন্য করে তোলে।
- রাগ ভৈরব বাহার সাধারণত ধ্রুপদ, খেয়াল, ঠুমরি ও উপশাস্ত্রীয় ধারায় পরিবেশিত হয়।
- গায়কী ও বাদ্যশিল্প উভয় ক্ষেত্রেই এই রাগের পরিবেশনা পাওয়া যায়, তবে উচ্চাঙ্গ বাদ্যযন্ত্রে (যেমন সরোদ, সেতার) এটি বিশেষভাবে আকর্ষণীয়।
তথ্যসূত্র
- উচ্চাঙ্গ ক্রিয়াত্মক সঙ্গীত, শক্তিপদ ভট্টাচার্য, নাথ ব্রাদার্স, ২২ সেপ্টেম্বর ১৯৮৭।