সাবিনা ইয়াসমিন । বাংলাদেশি গায়িকা

সাবিনা ইয়াসমিন একজন খ্যাতনামা বাংলাদেশি গায়িকা। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের গানের পাশাপাশি তিনি দেশাত্মবোধক গান থেকে শুরু করে উচ্চাঙ্গ, ধ্রুপদী, লোকসঙ্গীত ও আধুনিক বাংলা গানসহ বিভিন্ন ধারার নানান আঙ্গিকের সুরে গান গেয়ে নিজেকে দেশের অন্যতম সেরা সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

সব ক’টা জানালা খুলে দাও না, জন্ম আমার ধন্য হলো মা গো, মাঝি নাও ছাড়িয়া দে, সুন্দর সুবর্ণ – এ ধরনের অসংখ্য কালজয়ী গানের শিল্পী তিনি। ছায়াছবিতে ১২ হাজারের মতো গান করছেন তিনি। ১৪ টি পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার।

 

সাবিনা ইয়াসমিন । বাংলাদেশি গায়িকা

 

সাবিনা ইয়াসমিন । বাংলাদেশি গায়িকা

প্রাথমিক জীবন

সাবিনা ইয়াসমিন ১৯৫৪ সালের ৪ঠা সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা লুতফর রহমান ব্রিটিশ রাজের অধীনে সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন এবং মাতা বেগম মৌলুদা খাতুন। পৈত্রিক বাড়ি সাতক্ষীরায়। তার ৫ বোনের মাঝে ৪ বোনই গান করেছেন।তারা হলেন ফরিদা ইয়াসমিন, ফওজিয়া খান, নীলুফার ইয়াসমিন এবং সাবিনা ইয়াসমিন।

সাবিনা শৈশব থেকে গানের তালিম নেওয়া শুরু করেন। তিনি সাত বছর বয়সে প্রথম মঞ্চানুষ্ঠানে অংশ নেন এবং খেলাঘর নামে একটি বেতার অনুষ্ঠানে ছোটদের গান করতেন।

গানের ভুবনে বিচরণ

১৯৬২ সালে নতুন সুর চলচ্চিত্রে রবীন ঘোষের সুরে ছোটদের গানে অংশ নেন। চলচ্চিত্রে পূর্ণ নেপথ্য সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৬৭ সালে আগুন নিয়ে খেলা চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে। ১৯৭২ সালে অবুঝ মন চলচ্চিত্রের “শুধু গান গেয়ে পরিচয়” গানে কণ্ঠ দিয়ে তিনি প্রথম জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।

 

সাবিনা ইয়াসমিন । বাংলাদেশি গায়িকা

 

১৯৭৬ সালে প্রদত্ত ১ম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তিনি সুজন সখী চলচ্চিত্রের “সব সখীরে পার করিতে” গানের জন্য শ্রেষ্ঠ নারী কণ্ঠশিল্পী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন এবং এরপর গোলাপী এখন ট্রেনে (১৯৭৮), সুন্দরী (১৯৭৯) ও কসাই (১৯৮০) চলচ্চিত্রের জন্য টানা আরও তিনটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।

১৯৮০ সালে তিনি নজরুল ইসলাম বাবুর গীতে ও আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সুরে দেশাত্মবোধক “সব ক’টা জানালা খুলে দাও না” গানে কণ্ঠ দেন। এটি বাংলাদেশ টেলিভিশনে দীর্ঘকাল সংবাদ পরিবেশনের পূর্বে প্রকাশিত হত।[৪]

তিনি ভারতীয় বাঙালি সুরকার আর. ডি. বর্মণের সুরে ইন্দো-বাংলা যৌথ প্রযোজনার অন্যায় অবিচার চলচ্চিত্রে “ছেড়ো না ছেড়ো না হাত” গানে কণ্ঠ দেন। এছাড়া তিনি বর্মণের সুরে শত্রু চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দেন।[৪] কিশোর কুমারের ও মান্না দের সাথেও দ্বৈত গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। ১৯৮৫ সালে গানের জন্য ভারত থেকে ‘ডক্টরেট” ও লাভ করেছেন।

তিনি শ্যামল মিত্রের সাথে “পথেরো সাথী নামোগো পথে আজ” গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। এছাড়া ভূপেন হাজারিকা সুরে ও মাসুদ করিমের গীতে দুটি গান করেছেন।

