রাগ মধুবন্তী (বা অম্বিকা) উত্তর ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের টোড়ি ঠাটের অন্তর্গত একটি গুরুত্বপূর্ণ রাগ। এটি স্বভাবতই একটি ক্ষুদ্র প্রকৃতির রাগ, যার মাধুর্য ও কোমলতা শ্রোতাদের মনে এক অনুপম অনুভূতি সৃষ্টি করে। রাগটির মধ্যে দিনের শেষভাগের নরম আবহ এবং সূর্যাস্তের কোমল রঙ যেন মূর্ত হয়ে ওঠে। মধুবন্তী মূলত একটি দিবাকালীন রাগ, যার পরিবেশন সময় হলো দিবা চতুর্থ প্রহর — অর্থাৎ দুপুরের পরের সময়কাল।
Table of Contents
রাগের বৈশিষ্ট্য
বিষয় | বিবরণ |
---|---|
ঠাট | টোড়ি |
জাতি | ঔড়ব-সম্পূর্ণ (আরোহে ৫ স্বর, অবরোহে ৭ স্বর) |
বাদী স্বর | পঞ্চম (প) |
সমবাদী স্বর | ষড়্জ (স) |
অঙ্গ | পূর্বাঙ্গ-প্রধান |
পরিবেশনের সময় | দিবা চতুর্থ প্রহর (বিকাল) |
সুরের গঠন
রাগ মধুবন্তীর আরোহণ ও অবরোহণের মধ্যে একটি বিশেষ সংযম ও সৌন্দর্য লক্ষ্য করা যায়। রাগটি পরিবেশন করার সময় কোমল নিষাদ (নি) ব্যবহৃত হয়ে থাকে, যা রাগের রসিকতা ও আবেগকে গভীরতা দেয়। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, রাগের আরোহণে কোমল নিষাদ ব্যবহৃত হয়, কিন্তু অবরোহণে মূলত শুদ্ধ নিষাদই ব্যবহৃত হতে পারে কিছু পরিবেশন প্রথায়।
আরোহণ (Ascending Scale):
ন্ স গ হ্ম প ন র্স
অবরোহণ (Descending Scale):
র্স ন দ প হ্ম গ র্স
এখানে “হ্ম” (মা#) নির্দেশ করে তীব্র মধ্যমের ব্যবহার।
পকড় (Signature Phrase):
ন্ স গ হ্ম প, হ্ম গ র্স
এই বিশেষ সঙ্গীতীয় চলন রাগের পরিচিতি নির্ধারণ করে।
রাগের স্বরপ্রয়োগ ও চলন
রাগ মধুবন্তীতে তীব্র মধ্যম (হ্ম) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কোমল নিষাদ (ন্) আরোহে ব্যবহৃত হয় রাগের শ্রী বৃদ্ধির জন্য।
পঞ্চম (প) বাদী স্বর হিসেবে প্রাধান্য পায়, যা রাগটির মূল শক্তি ও আবরণ তৈরি করে।
ষড়্জ (র্স) সমবাদী স্বর হিসেবে রাগে সুষমতা আনে।
রাগের চলন পূর্বাঙ্গ-প্রধান, অর্থাৎ মূখ্য সংগীতগতি মধ্য সপ্তকের প্রথমার্ধে কেন্দ্রীভূত থাকে।
রাগ মধুবন্তী ও রাগ মুলতানী
মধুবন্তী এবং মুলতানী রাগ দুটি প্রকৃতিগতভাবে পরস্পর ঘনিষ্ঠ। উভয় রাগেরই পরিবেশন সময় এবং টোড়ি ঠাটে অন্তর্ভুক্তি একই হলেও, মধুবন্তীতে অধিক কোমলতা এবং নরম আবহ থাকে, যেখানে মুলতানী কিছুটা গুরুগম্ভীর মেজাজ ধারণ করে। বিশেষ করে মধুবন্তীতে কোমল নিষাদ এবং তীব্র মধ্যমের সূক্ষ্ম প্রয়োগ রাগের চাঞ্চল্য এবং মাধুর্য বৃদ্ধি করে, যা মুলতানী থেকে আলাদা করে।
শ্রবণ অভিজ্ঞতা
রাগ মধুবন্তী যখন দক্ষ শিল্পীদের দ্বারা পরিবেশিত হয়, তখন এটি এক অভূতপূর্ব কোমলতা এবং গভীর আবেগ সৃষ্টি করে। প্রথমদিকে ধীর আলাপের মাধ্যমে রাগটি তার চরিত্র মেলে ধরে, তারপর ধীরে ধীরে দ্রুত লয় এবং তান অংশে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। বিখ্যাত শিল্পী যেমন পণ্ডিত ভীমসেন যোশী, পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী, পণ্ডিত যশরাজ প্রমুখরা মধুবন্তীর অপূর্ব পরিবেশন করেছেন।
সংক্ষেপে বিশেষ বৈশিষ্ট্য
দিক | বিশ্লেষণ |
---|---|
মূল ভাব | কোমল মাধুর্য ও আবেগ |
পরিবেশনের ধরন | ধীর আলাপ থেকে দ্রুত তান পর্যন্ত |
বিশেষ স্বর | কোমল নিষাদ, তীব্র মধ্যম |
সংগীতশৈলী | মধুর, কোমল, সূক্ষ্ম ছায়াময়তা |

রাগ মধুবন্তী তার কোমলতা, সুষমতা এবং সূক্ষ্ম রসিকতার জন্য উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। এই রাগের মাধ্যমে সুরকাররা দিনের শেষভাগের প্রশান্তি এবং অন্তর্দৃষ্টির মুহূর্তগুলো অনুপমভাবে প্রকাশ করেন। নতুন সঙ্গীত শিক্ষার্থীদের জন্যও মধুবন্তী এক অনন্য শিক্ষা ও অনুশীলনের ক্ষেত্র, যেখানে তারা সুরের মাধুর্য এবং সূক্ষ্ম ভঙ্গিমার মেলবন্ধন শিখতে পারে।
আরও দেখুনঃ