হাত জোড় করে অনুরোধ !!! কবীর সুমন [ Kabir Suman ] “জীবনমুখী” শব্দের সাথে, তার বা গানের না মেশাতে করজোড়ে বাংলাদেশের মিডিয়া-কর্মীদের কাছে অনুরোধ করলেন। কবীর সুমন (পূর্বনাম সুমন চট্টোপাধ্যায়) বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী, গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক ও সাংবাদিক। কবীর সুমন ২৫ শে সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে তার নিজের ফেসবুক একাউন্ট থেকে লাইভ করেন। লাইভের শিরনামে লেখেন:
“বাঙালি মিডিয়া-কর্মীদের প্রতি সনির্বন্ধ অনুরোধ – আমার বাবা-মা, আমার গুরুদের দোহাই, বাংলা ভাষা বাংলা গানের দোহাই আমাকে জীবনমুখী গায়ক বলবেন না। বিশেষ করে বাংলাদেশের মিডিয়া-কর্মীদের প্রতি এই সনির্বন্ধ অনুরোধ। তাঁরা প্রায় সব সময় আমার নামের আগে এই কথা প্রয়োগ করে থাকেন।
মহান শিল্পী শ্রীযুক্ত নচিকেতা চক্রবর্তীর গানের ক্যাসেটে ঐ কথাটি ছিল, থাকত : জীবনমুখী বাংলা গান বা গান। আমার গানের কোনও এলবামে ঐ কথাটি ছিল না। থাকে না। দয়া করে আমার নামের আগে ঐ কথাগুলি লিখবেন না। দয়া করে।”
![হাত জোড় করে অনুরোধ, আমাকে জীবনমুখী গায়ক বলবেন না ! - কবীর সুমন [ Kabir Suman ] - 1 কবীর সুমন, Kabir Suman](https://sp-ao.shortpixel.ai/client/to_auto,q_glossy,ret_img,w_300,h_225/https://bn.musicgoln.com/wp-content/uploads/2022/01/Kabir-Suman-কবীর-সুমন-36-300x225.jpg)
হাত জোড় করে অনুরোধ, আমাকে জীবনমুখী গায়ক বলবেন না !
তিনি লাইভে এসে বলেন ” আমার নাম কবীর সুমন [ Kabir Suman ], আজ ২৫ শে সেপ্টেম্বর ২০২১ সাল। আমি আধুনিক বাংলা গান রচনা করে এসেছি, সুর করে এসেছি, গেয়ে এসেছি। আমি ১৯৬৭ সাল থেকে আকাশবাণী কোলকাতার, মনে রাখবেন ১৯৬৭ সাল থেকে, আমার ১৮ বছর বয়স থেকে আমি আকাশবাণী কোলকাতার – আধুনিক, রবীন্দ্র সঙ্গীত ও নজরুল গীতির শিল্পী।
আধুনিক ও রবীন্দ্র সঙ্গীতে আমি বি হাই গ্রেড ছিলাম। নজরুল গীতির অডিশনে আমি ভালো গাইনি, বি গ্রেড। ১৯৯২ সালে আমার প্রথম স্বরচিত আধুনিক বাংলা গানের একটি ক্যাসেট বা এ্যালবাম, সংকলন প্রকাশ করেন ইএমআই গ্রামোফোন কোম্পানি অব ইন্ডিয়া তখনো, সারেগামা হননি তারা। তার কোথাও জীবনমুখী কথাটা ছিল না, কোথাও না। তার পরে আরও এ্যালবাম আমার প্রকাশ পেয়েছে। বাংলাদেশের কণ্ঠশিল্পীদের জন্যও আমি আধুনিক বাংলা গান রচনা করেছি। কই তারা তো কখনো জীবনমুখী কথাটা ব্যবহার করেন নি !
ধরা যাক আসিফ আকবর যখন সিরিয়ার ছেলে গানটি গেয়েছেন, তখন তো সেখানে জীবনমুখী কথাটা ছিল না। বা যখন আরমান সিদ্দিকী গেয়েছেন, সেখানেও তো ছিল না। পরেও হয়তো কেউ গাইতে পারেন যদি ইচ্ছে করেন। আমি তার জন্য গান রচনা করবো। কিন্তু সেটা তো জীবনমুখী না, আধুনিক বাংলা গান, কেমন? এখন আমি একনিষ্টভাবে বাংলা খেয়াল রচনা করছি, গাইছি, শেখাচ্ছিও। সেটাতো জীবনমুখী না, বাংলা খেয়াল।
জীবনমুখী কথাটা প্রথম আমি দেখতে পাই বা জানতে পারি, ১৯৯৩ সালে শ্রীযুক্ত নচিকেতা চক্রবর্তী মহোদয়, মহান শিল্পী, তাঁর প্রথম এ্যালবাম “এই বেশ আছি” বা “এই বেশ ভালো আছি” মার্জনা করবেন আমি বুড়ো মানুষ, ভুলে গেছি, ক্ষমা করে দেবেন। তার প্রথম গানের ক্যাসেট বা এ্যালবামে জীবনমুখী বাংলা গান বা জীবনমুখী গান কথাটা আমি দেখতে পাই, বা মানুষ জানতে পারে।
তার আগে না, তার আগে আমার যে “তোমাকে চাই” এলবামটি বেরিয়েছিল তার যথেষ্ট আগে, এবং তার আগে “বসে আঁক”, তোমাকে চাই এর পর। কোথাও তো জীবনমুখী চিল না, বা গানওয়ালা কোথাও না, বা জাতিস্মর, এই কোন এ্যলবামেতো ছিল না, এখনো থাকে না। কিন্তু বাংলাদেশের মিডিয়া দেখেছি, কি করে যেন তারা, প্রচণ্ড নিষ্ঠার সঙ্গে, আজও আমাকে জীবনমুখী গায়ক বলেন। এটা বলে তারা মনেহয় কিরকম একটা সুখ পান। নয়তো তারা বলছেন কেন?
