রাগ কালাংড়া (বা কালেংড়া) উত্তর ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের একটি প্রাচীন ও গম্ভীর রাগ। এর স্বরবিন্যাস ও সুররূপে ভৈরব ঠাটের বৈশিষ্ট্য সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়। কোনো কোনো মতে, এর আরোহণে ঋষভ বর্জিত থাকে, তবে অবরোহণে সকল স্বরই ব্যবহৃত হয়। রাগটির মেজাজ গম্ভীর, ধ্যানমগ্ন এবং খানিকটা বিষণ্ণ ধাঁচের, যা শ্রোতাকে গভীর ভাবনায় নিমগ্ন করে।
রাগ কালাংড়ার একটি সমপ্রকৃতির রাগ হলো পরজ, তবে স্বরপ্রয়োগ, পকড় এবং ভঙ্গিমায় এদের মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে। সাধারণত এই রাগ পরিবেশনে ধীর গতি ও মৃদু অলঙ্কার ব্যবহৃত হয়, যাতে এর ভাবগাম্ভীর্য ও সৌন্দর্য ফুটে ওঠে।
স্বরবিন্যাস
- আরোহণ: স ঋ গ ম প দ ন র স
- অবরোহণ: র স ন দ প ম গ ঋ স
- ঠাট: ভৈরব
- জাতি: সম্পূর্ণ – সম্পূর্ণ (আরোহণ ও অবরোহণে সব সাতটি স্বর ব্যবহৃত)
প্রধান বৈশিষ্ট্য
- বাদী স্বর: নিষাদ
- সমবাদী স্বর: গান্ধার
- অঙ্গ: উত্তরাঙ্গ প্রধান (উত্তরাংশের স্বরগুলিতে বিশেষ গুরুত্ব)
- সময়: রাত্রি তৃতীয় প্রহর (রাত ১২টা থেকে ভোর ৩টার মধ্যে পরিবেশনের উপযোগী)
- পকড়: স, ণ্ স, ঋ গ, ঋ গ, ঋ, গ ম প, গ ম গ, র স
রাগের ভাব ও পরিবেশন ধারা
রাগ কালাংড়া মূলত গাম্ভীর্য, ভক্তি এবং অন্তর্মুখী আবেগ প্রকাশের জন্য পরিবেশিত হয়। ধ্রুপদ, খেয়াল, ধামার প্রভৃতি শাস্ত্রীয় ধারায় এটি বিশেষভাবে জনপ্রিয়। মৃদু মীড়, গমক এবং অনুরণনময় তান ব্যবহারে রাগটির রস আস্বাদন সর্বাধিক হয়। অভিজ্ঞ শিল্পীরা পরিবেশনের সময় ধীর লয়ে আলাপ থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে মধ্য ও দ্রুত লয়ে পৌঁছান, যাতে রাগের পূর্ণ সৌন্দর্য উন্মোচিত হয়।