সেলিম সুলেমান হলেন ভারতীয় সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক যুগল। তারা দুজন হলে দুই ভাই সেলিম মার্চেন্ট ও সুলেমান মার্চেন্ট। তারা মূলত বলিউড চলচ্চিত্রে কাজ করে থাকেন। কৃষ (২০০৬) চলচ্চিত্রে তাদের কাজের জন্য তারা শ্রেষ্ঠ আবহ সঙ্গীত বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া তারা একটি মির্চি সঙ্গীত পুরস্কার, একটি আইফা পুরস্কার, দুটি স্ক্রিন পুরস্কার ও একটি জি সিনে পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া তারা একটি ডেটাইম এমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেছেন।
বলিউডে তাদের উল্লেখযোগ্য কাজ জল আজা নাচলে, চাক দে! ইন্ডিয়া (২০০৭), রব নে বানা দি জোড়ি, ফ্যাশন (২০০৮), কুরবান (২০০৯), ব্যান্ড বাজা বারাত (২০১০), ও হিরোইন (২০১২)। এছাড়া তারা হলিউডের সোল্ড চলচ্চিত্রের দুটি গানের সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন।
সেলিম সুলেমান । ভারতীয় সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক যুগল
প্রারম্ভিক জীবন
সেলিম সুলেমান মহারাষ্ট্রের মুম্বই শহরে একটি ইসমাইলি শিয়া মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাদের পূর্বপুরুষেরা গুজরাতের কচ্ছ জেলার মুন্দ্রার বাসিন্দা ছিলেন। সেলিম মার্চেন্ট ১৯৭৪ সালের ৩রা মার্চ এবং সুলেমান মার্চেন্ট ১৯৭০ সালের ২১শে মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তাদের পিতা সদরুদ্দিন মার্চেন্ট ভারতের ইসমাইলি স্কাউটস অর্কেস্ট্রার প্রধান ছিলেন। তার অনুপ্রেরণাতেই এই যুগল সঙ্গীত অঙ্গনে পদার্পণ করেন। সেলিম লন্ডনের ট্রিনিটি কলেজ অব মিউজিক থেকে পিয়ানোর প্রশিক্ষণ নেন, অন্যদিকে সুলেমান তৌফিক কুরেশী, ও ওস্তাদ জাকির হুসেইনের নিকট থেকে তবলার প্রশিক্ষণ নেন।
কর্মজীবন
সেলিম সুলেমান ১৯৯৭ সাল থেকে হিন্দি চলচ্চিত্রের সুরারোপ করছেন। তাদের প্রথম কাজ ছিল সঞ্জয় গুপ্তের হামেশা (১৯৯৭)। এরপর তারা ১৯৯০-এর দশকের শেষভাগে ভিভা, আসমান, শ্বেতা শেঠী, জেসমিন ও স্টাইল ভাইয়ের একাধিক হিন্দি পপ অ্যালবামের সুর করেছেন।
২০০০-এর দশকের শুরুতে তারা বিভিন্ন চলচ্চিত্রের আবহ সঙ্গীতের কাজ করেছেন। ২০০৫ সালে তারা করণ জোহর-শাহরুখ খানের প্রযোজনায় কাল (২০০৫) চলচ্চিত্রের গানের সুর করার সুযোগ পান। গানগুলো সমাদৃত হয়। এই চলচ্চিত্রের জন্য পরিচালক সোহম শাহ শাহরুখ খানের উন্মুক্ত ছাতি ও সিক্স প্যাক নিয়ে পরিবেশনা করবেন এমন একটি গানের সুরের জন্য সুরকার খুঁজছিলেন, যারা বিরাট শব্দের সৃষ্টি করতে পারে।
তারা দুজন সুপার হিট “কাল ধামাল” গানটির সুর করেন। নিল ‘এন’ নিকি (২০০৫) চলচ্চিত্রের জন্য তার ভুল ইংরেজি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেন। চলচ্চিত্রটির পাঞ্জাবি নায়কের জন্য তারা অন্বিতা দত্তের গীতে ভুল ইংরেজি ব্যবহার করেন। তারা ইকবাল (২০০৫) চলচ্চিত্রের “আশায়েঁ” গানটি মাত্র একদিনে সুর করেন।
তাদের জনপ্রিয় একটি গান হল ডোর (২০০৬) চলচ্চিত্রের “ইয়ে হোঁসলা”। এই গানে তারা যে সুর সৃষ্টি করেন, তা চাক দে! ইন্ডিয়া (২০০৭) চলচ্চিত্রের “মওলা মেরে” গানেও ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে, চাক দে! ইন্ডিয়া-র শীর্ষ গানটি প্রযোজক আদিত্য চোপড়া সাতবার পুনরাবৃত্তি করার পর চূড়ান্ত করেন। তাদের সুরারোপিত আজা নাচলে (২০০৭) চলচ্চিত্রে শীর্ষ গানটি হিট হয়। পাশাপাশি এই চলচ্চিত্রের অভিনয়শিল্পীদের ঠোঁট না মিলানো “ওরে পিয়া” গানটিও হিট হয়।
