শ্যামল গুপ্ত বিংশ শতকের শেষার্ধের আধুনিক বাংলা রোমান্টিক গানের কিংবদন্তি গীতিকার সুরকার ও সঙ্গীত শিল্পী। বিশ শতকের পাঁচের দশক থেকে সত্তর দশক অবধি বাংলা গানের জনপ্রিয় গীতিকার হিসেবে যাঁরা খ্যাতির মধ্যগগনে ছিলেন তিনি তাঁদের অন্যতম । সে সময়ের স্বর্ণযুগের আধুনিক বাংলা গান ছাড়াও আকাশবাণীর রম্যগীতি, রাগাশ্রয়ী গান, লঘুসংগীত এবং বাংলা ছায়াছবির অসংখ্য কালজয়ী গান রচনায় তিনি তার উজ্জ্বল প্রতিভার সাক্ষর রেখে গেছেন।
Table of Contents
শ্যামল গুপ্ত । বাঙ্গালি গীতিকার সুরকার ও সঙ্গীত শিল্পী
জন্ম ও শিক্ষা জীবন
শ্যামল গুপ্তের জন্ম ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ৩ ডিসেম্বর বৃটিশ ভারতের কলকাতায়। পৈতৃক আবাস ছিল বিহারের জামালপুরে। অবশ্য আদি বাসস্থান ছিল বর্তমান উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার হালিশহরে। তার পিতামহ ও পিতা মুঙ্গের কোর্টের আইনজীবী ছিলেন। শ্যামল গুপ্তের পড়াশোনা কলকাতায় স্কটিশ চার্চ স্কুল ও কলেজে। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে সেন্ট জেভিয়ার’স কলেজ, কলকাতা থেকে রসায়নশাস্ত্রে অনার্সসহ স্নাতক হন।
কর্মজীবন
স্নাতক হওয়ার পর প্রথমে মহারাষ্ট্রের পুণায় ভারত সরকারের মিলিটারি এক্সপ্লোসিভ ল্যাবরেটরিতে রসায়নাগরিক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। কিন্তু ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ইস্তফা দিয়ে কলকাতায় চলে আসেন। এক বৎসর বিজ্ঞাপনের কপি লেখার কাজ নেন। এরপর পুরোদস্তুর লেখালেখির কাজে আত্মনিয়োগ করেন।
সঙ্গীত জীবন
সঙ্গীত জীবনে তার প্রথম আবির্ভাব গায়ক হিসাবে। হিজ মাস্টার্স ভয়েস গ্রামোফোন কোম্পানিতে তিনটি গানের রেকর্ড করেন। তারপর গান গাওয়া ছেড়ে গান লেখা শুরু করেন এবং সেই সাথে চলচ্চিত্রে চিত্রনাট্য ও সংলাপ রচনাতেও মনোনিবেশ করেন।’বধূবরণ’ ও ‘পুতুলঘর’ ছায়াছবির কাহিনিকার ও চিত্রনাট্যকার ছিলেন তিনি।
তারাপদ চক্রবর্তীর শিষ্য মণি ঘোষের কাছে মার্গ সঙ্গীতের প্রাথমিক পাঠ নেন। তবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শেষসপ্তক’ কবিতাগুচ্ছ তার গান রচনার মূল প্রেরণা। তিনি কবিতা লিখেছেন ‘অরণি’ ‘অভ্যুদয়’ ‘একক’ প্রভৃতি পত্রিকায়। ছোটগল্প লিখেছেন ‘বসুমতী’ ও ‘সত্যযুগ’ পত্রিকায়।
তার রচিত গানের সংখ্যা প্রায় দু-হাজার। তার মধ্যে চলচ্চিত্রের জন্য লেখা গানের সংখ্যা প্রায় তিনশো। তার প্রকাশিত গীত সংকলন – ‘আধুনিক গান’প্রকাশিত হয় ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে। ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে বিবাহ করেন।
তার লেখা গান গেয়েছেন সেকালের প্রায় সব খ্যাতনামা শিল্পীই। জগন্ময় মিত্র, যূথিকা রায়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়, লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোঁসলে, সুপ্রীতি ঘোষ, রমা দেবী, ইলা বসু, গায়ত্রী বসু, বাণী ঘোষাল, আলপনা বন্দ্যোপাধ্যায়, কল্পনা মুখোপাধ্যায়, আরতি মুখোপাধ্যায়, নির্মলা মিশ্র, উৎপলা সেন, ললিতা ধরচৌধুরী, মাধুরী চট্টোপাধ্যায়, বনশ্রী সেনগুপ্ত, কৃষ্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, হৈমন্তী শুক্লা, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, তালাত মাহমুদ, শৈলেন মুখোপাধ্যায়, ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, পিন্টু ভট্টাচার্য, তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়, আব্দুল জব্বার,অনুপ ঘোষাল প্রমুখ স্বনামধন্য শিল্পীদের সুললিত কণ্ঠ-মাধুর্যে কালজয়ী হয়েছে তার গানগুলি।
সম্মাননা
তপন সিংহ পরিচালিত ‘হারমোনিয়াম’ চলচ্চিত্রের জন্য গান লিখে তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পুরস্কার লাভ করেন।
জীবনাবসান
কিংবদন্তি গীতিকার ও কবি শ্যামল গুপ্ত ২০১০ খ্রিস্টাব্দের ২৮ জুলাই ৮৮ বৎসর বয়সে কলকাতায় পরলোক গমন করেন।
আরও দেখুনঃ