পণ্ডিত অমরেশ রায় চৌধুরী উপমহাদেশের একজন নামকরা সঙ্গীত শিল্পী। ক্লাসিক্যাল সঙ্গিত এ অবদানের জন্য তিনি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক একুশে পদকে ভূষিত হন ২০১৬ সালে।
Table of Contents
প্রাথমিক জীবন
ফরিদপুর জেলার চৌদ্দরশি গ্রামে ১৯২৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন পণ্ডিত অমরেশ রায় চৌধুরী। ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলার বাইশরশির জমিদার রায় বাহাদুর মহেন্দ্র নারায়ন রায় চৌধুরী, তার চার ছেলে অবিনাশ রায় চৌধুরী, ভূপতি রায় চৌধুরী, সুকুমার রায় চৌধুরী, গৌর গোপাল রায় চৌধুরী।
তাদের মধ্যে ভূপতি রায় চৌধুরী ও সুকুমার রায় চৌধূরী ছিলেন চিরকুমার। গৌর গোপাল রায় ছিলেন নিঃসন্তান। বড় ছেলে অবিনাশ রায় চৌধুরীর একমাত্র পুত্র অমরেশ রায় চৌধুরী। ১৯৭১ সালের পুর্বেই তিন ভাই মারা যান। ১৯৭২ সালে স্বাধীনতার পর আত্মহত্যা করেন সুকুমার রায় চৌধুরী।
স্বাধীনতার যুদ্ধ চলাকালে অবিনাশ রায়ের একমাত্র পুত্র অমরেশ রায় মা রাজলক্ষ্মী রায় চৌধূরীকে নিয়ে রাজশাহীতে পালিয়ে যান। পরবর্তীতে রাজশাহীতেই তিনি স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। সহধর্মিণী সোনালী রায় চৌধুরী ও দুই ছেলে অভিজিৎ ও অমিত, দুই পুত্রবধু এবং নাতি নাতনিদের নিয়ে তার সংসার জীবন।
সঙ্গীত জীবন
পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থায় তার মা রাজলক্ষী রায় চৌধুরীর একান্ত আগ্রহে প্রথম হাতে খড়ি হয় উপমহাদেশের প্রখ্যাত উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত কলাকার ও বিশিষ্ট সুরকার ফরিদপুরের সুধীর লাল চক্রবর্তী-এর কাছে। প্রখ্যাত উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত কলাকার ও বিশিষ্ট সুরকার সুধীর লাল চক্রবর্তীর আকস্মিক মৃত্যুর পরে সিরাজগঞ্জের উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতশিল্পী হরিহর শুক্লা (ভারত বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী হৈমন্তী শুক্লার পিতা) এর কাছে কয়েক বছর তালিম নেন পরে সুদীর্ঘ কয়েক বছর উপমহাদেশীয় মার্গ সঙ্গীতের স্বনামধন্য সঙ্গীত সাধক সঙ্গীতাচার্য তারাপদ চক্রবর্তী-এর কাছে ধ্রুপদ, খেয়াল ও ঠুংরীতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
এছাড়া বিশিষ্ট শিল্পী ও সুরকার নিখিলচন্দ্র সেন-এর কাছে আধুনিক গান, অতুলপ্রসাদ, রাগপ্রধান, নজরুল সঙ্গীত ও শ্যামা সঙ্গীত শিক্ষা গ্রহণ করেন। এছাড়া সঙ্গীত কলাকার মানস চক্রবর্তী-এর নিকটেও বেশ কয়েক বছর উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে তালিম নেন । ১৯৪৫ সালে ম্যাট্রিক পাশ করার পর লেখাপড়ায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সাথে সাথে একান্ত নিষ্ঠার সঙ্গে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিক্ষা ও চর্চা অব্যাহত থাকে।
কর্মজীবন
অমরেশ রায় চৌধুরী বর্তমানে রাজশাহীর ‘শিল্পাশ্রম ললিতকলা একাডেমি’-তে সঙ্গীতের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি নিজেই ‘সঙ্গীতাশ্রম’ নামে একটি সঙ্গীতের প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন।
উল্লেখযোগ্য কাজ
কাজী নজরুল ইসলামের গানগুলির আদি রেকর্ড থেকে আদি সুর উদ্ধার করে তারপর সেগুলোর স্বরলিপি করেছেন তিনি।
অর্জন
- ১৯৬১ সালে “মিউজিক এডুকেশন বোর্ড অফ ঝংকার” থেকে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে “সঙ্গীত তীর্থ ” উপাধি লাভ করেন।
- ১৯৮২ সালে ঢাকায় “সঙ্গীত একাডেমী” শিল্পীকে “ওস্তাদ গুল মোহাম্মদ স্মৃতি পদক” প্রদান করে সম্মানিত করে।
- ১৯৮৭ সালে দিনাজপুরের “নবরূপী” সঙ্গীত প্রতিষ্ঠান শিল্পীকে একক সংবর্ধনার মাধ্যমে “ওস্তাদ কসির উদ্দিন ম্মৃতি” পদক প্রদান করে।
- ২২ জুন ১৯৯৭ তারিখে “বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী, ঢাকা” শিল্পীকে জাতীয় পর্যায়ে গুণীজন হিসাবে সংবর্ধনার মাধ্যমে ক্রেস্ট প্রদান করে।
- ২৫ মে ২০০০ তারিখে দিনাজপুরের প্রাচীনতম সঙ্গীত প্রতিষ্ঠান “নবরূপী” শিল্পীকে “পণ্ডিত” উপাধি প্রদান করে সম্মানিত করে।
- ১৩ এপ্রিল ২০১০ তারিখে “ধ্রুপদালক সম্মেলন”-এ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিল্পীকে সংবর্ধনা প্রদান করে।
- ৮ মার্চ ২০১৪ তারিখে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান “ছায়ানট” আয়োজিত “জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মেলন পরিষদ” শিল্পীকে “রবীন্দ্র পদক” প্রদান করে।
- ১ এপ্রিল ২০১৪ “রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমী” শিল্পীকে সম্মননা স্মরক, ক্রেস্ট ও পদক প্রদান করে।
- ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে “বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী, ঢাকা” শিল্পীকে “শিল্পকলা পদক – ২০১৪” প্রদান করে।
- ২০ মার্চ ২০১৫ তারিখে রাজশাহী নগরবাসীর পক্ষ থেকে শিল্পীকে “নাগরিক সংবর্ধনা” প্রদান করা হয়।
আরও দেখুনঃ