চাক দে! ইন্ডিয়া ও আজা নাচলে-র পর তারা পুনরায় আদিত্য চোপড়ার প্রযোজনায় রব নে বানা দি জোড়ি (২০০৮) চলচ্চিত্রের সুরারোপ করেন। তাদের সুরারোপিত এই অ্যালবামটি চার্টবাস্টার তকমা লাভ করে। এই চলচ্চিত্রের “হলে হলে” গানটিও তারা একদিনে সুর করেন। এই গানটিতে কণ্ঠ দিয়ে সুখবিন্দর সিং শ্রেষ্ঠ পুরুষ নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া তারা ফ্যাশন (২০০৮) ও কুরবান (২০০৯) চলচ্চিত্রের সুরারোপ করেন।
তাদের সুরারোপিত ব্যান্ড বাজা বারাত চলচ্চিত্রের “অ্যাঁয়ভি অ্যাঁয়ভি লুট গয়া” পরিচ্ছন্ন গীতসমৃদ্ধ আনন্দদায়ক গান। পাঞ্জাবি লোকসঙ্গীত ধারার সুর সংবলিত গানটি পার্টি গান হিসেবে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
২০১৯ সালে তারা দুজন মির্জা হাদী রুসওয়ার উর্দু ভাষার উপন্যাস অবলম্বনে রাজীব গোস্বামীর সঙ্গীতনাট্য উমরাও জান আদা-র জন্য সুরারোপ করেন এবং মৌলিক সুর সৃষ্টি করেন। সেলিম-সুলেমান তাদের বিভিন্ন কাজের সহযোগী কর্ষ কালে নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র রক ডিস্কো তবলা-এর প্রযোজনা করেন। প্রামাণ্যচিত্রটি ২০২০ সালের অক্টোবরে গোল্ডেন গেট আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব থেকে দুটি পুরস্কার অর্জন করে। এছাড়া তারা ঈদ আয়োজন উপলক্ষ্যে ২০২০ সালের ২১শে মে “মালিক মেরে” শীর্ষক একটি গানের প্রকাশ করেন। গানটিতে কণ্ঠ দেন রাজ পণ্ডিত, বিপুল মেহতা, সালমান আলি, ফয়সাল শেখ, শাদান ফারুকী, হাসনাইন খান, ফয়েজ বালোচ ও আদনান শেখ।
সেলিম সুলেমান ২০২০ সালের জুলাই মাসে মার্চেন্ট রেকর্ডস নামে একটি সঙ্গীত লেবেল প্রতিষ্ঠা করেন। এই লেবেল থেকে প্রকাশিত প্রথম একক গান “মাঙ্গি দুয়ায়েঁ”।[১৩] ২০২০ সালে এই লেবেল থেকে ৯টি একক গান মুক্তি পায়। তারা ভূমি ২০২০ নামে সাতটি একক গান সংবলিত একটি অ্যালবাম প্রকাশ করে।
এই অ্যালবামের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন সুখবিন্দর সিং, জোনিতা গান্ধী, শ্রেয়া ঘোষাল, অরিজিৎ সিং, কৌশিকী চক্রবর্তী, রাজ পণ্ডিত, ওসমান মির, নিকিতা গান্ধী, সালমান আলি, স্বরূপ খান ও বিপুল মেহতা। এই অ্যালবামের প্রথম গান “সাঁওয়াল” ২৩শে নভেম্বর মুক্তি পায়। এছাড়া “জব তুম পাস হো” ও “মান মেঁ আমন” গান দুটি শ্রুতিমধুর, কিন্তু এই দুটি গানে ইলেকট্রনিক প্রভাব রয়েছে।
সেলিম মার্চেন্ট সনি এন্টারটেইনমেন্ট টেলিভিশনের ইন্ডিয়ান আইডলের পঞ্চম মৌসুমের তিনজন বিচারকের একজন ছিলেন।
পুরস্কার ও মনোনয়ন
সেলিম সুলেমান কৃষ (২০০৬) চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ আবহ সঙ্গীত বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন। তারা ভূত (২০০৩) চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ আবহ সঙ্গীত বিভাগে স্ক্রিন পুরস্কার অর্জন করেন। পরের বছর তার ধুম (২০০৪) চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ আবহ সঙ্গীত বিভাগে স্ক্রিন পুরস্কার অর্জন করেন।তারা মুঝসে শাদী করোগি (২০০৪) চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ আবহ সঙ্গীত বিভাগে আইফা পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া তারা আব তক ছাপ্পান (২০০৪) চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ আবহ সঙ্গীত বিভাগে জি সিনে পুরস্কার অর্জন করেন। সেলিম কুরবান চলচ্চিত্রের “শুকরান আল্লাহ” গানে কণ্ঠ দিয়ে সোনু নিগমের সাথে যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ পুরুষ নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।
আরও দেখুনঃ