নাজমুল আলম একজন বাংলাদেশী সঙ্গীতজ্ঞ, ছোটগল্পকার, ঔপন্যাসিক ও নাট্যকার। ছোটগল্প লেখায় বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান। তিনি বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক ছিলেন। দিলরুবা, এস্রাজ ও ক্লাসিক্যাল যন্ত্র বাদনে তার পারদর্শিতা ছিল।
Table of Contents
প্রাথমিক জীবন
নাজমুল আলম ৮ মার্চ ১৯২৭ সালে কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম খোন্দকার আশরাফ আলী। নাজমুল আলম বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
কর্মজীবন
নাজমুল আলম তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতে মহারাষ্ট্রের পুনায় আবহাওয়া বিভাগে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি ১৯৫১ সালে রেডিও পাকিস্তানে যোগ দেন। ১৯৬৮ সালে তিনি চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক পদ থেকে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
তিনি বাংলা সাহিত্যের ছোটগল্প লেখক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। ষাটের দশকে শতদল নামে দেশের ২০ জন প্রখ্যাত লেখকের ছোটগল্প নিয়ে যে বড় আকারের সঙ্কলন প্রকাশিত হয়েছিল তাতে গল্প ছাপা হয়েছিল। শুভ্র শিশির প্রকাশনী থেকে ১৯৭৮ সালে স্বরচিত ও স্বনির্বাচিত ৪১টি গল্প প্রকাশ হয়।
নাজমুল আলমের ছোটগল্প তার নিজস্ব সরল শৈলীতে রচিত। প্রবৃত্তির জটিল আবিলতার মধ্যে ফ্রয়েডীয় আবেশ থাকলেও শিল্পের স্পন্দন আকর্ষণীয়। তার গল্প বাস্তব জীবনের কাহিনী। ইউরোপের ন্যুট হ্যামসুন, জোহান বোয়ার, গি দ্য মোপাসাঁর গল্পের আঙ্গিক ও শিল্প বাংলা সাহিত্যে বিগত শতাব্দীর তিরিশ ও চল্লিশের দশকের ছোটগল্পে ক্লেদাক্ততার মধ্যে যে মানবিক বোধের জন্ম দিয়েছিল, নাজমুল আলমের গল্পে তার প্রতিফলন রয়েছে। তার ১২টি উপন্যাস প্রকাশ হয়।
তিনি বেতার, টিভি ও মঞ্চ নাটক রচনায়ও কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন।খুন ছিল তার প্রথম বেতার নাটক। আগুন তার আর একটি সফল বেতার নাটক। মরা মানুষের পাঠশালা বর্তমান নবপ্রযুক্তিনির্ভর সফল নাটক। দক্ষ, অভিজ্ঞ এবং বেতার ব্যক্তিত্ব হিসেবে বহুল আলোচিত জেড এ বোখারী যুগের তিনি ছিলেন মনোমুগ্ধকর, রুচিশীল আরেক উজ্জ্বল এক বেতার ব্যক্তিত্ব। প্রশাসনের ক্ষেত্রে সৎ, পরিচ্ছন্ন, ন্যায়পরায়ণ ও ধৈর্যশীল।
বেতারে তার সহকর্মীদের মধ্যে ছিলেন ফররুখ আহমদ, শাহাদাৎ হোসেন, সৈয়দ আলী আহসান, আবুল হোসেন, সিকান্দার আবু জাফর, শামসুর রাহমান, কবি হেমায়েত হোসেন, গীতিকার নাজির আহমদ, কথাশিল্পী আশরাফ-উজ-জামান খান প্রমুখ।
গ্রন্থ
নাজমুল আলমের উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে:-
একটি অচল আনি (১৯৬৬), উপস্থিত সুধীম-লী (১৯৭৮), পান্ডুলিপি ও গয়নার বাক্স (১৯৭০), স্বনির্বাচিত গল্প (১৯৭৮), বুনোবৃষ্টি (১৯৮৪), নিজের বাড়ি (১৯৮৮)।
পুরস্কার ও সম্মাননা
- বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৮)
মৃত্যু
নাজমুল আলম ১৪ মে ২০০৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
আরও দেখুনঃ