এই সত্যের ভয়ঙ্কর অপলাপটি তারা কেন করছেন?
আজও আমি নেটে দেখলাম, আমি যে মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকার পত্রে সই করেছি, সেই খবরটি বাংলাদেশের মিডিয়া দিচ্ছেন। কিন্তু জীবনমুখী গায়ক বলে!
![হাত জোড় করে অনুরোধ, আমাকে জীবনমুখী গায়ক বলবেন না ! - কবীর সুমন [ Kabir Suman ] - 3 YaifwwriN4BzRFCyqbslL4 হাত জোড় করে অনুরোধ, আমাকে জীবনমুখী গায়ক বলবেন না ! - কবীর সুমন [ Kabir Suman ] -](https://sp-ao.shortpixel.ai/client/to_auto,q_glossy,ret_img,w_160,h_120/https://bn.musicgoln.com/wp-content/uploads/1965/12/YaifwwriN4BzRFCyqbslL4-300x225.png)
এটা কেন করছেন বলুন তো ?
আমার মনে হয় না এটা করে আপনাদের কোন আর্থিক বা সামাজিক বা ব্যক্তিগত কোন সুখ হয়, বা সুবিধে হয়। তা তো হতে পারে না, নাকি? যাই হোক আমি জীবনমুখী না। আমি একটা গায়কও না, আমি কিছুই না। কিন্তু জীবনমুখী গায়ক কথাটা সত্যের প্রচণ্ড অপলাপ। এটা শ্রীযুক্ত নচিকেতা চক্রবর্তীর গানে ব্যবহার হয়েছে। এবং তার পর শ্রীযুক্ত শুভেন্দু মাইতি, আরেক মহান শিল্পী, তার প্রথম এ্যালবাম যেটা এইচএমভি থেকে বেরিয়েছিল, তাতে লেখা ছিল “জীবনমুখী লোকগান”, কেমন?
এছাড়া জীবনমুখী কথাটা আমি আমার ক্ষেত্রে অন্তত কোনদিন ব্যবহার করিনি। কেন যে এখনো বাংলাদেশের মিডিয়া এটা করে যাচ্ছেন, আমার মাথায় ঢুকছে না। যাই হোক আমি আজও দেখলাম।
“আমি করজোড়ে হাত জোড় করে আমার বাবা-মায়ের নামে, আমার চোদ্দ গুষ্টির নামে, আমার গুরুদের নামে, কলিপদ দাসের নামে,নিহারবিন্দু সেনের নামে, মনি চক্রবর্তী মহাশয়ের নামে, নিখিল চন্দ্র সেনের নামে, সকলের নামে আমি হাত জোড় করে আপনাদের কাছে অনুরোধ করছি। মাননীয় বাংলাদেশের মিডিয়া বন্ধুরা – জীবনমুখী গায়ক আমায় বলবেন না। ওটা আমি না।”
আমার গানে কোন দিন জীবনমুখী কথাটা ছিল না। কোন এ্যালবামে ছাপা হয়নি। কখনো নামেও লিখিনি। অনুগ্রহ করে আপনাদের সকলের পায়ে পড়ছি, যদি চান আমি নাহয় নিজে একবার বাংলাদেশে গিয়ে, যদি ভিসা পাই আপনাদের পায়ে ধরবো। আর কি করতে পারি !!! আমি মরে যাবার পরে যা খুশি লিখবেন। যতদিন বেঁচে আছি, মাননীয় বাংলাদেশের মিডিয়া এবং পশ্চিমবঙ্গের মিডিয়া – আমার নাম কবীর সুমন। যদি লিখতেই হয় লিখুন না “গায়ক কবীর সুমন”।
নাইবা লিখলেন যে আমি গান তৈরি করি, সে গান অন্য লোকেও গায়। সেগুলো নাইবা করলেন। গায়কই নাহয় থেকে গেলাম। কিন্তু ওই জীবনমুখী নয়, কেমন?