Site icon সঙ্গীত গুরুকুল, GOLN

শিল্পী শ্রীনিবাস । শিল্পী জীবনী

আনুমানিক সপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগে নরপতিপুরের কাছাকাছি কোন এক স্থানে শিল্পী শ্রীনিবাসের জন্ম হয়। তবে নরপরিতপুর যে ঠিক কোথায় অবস্থিত তাহা সঠিকভাবে আজও জানা যায় নাই।

শিল্পী শ্রীনিবাস । শিল্পী জীবনী

 

 

“রাগতত্ত্ব বিবোধ” গ্রন্থের স্রষ্টা হিসাবেই আমরা শিল্পী শ্রীনিবাসের পরিচয় পাই। এতদিভিন্ন তাঁহার ব্যবহারিক জীবনের সকল প্রকার তথ্য আজ সম্পূর্ণ অজ্ঞাত। যদিও দু একটি কাহিনী শ্রীনিবাস সমন্ধে প্রচলিত আছে, তাহা যে এক কল্পনাবিলাসীর কল্পনাপ্রসূত ছাড়া আর কিছুই নয় তাহা সহজেই অনুমেয়। তবে পাঠক পাঠিকার জ্ঞাতার্থে শ্রীনিবাস সমন্ধে প্রচলিত একটি ঘটনার অবতারণা করিতেছি-যতটুকু জানা যায় শ্রীনিবাস সে বাল্যকাল হইতেই সঙ্গীত তথা সঙ্গীত বিষয়ক ঔপপত্তিক বিষয়ে যথেষ্ট আগ্রহশীল ছিলেন।

ফলে যেখানে সে শাস্ত্রীয় গ্রন্থ দেখিতেন বা সংগ্রহ করিতেনে তাহা কুক্ষিগত করার জন্য সংগৃহীত গ্রন্থ আর ফেরৎ দিতেন না, ফলে অচিরেই তাঁহার নিকট অমূল্য গ্রন্থের ভাণ্ডার সৃষ্টি হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, আকস্মিক অগ্নিকাণ্ডে তাঁহার এই করুণ অবস্থায় উপশম হেতু ব্যঙ্কট রাজা দাক্ষিণাত্যের একজন গুনী পণ্ডিতের দ্বারা প্রায়শ্চিত্ত করাইয়া অনেক কষ্টে তাঁহার পূর্বাবস্থা ফিরাইয়া আনিতে সক্ষম হন।

শ্রদ্ধেয় সঙ্গীতবিদ ডা: বিমল রায় বলিয়াছেন, “অজ্ঞাত পরিচয় শ্রীনিবাস সমন্ধে দু’একটি কাহিনী কোথাও প্রচলিত দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু যেখানে এর জন্মকাহিনী জন্মস্থান সমন্ধেই আমরা অজ্ঞ, যেখানে কাহিনী যে নিতান্তই কল্পনাপ্রসূত তা বুঝতে দেরী হয় না। গ্রন্থের মাধ্যমে শ্রীনিবাসাকে যতটুকু আবিষ্কার করলাম তার বেশী এর সমন্ধে জানি না, শুধু অনুমান করে নিতে পারি, ইনি উত্তর ভারতীয় এবং বাংলার কাছাকাছি কোন স্থানের অধিবাসী ছিলেন।

 

গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

শ্রীনিবাসের জীবিতকাল ১৭শ শতাব্দীর শেষ ভাগ বলে ধরে নেওয়া চলে”। (ভারতীয় সঙ্গীত প্রসঙ্গ)। রাগতত্ত্ব বিবোধ গ্রন্থটি অহোবলের “সঙ্গীত পারিজাত” গ্রন্থটিকেই অনুসরণ করে লেখা হইয়াছে, তবে ইহাতে শ্রীনিবাসের নিজের কিছুও সৃষ্টি আছে। এই গ্রন্থে “সঙ্গীত পারিজাত” গ্রন্থে নাই এমন কিছু কিছু গমকের নাম উল্লেখ আছে যেমন পূর্বাহত, হতাহত, তারাহত প্রভৃতি। এগুলি তাঁর নিজস্ব।

তাহা ছাড়া রাগরূপ প্রকাশ ধাতুগুলির তিনি নতুন নামকরণ করিয়াছেন যেমন উদগ্রহ, স্থায়ী, সঞ্চারী, মুক্তায়ী বা সমাপ্তি। ইহা ছাড়া অহোবলের মতন বীণার সাহায্যে শুদ্ধ ও বিকৃত স্বর নির্ণয় করিয়াছেন। মেলকে রাগ উৎপন্ন করিবার মতো স্বর সমষ্টি বলিয়াছেন। রাগের সম্পূর্ণ, ষাড়ব, ঔড়ব প্রভৃতি বর্ণনা করিয়া বলিয়াছেন যে, বিকৃত স্বরও মেলের মধ্যে যুক্ত হয়। প্রাচীন রীতির মতো মূর্ছনার নামগুলি ঠিক থাকিলেও ষড়জ গ্রামের মূর্ছনাই শুধু প্রচলিত।

যদিও উত্তর ভারতে ঠাট পদ্ধতি প্রয়োগের সঙ্গে মূর্ছনার কোন প্রয়োজন হয় নাই কিন্তু কর্ণাটক সঙ্গীতে আজিও আরোহ-অবরোহী বোঝার জন্য মূর্ছনার প্রয়োজন হইয়া থাকে। শ্রুতি নির্ণয় সমন্ধে উত্তরসুরীদের সহিত একমত হইলেও মোটামুটি ১২টি স্বরই তিনি ব্যবহার করিয়াছেন। (“ভারতীয় সঙ্গীত ইতিহাস ও পদ্ধতি” সুকুমার রায়।)

 

 

আরও দেখুনঃ

Exit mobile version