তিনি অভিনেতা বুলবুল আহমেদ পরিচালিত ও অভিনীত রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত চলচ্চিত্রে আবু হেনা মোস্তফা কামালের গীতে ও আলাউদ্দিন আলীর সুরে “শত জনমের স্বপ্ন” গানে কণ্ঠ দেন। গানটির জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ নারী নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।

 

সাবিনা ইয়াসমিন । বাংলাদেশি গায়িকা

 

আলাউদ্দিন আলীর সুরে তার গাওয়া “চিঠি দিও প্রতিদিন” ও “ও আমার রসিয়া বন্ধুরে” গান দুটি জনপ্রিয়তা অর্জন করে।

তিনি ও রুনা লায়লা তুমি বড় ভাগ্যবতী (২০০৩) চলচ্চিত্রের শীর্ষ গানে কণ্ঠ দেন।

তার গাওয়া দেশাত্মবোধক গানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল “জন্ম আমার ধন্য হলো মা গো”, “সব ক’টা জানালা খুলে দাও না”, “ও আমার বাংলা মা”, “মাঝি নাও ছাড়িয়া দে”, “সুন্দর সুবর্ণ” ও “একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার”। গান গাওয়ার পাশাপাশি তিনি ২০১০ সালে চ্যানেল আইয়ের সেরা কণ্ঠ অনুষ্ঠানে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার তৃতীয় স্বামী কবীর সুমন একজন স্বনামধন্য সঙ্গীতশিল্পী ও সুরকার।

 

YaifwwriN4BzRFCyqbslL4 সাবিনা ইয়াসমিন । বাংলাদেশি গায়িকা
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

সম্মাননা

সাবিনা ইয়াসমিন সংগীতে অবদানের জন্য পুরষ্কৃত হয়েছেন অনেক বার। যেমন – ১৯৮৪ সালে একুশে পদক, ১৯৯৬ সালে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার মোট ১৪টি, বাচসাস পুরস্কার মোট ৬টি, বিএফজেএ পুরস্কার মোট ১৯৯১ সালে।

উত্তম কুমার পুরস্কার ১৯৯১ সালে, এইচ এম ভি ডাবল প্লাটিনাম ডিস্ক, বিশ্ব উন্নয়ন সংসদ থেকে সংগীতে ‘ডক্টরেট’ ডিগ্রি লাভ করেছেন ১৯৮৪ সালে, ১৯৭৪ ও ১৯৭৫ সালে জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার, ১৯৭৫ সালে চলচ্চিত্র পূবাণী চলচ্চিত্র পুরস্কার, ১৯৯০ সালে শেরে বাংলা স্মৃতি পদক, ১৯৯২ সালে অ্যাস্ট্রোলজি পুরস্কার,১৯৯২ সালে জিয়া স্মৃতি পদক এবং নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে পান ‘বেস্ট সিঙ্গার’ পুরস্কার।

 

সাবিনা ইয়াসমিন । বাংলাদেশি গায়িকা

 

২০১৭ সালে দশম স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড-দ্য ডেইলি স্টার জীবনের জয়গান উৎসবের আজীবন সম্মাননা পান।

গান গাওয়ার জন্য সাবিনা ইয়াসমিন বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন যেমন ইংল্যান্ড,সুইডেন,নরওয়ে,হংকং,আমেরিকা,বাহরাইন ইত্যাদি।এছাড়া ভারত, পাকিস্তানে তিনি অনেকবার ভ্রমণ করেছেন।

এছাড়া তিনি বিভিন্ন ভাষায় গান গেয়েছেন।সাবিনা ইয়াসমিন গাজী মাজহারুল আনোয়ারের ‘উল্কা’ নামের সিনেমাতে অভিনয় করেছেন।তিনি ২০১০ সালে চ্যানেল আই সেরা কন্ঠ নির্বাচনে একজন বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সাবিনা ইয়াসমিনের ক্যারিয়ারে খান আতাউর রহমানের অবদান অনেক।

 

সাবিনা ইয়াসমিন । বাংলাদেশি গায়িকা

 

২০০৭ সালে প্রতিভাবান এই গুণী শিল্পীর শরীরে মরণব্যাধী ক্যান্সার ধরা পড়ে। সংবাদটি জানার পর ভেঙে পড়েননি তিনি। মনকে শক্ত রেখে, অসংখ্য ভক্ত-শুভানুধ্যায়ীর দোয়া ও ভালোবাসায় ক্যান্সার থেকে সেরে ওঠেন। সিঙ্গাপুরে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফেরেন।

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment