ফুলঝুরি খান । বাঙালি যন্ত্রসঙ্গীত ও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতশিল্পী

ওস্তাদ ফুলঝুরি খান ছিলেন একজন বাঙালি যন্ত্রসঙ্গীত ও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতশিল্পী। তিনি একজন দক্ষ তবলা ও এসরাজ বাদক। যন্ত্রসঙ্গীত ও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে অবদানের জন্য তিনি ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন।

ফুলঝুরি খান । বাঙালি যন্ত্রসঙ্গীত ও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতশিল্পী

প্রাথমিক জীবন

ফুলঝুরি খান ১৯২০ সালে তদানীন্তন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার নবীনগর উপজেলার বিটঘর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম ইয়ার রসুল খান। তার পিতা লতিফ রসুল খান এবং মাতা কমলা-উন-নেসা ছিলেন ফকির আফতাবউদ্দিন খাঁর কন্যা। তার মাতামহ আফতাবউদ্দিনের ছোট দুই ভাই প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ ও আয়েত আলী খাঁ। ফুলঝুরির ছোট ভাই ইয়াসিন খান একজন সেতার বাদক ছিলেন।

ফুলঝুরির তবলায় হাতেখড়ি হয় তার মাতামহ আফতাবউদ্দিন খাঁর নিকট। পরে আয়েত আলীর নিকট কিছুদিন তালিম গ্রহণ করার পর তিনি মাইহার রাজ্যে চলে যান এবং সেখানে মাতামহের ছোট ভাই ও সেখানকার রাজসভার সঙ্গীতজ্ঞ আলাউদ্দিন খাঁর নিকট তবলার তালিম নিতে। আলাউদ্দিন খাঁর নিকট তিনি আটবছর তবলার তালিম নেন। মাইহার রাজসভায় তার গুরু আলাউদ্দিন খাঁর সরোদ বাজানোর সাথে তার তবলা বাদন শুনে মুগ্ধ হয়ে মাইহারের রাজা তাকে ‘ফুলঝুরি’ উপাধি দেন। সেই থেকে তার নাম হয়ে যায় ফুলঝুরি খান।

ফুলঝুরি খান । বাঙালি যন্ত্রসঙ্গীত ও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতশিল্পী

কর্মজীবন

ফুলঝুরি তবলা ও এসরাজ বাদনে দক্ষতা অর্জন করেন। পাশাপাশি তিনি তারসানাই, সেতার ও পাখোয়াজ বাজানোতেও পারদর্শী ছিলেন। তিনি আলাউদ্দিন খাঁ গঠিত ‘মাইহার স্ট্রিং ব্যান্ড’ দলের সদস্য ছিলেন। খ্যাতনামা নৃত্যশিল্পী উদয় শঙ্করের নাচের দলের সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেন। তিনি কিছুদিন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতনে যন্ত্রসঙ্গীতের শিক্ষক ছিলেন। চিত্রাঙ্গদা নৃত্যনাট্যে তার এসরাজ বাজানো শুনে রবীন্দ্রনাথ মুগ্ধ হন।

ফুলঝুরি পরে শিলং চলে যান এবং সেখানে একটি সঙ্গীত বিদ্যালয় স্থাপন করে শিষ্যদের সঙ্গীত শিক্ষা দেন। তিনি ১৯৫১ সালে ঢাকায় আসেন এবং ঢাকা বেতারকেন্দ্রে নিজস্ব শিল্পী হিসেবে যোগ দেন। তিনি ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বেতারে তারসানাই বাজাতেন। তিনি কয়েকটি চলচ্চিত্রের সঙ্গীতের জন্য এসরাজ বাজান। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রসমূহ হল মুখ ও মুখোশ (১৯৫৬), আকাশ আর মাটি (১৯৫৯), রাজধানীর বুকে (১৯৬০), নতুন সুর (১৯৬২), সূর্য স্নান (১৯৬২), ও সূর্যগ্রহণ (১৯৭৬)।

ব্যক্তিগত জীবন

তার পাঁচ পুত্রের মধ্যে মোঃ ইউনুস খান সরোদ বাদক, মোঃ জাফর খান সেতার বাদক, মোঃ ইউসুফ খান সরোদ বাদক, মোঃ ইলিয়াস খান তবলা বাদক, এবং মোঃ খায়রুল ইসলাম খান তবলা বাদক।

ফুলঝুরি খান । বাঙালি যন্ত্রসঙ্গীত ও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতশিল্পী

মৃত্যু

ফুলঝুরি খান ১৯৮২ সালে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

পুরস্কার ও সম্মননা

শিল্পচর্চায় অসাধারণ অবদানের জন্য ১৯৭৯ সালে দেশের “সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার”[৪][৫][৬] হিসাবে পরিচিত “স্বাধীনতা পুরস্কার” প্রদান করা হয় তাকে। এছাড়াও তিনি সঙ্গীতে অবদানের জন্য ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment