Site icon সঙ্গীত গুরুকুল, GOLN

সংগীত কি এবং মানবজীবনে সংগীতের প্রয়োজনীয়তা | প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়

সংগীত কি এবং মানবজীবনে সংগীতের প্রয়োজনীয়তা | প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়

ক্লাস : সংগীত কি এবং মানবজীবনে সংগীতের প্রয়োজনীয়তা, পর্যায় : প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়

 

সংগীত কি এবং মানবজীবনে সংগীতের প্রয়োজনীয়তা

সংগীত কি

সঙ্গীত দ্বারা গীত, বাদ্য, নৃত্য এই তিনটি বিষয়ের সমাবেশকে উল্লেখ করা হয়। গীত এক ধরনের শ্রবণযোগ্য কলা যা সুসংবদ্ধ শব্দ ও নৈশব্দের সমন্বয়ে মানব চিত্তে বিনোদন সৃষ্টি করতে সক্ষম। স্বর ও ধ্বনির সমন্বয়ে গীতের সৃষ্টি। এই ধ্বনি হতে পারে মানুষের কণ্ঠ নিঃসৃত ধ্বনি, হতে পারে যন্ত্রোৎপাদিত শব্দ অথবা উভয়ের সংমিশ্রণ। কিন্তু সকল ক্ষেত্রে সুর ধ্বনির প্রধান বাহন। সুর ছাড়াও অন্য যে অনুষঙ্গ সঙ্গীতের নিয়ামক তা হলো তাল।

অর্থযুক্ত কথা, সুর ও তালের সমন্বয়ে গীত প্রকাশিত হয়। সুর ও তালের মিলিত ভাব এ বাদ্য প্রকাশিত হয়। ছন্দের সাথে দেহ ভঙ্গিমার সাহায্যে নৃত্য গঠিত। পাথরযুগের মানুষও সঙ্গীত গাইতো। সম্ভবত প্রথম সঙ্গীত তৈরির চেষ্টা হয়েছিল শব্দ ও ছন্দ দ্বারা প্রকৃতির সাহায্যে।

 

 

মানবজীবনে সংগীতের প্রয়োজনীয়তা

 

সংগীত মানবজীবনের সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। শৈশব থেকে মানুষের বিকাশে সংগীতের ভূমিকা অপরিসীম। সংগীত চর্চার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বৌদ্ধিক, কল্পনাশক্তিমূলক এবং প্রকাশমূলক গুণাবলীর বিকাশ ঘটে। সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের মাধ্যমে সার্বিক মানসিক গুণাবলীর উৎকর্ষ সাধনে সংগীতের ইতিবাচক অবদানের কথা সব দেশেই স্বীকৃত। সংগীত শিক্ষা বুদ্ধিমত্তা বিকাশেও সহায়ক। তাইতো আমেরিকান হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রখ্যাত মনোবিজ্ঞানী হাওয়ার্ড গার্ডনার বহুমুখী মেধাতত্ত্বে বিশ্বাসী শিশুদের প্রবল ও দুর্বল বুদ্ধি মত্তাকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে শিশুর শিখন সহজ ও নিশ্চিত করার জন্য তিনি তার কমপক্ষে আট বুদ্ধিমত্তার মধ্যে সংগীতকে গুরুত্ব সহকারে স্থান দিয়েছেন। ভিন্ন ভিন্ন সংগীত একেক ভাবে শিশুদের বিকাশকে প্রভাবিত করতে গুরুত্ব বহন করে। যেমন-

১। জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শিশু মন বাংলাদেশের প্রকৃতি, মাটি ও মানুষের প্রতি ভালবাসায় সিক্ত হয়ে ওঠে।

২। ছড়াগান-‘আমরা সবাই রাজা’-এই গানটি শেখার মাধ্যমে শিশু মনে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা, সম্প্রীতি ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ভাব জাগ্রত করে। ‘প্রজাপতি প্রজাপতি’-গানটি গাওয়ার মাধ্যমে শিশুর চঞ্চল মন একটি সাধারণ জিনিসকে অসাধারণ রুপে দেখতে শেখে। ‘প্রিয় ফুল শাপলা ফুল’-গানটি শিক্ষালাভের মাধ্যমে দেশের ভাষা, জাতীয় পতাকা, জাতীয় ফল, ফুল, মাছ ও পশুর কথা জানতে পারে।

