সুপ্রীতি ঘোষ একজন বাঙালি রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী । মহালয়ার ভোরে আকাশবাণী কলকাতা প্রচারিত বিশেষ প্রভাতি অনুষ্ঠান ‘মহিষাসুরমর্দ্দিনী’-তে ‘বাজলো তোমার আলোর বেণু’-র গায়িকা।
Table of Contents
সুপ্রীতি ঘোষ । বাঙালি রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী
প্রাথমিক জীবন
রবীন্দ্রনাথ মজুমদার ও কমলা দেবীর কন্যা সুপ্রীতি ঘোষের জন্ম ১৯২২ সালের ২৮ আগস্ট, উত্তর কলকাতার মির্জাপুর স্ট্রিটে। সুরে তাঁর দীক্ষা হয়েছিল জন্মলগ্নেই। জ্যাঠা নৃপেন্দ্রনাথ মজুমদার ছিলেন আকাশবাণী কলকাতার অধিকর্তা। সেই সুবাদে বাড়িতে আসতেন গুণিজনেরা। তাঁদের মধ্যে ছিলেন পঙ্কজ মল্লিক, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র প্রমুখ।
তাঁরা মাঝে মধ্যে বালিকা সুপ্রীতির গান শুনে মুগ্ধ হন। শৈশবে গান শিখেছিলেন ‘বাসন্তীবিদ্যাবীথিতে’। সেখানে তাঁর সংগীতের শিক্ষকদের ভেতর ছিলেন অনাদি ঘোষ দস্তিদার, নিতাই ঘটক, জগৎ ঘটক, শৈলেশ দত্তগুপ্ত প্রমুখ।
সংগীত জীবন
১৯৪১ সালে প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর গাওয়া প্রথম রবীন্দ্রসংগীতের রেকর্ড। এক পাশে ছিল ‘চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে’ আর অন্য পিঠে ‘কে বলে যাও যাও, আমার যাওয়া তো নয় যাওয়া।’ রবীন্দ্রপ্রয়াণের পরে রেকর্ডটি প্রকাশিত হয়েছিল। ভীষণ জনপ্রিয় হয়েছিল। কবি স্বয়ং স্বাক্ষর করে এই রেকর্ডের ছাড়পত্র দিয়ে গিয়েছিলেন।
আধুনিক বাংলা গান। কীর্তণ শিখতেন রত্নেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের কাছে। একদিন রেডিওতে গান গাইবারও সুযোগ এসে গেল। প্রথম গান গাইলেন ১৯৪৩ সালে। শৈশব পেরিয়ে এসে সংগীতকে আরও বেশি করে আঁকড়ে ধরলেন। শুরু হল পাবলিক ফাংশন। পাশাপাশি ছায়াছবিতে গান গাওয়ার প্রস্তাব আসতে থাকে।
চলচ্চিত্র পরিচালক বিমল রায় ‘তথাপি’ ছবিতে তাঁকে দিয়ে গাওয়ালেন ‘ওগো সাথী মম সাথী’ গানটি। এছাড়াও প্লেব্যাক করলেন ‘কাঁকনতলা লাইট রেলওয়ে’, ‘বরযাত্রী’, ‘সাহেব বিবি গোলাম’ইত্যাদি ছায়াছবিতে।
প্রথম প্লেব্যাক করেছিলেন শচীনদেব বর্মণের সুরে ‘অভয়ের বিয়ে’ ছবিতে। ‘দৃষ্টিদান’ ছবিতে দ্বৈতকণ্ঠে গান গাইলেন নায়ক-গায়ক অসিত বরণের সঙ্গে। তাঁর অনেক গানে সঙ্গত করেছেন কালোদা অর্থাৎ অসিতবরণ।
সন্তোষ সেনগুপ্ত পরিচালিত রবীন্দ্রনৃত্যনাট্য ‘চণ্ডালিকা’- তে মায়ের গানগুলি ছিল সুপ্রীতি ঘোষের কন্ঠে। অন্যদিকে বেসিক রেকর্ডও প্রকাশ পেতে থাকল। পুজোর সময় প্রকাশিত শারদ অর্ঘ্য-তে প্রতি বছর নিয়মিত গাইতে থাকলেন। একবার শ্যামল গুপ্তের লেখা আর পুলক বন্দ্যোপাধ্যাযের সুরে গাইলেন ‘বরষ পরে পুজোর ঘন্টা বাজলো রে দেশ জুড়ে’।

পাইওনিয়র কোম্পানিতে বছর পাঁচেক রেকর্ড করার পর, বিশ্ববিখ্যাত হিজ মাস্টার্স ভয়েস (এইচএমভি)-এর চুক্তিবদ্ধ শিল্পী হন সুপ্রীতি ঘোষ। বিশেষত রবীন্দ্রসঙ্গীতের জগতে তাঁর নাম ততদিনে শীর্ষস্থানে।সুপ্রীতি, চারের দশকে, কলকাতার বিখ্যাত সঙ্গীতশিক্ষায়তন গীতবিতানে কিছুকাল রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষিকা হিসেবেও যুক্ত ছিলেন। স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রভাতে আকাশবাণীর বিশেষ অনুষ্ঠানে সম্প্রচারিত হয় সুপ্রীতি ঘোষের গান।
ব্যাক্তিগত জীবন
অরবিন্দ ঘোষের সঙ্গে পরিণয়সূত্রে সুপ্রীতি মজুমদার হয়েছেন সুপ্রীতি ঘোষ। সুপ্রীতি বিবাহিত জীবনেও তাঁর উজ্জ্বল সঙ্গীতজীবন সমান তালে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। স্বামী অরবিন্দ ঘোষের সহায়তা তো ছিলই, পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের থেকেও অবাঞ্ছিত কোনও প্রশ্নের মুখে তাঁকে পড়তে হয়নি।
প্লেব্যাক
‘মন বলে যে মেল মেল, নয়ন বলে না’, ‘এ কেমন দোলা কে জানে’, ‘কুড়িয়ে মালা গাঁথবে কি না, নাই ভাবনা’। ‘অভয়ের বিয়ে’-র পরে ‘স্বামীর ঘর’ (১৯৪৩), ‘শেষরক্ষা’ (১৯৪৪), ‘নিবেদিতা’ (১৯৪৬), ‘অলকানন্দা’ (১৯৪৭), ‘ঝড়ের পর’ (১৯৪৭), ‘মহাকাল’ (১৯৪৮), ‘কৃষ্ণা কাবেরী’ (১৯৪৯), ‘কঙ্কাল’ (১৯৫০), ‘রত্নদীপ’ (১৯৫১), ‘কপালকুণ্ডলা’ (১৯৫২), ‘কেরানির জীবন’ (১৯৫৩), ‘সাহেব বিবি গোলাম’ (১৯৫৬), প্রভৃতি বহু চলচ্চিত্রের নেপথ্যে, শতাধিক প্লেব্যাক করেছেন সুপ্রীতি ঘোষ।
প্রয়াণ
২০০৯ সালের ২২শে এপ্রিল প্রয়াত হন সুপ্রীতি ঘোষ
আরও দেখুনঃ