সোহরাব হোসেন বাংলাদেশের একজন নজরুল সঙ্গীত শিল্পী। তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার রানাঘাট শহরের কাছাকাছি আয়েশতলা পল্লী গ্রামে ১৯২৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন।
Table of Contents
সোহরাব হোসেন । বাংলাদেশী নজরুল সঙ্গীত শিল্পী
প্রাথমিক জীবন
সোহরাব হোসেনের মায়ের বংশের দিকে গান বাজনার চল ছিল। গ্রামে তিনি ছোটবেলা থেকে গান বাজনা শুনতেন। তার যখন বয়স ৯ বছর তখন তিনি নজরুলের গান শোনেন রানাঘাটে। তিনি জয়নুল আবেদীন নামের একজন শিক্ষকের কাছে প্রথম তালিম নেন।
গ্রাম থেকে গোপীমাঝির নৌকায় রানাঘাট যাওয়ার সময় ক্লাস ফাইভে পড়ার সময় জমিদার ক্ষীরোদ পাল চৌধুরীর নজরে পড়ে তার গান। জমিদার বাবু তাকে সঙ্গীত শিক্ষক ঠিক করে দেন যার নাম ছিল কিরণ দে চৌধুরী।
চূর্ণি নদী পার হয়ে তিনি নিয়মিত যাওয়া আসা করতেন। এছাড়াও নজরুল সঙ্গীত শিল্পী পূরবী দত্তের বাড়িতে তার দাদার গানের শিক্ষার আসরে তিনি গান শুনতে যেতেন। গ্রামোফোন রেকর্ডে কোন গান শুনে তিনি তা গলায় তুলে নিতে পারতেন। অবশ্য পরিবার থেকে তার এই গান প্রীতি ভাল চোখে দেখা হয়নি। তার বড়ভাই তার লেখাপড়া বন্ধ করে দিয়ে ব্যবসার কাজে তাকে নিয়ে নেন।
সংগীত জীবন
রানাঘাটে একবার আব্বাসউদ্দিন, ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খসরু, জসিম উদ্দীন এবং তবলা বাদক বজলুল করিম আসেন গান করতে। তাদের সাথে একই মঞ্চে গান করার সুযোগ পান সোহরাব হোসেন। পরে সোহরাব হোসেন কলকাতায় চলে যান।
তিনি তার শিক্ষক কিরণ দে চৌধুরী মাধ্যমে শ্রীরঙ্গম থিয়েটারে মাসে মাত্র ১২ আনা বেতন হিসেবে গান গাওয়ার কাজ পান। তখন তিনি আব্বাসউদ্দিনের সাথে দেখা করেন স্যাভয় হোটেলে; আব্বাসউদ্দিন তাকে সংগস অ্যান্ড পাবিলিসিটি বিভাগে ১৯৪৬ সালের ৬ই জুন থেকে কাজের ব্যবস্থা করে দেন। এরপর আব্বাসউদ্দিনের সৌজন্যে তিনি মেগাফোন রেকর্ডসের সাথে রেকর্ড বের করার চুক্তি করেন; কিন্তু পরে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে আর তার রেকর্ড বের হয়নি।
এছাড়াও তিনি এইচ এম ভি ও রেডিওতে অডিশনে পাশ করেন। সোহরাব হোসেন আঙ্গুরবালা, ইন্দুবালা ইত্যাদি শিল্পীদের কণ্ঠে নজরুল সঙ্গীত শুনেছেন। তিনি গিরীন চক্রবর্তী, কৃষ্ণচন্দ্র দের মতো বিশিষ্ট শিল্পীদের সাহচর্যে আসেন।
দেশ বিভাগের পর
৪৭ সালে দেশ ভাগের পর সোহরাব হোসেন চলে আসেন ঢাকায়। তিনি আব্বাসউদ্দিনের সৌজন্যে ৪১ জিন্দাবাজার লেনের একটি বাড়িতে ওঠেন এবং তথ্য অধিদপ্তরে চাকরি পান। এছাড়াও তিনি রেডিওতে অনুষ্ঠান করতেন এবং টিউশনীও করতেন।
তখন তিনি ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ ,শচীনদেব বর্মন, অঞ্জলি মুখার্জী ইত্যাদি গুণী ব্যক্তিদের সাথে পরিচিত ছিলেন। সোহরাব হোসেন আব্বাসউদ্দিনের সাথে বাংলাদেশের নানা স্থানে ঘুরেছেন এবং গান করেছেন।
চলচ্চিত্রেও তিনি প্লেব্যাক করেছেন “মাটির পাহাড়”, “যে নদী মরুপথে”, “গোধূলির প্রেম”, “শীত বিকেল”, “এ দেশ তোমার আমার” ইত্যাদি ছবিতে। তিনি মঞ্চ নাটকও করেছেন কার্জন হল, ব্রিটানিয়া হল ইত্যাদি স্থানে। তিনি তুলসী লাহিড়ীর ‘ছেঁড়া তার’ নাটকেও অভিনয় করেন।
ছাত্র-ছাত্রী
তার স্বনামধন্য ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে খায়রুল আনাম শাকিল, সনজীদা খাতুন, আতিকুল ইসলাম, লায়লা আর্জুমাদ বানু, ইসমত আরা, সাদিয়া আফরিন মল্লিক, মাহমুদুর রহমান বেনুর নাম উল্লেখ যোগ্য।
সম্মাননা
নজরুল সঙ্গীতে অসামান্য অবদানের জন্য সোহরাব হোসেন ১৯৮০ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়াও তিনি নজরুল একাডেমী পদক, চ্যানেল আই সম্মননা প্রভৃতি লাভ করেছেন। ২০০৯ সালে সোহরাব হোসেন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় সম্মাননা লাভ করেন।

মৃত্যু
২০০৮ থেকে তিনি কান, কিডনি, হৃদযন্ত্র প্রভৃতির সমস্যা সহ বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ছয়টায় নব্বই বছর বয়সে স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি পরলোক গমন করেন।
আরও দেখুনঃ