৩। শহীদ দিবসের গানটির মাধ্যমে শিক্ষার্থী মাতৃভাষার প্রতি ভালবাসা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়।

৪। মুক্তিযুদ্ধের গানটির মাধ্যমে (রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি বাংলাদেশের নাম)-শিশুরা একটি মুক্ত স্বাধীন দেশ গড়ার দীপ্ত শপথ নিতে শেখে।

৫। শ্রমের মর্যাদা সম্পর্কিত গানটির মাধ্যমে নিজের হাতে কাজ কর। শিশুদের মনে শ্রমের প্রতি মর্যাদাবোধ জাগ্রত হয় এবং নিজের হাতে কাজ করার মানসিকতা সৃষ্টি হয়।

৬। শিশুরা রণ সংগীত (চল চল্ চল্) গাওয়ার মাধ্যমে সকল বাঁধা অতিক্রম করে উচ্ছ্বাসের সাথে সামনে এগিয়ে যেতে শেখে।

৭। জাতীয় গীতি (দেশাত্ববোধক গান)-গানটির মাধ্যমে শিশুরা জন্মভূমির শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে জানতে পারে ও সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়।

৮। শিশুরা হাম্দ (এই সুন্দর ফুল সুন্দর ফল) শেখার মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার অপরূপ সৃষ্টির প্রতি শিশু মনে কৃতজ্ঞতাবোধ জন্ম নেয়।

 

গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

৯। লোকসংগীত (আল্লাহ্ মেঘ দে পানি দে) গাওয়ার মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার কাছে কোনকিছু আকুলতাবোধ সৃষ্টি হয়।

১০। শিশুদের প্রার্থনা সংগীত (আনন্দলোকে, মঙ্গলালোকে) বন্দনার মাধ্যমে শিশুরা হিংসা, বিদ্বেষহীন একটি সুন্দর পৃথিবী গড়ার প্রত্যয়ী হয়ে উঠবে।

১১। প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থীরা বিশ্ব সংগীত চর্চার মাধ্যমে সুনামগরিক ও সংস্কৃতিমনস্ক বিশ্ব নাগরিক হিসাবে গড়ে উঠবে।

১২। সংগীত  শিক্ষার মাধ্যমে শিশুর সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটে।

১৩। সংগীত হলো শিশুসহ সকল মানুষের আবেগ প্রকাশের শুদ্ধতম মাধ্যম।

১৪। সংগীতের মাধ্যমে শিক্ষার্থী অত্যন্ত নির্মল ও পরিমার্জিত রুপে নিজেকে প্রকাশ করতে পারে।

১৫। সংগীত চর্চার মাধ্যমে শিশু মনে হীন প্রবৃত্তিগুলো জন্ম হয় না।

১৬। সংগীত শিশুর শিক্ষা কার্যক্রমকে গতিশীল করে।

১৭। শিশু পরমত সহিষ্ণু হয়ে ওঠে।

১৮। প্রাথমিক স্তরের সংগীত শিক্ষাদানের ফলে শিশুরা বিদ্যালয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়।

১৯। সংগীত শিক্ষা শিশুর কোন কঠিন বিষয়কে সহজ করে তোলে।

২০। সংগীত শিক্ষা লাভের ফলে শিশুরা আনন্দলাভ করে ফলে বিদ্যালয়ে ভর্তির হার বৃদ্ধি পায়।

২১। প্রাথমিক স্তরে আবশ্যকীয় সংগীত শিক্ষার মাধ্যমে বিদ্যালয়ে শিশুদের ঝরে পড়া রোধ হয়।

পরিশেষে বলা যায়, সংগীত মানবজীবনের হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা, সুখ-দু:খে সান্ত¡নার প্রলেপ। সংগীত সমাজের সকল স্তরে পরিব্যপ্ত। জীবনের উৎসবে সংগীত নিত্য সংগী। মানবজীবনের সামগ্রিক বিকাশের ক্ষেত্রে সংগীতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংগীত মানবজীবনকে পরিশীলিত করে। এক অকৃত্রিম চেতনা জাগ্রত করে। মানব জীবনে সংগীতের প্রভাব তাই মহামিলনের এক মহামন্ত্র। লেখক: প্রধান শিক্ষক, দক্ষিণ কাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

 

 

সংগীত কি এবং মানবজীবনে সংগীতের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিস্তারিত ঃ

 

 

 

 

আরও দেখুনঃ

Exit mobile version