বেদারউদ্দিন আহমদ । বাঙালি সঙ্গীতশিল্পী

বেদারউদ্দিন আহমদ ছিলেন একজন বাঙালি সঙ্গীতশিল্পী এবং সঙ্গীত বিষয়ক অধ্যাপক। তিনি বুলবুল ললিতকলা একাডেমির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। সঙ্গীতে অবদানের জন্য তিনি ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন এবং ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদক এ ভূষিত করে।

বেদারউদ্দিন আহমদ । বাঙালি সঙ্গীতশিল্পী

প্রারম্ভিক জীবন

বেদারউদ্দিন আহমদ ১৯২৭ সালের ১৫ মার্চ বগুড়া জেলার শেরপুরে জন্ম। তাঁর পিতার নাম মোহাম্মদ মহিরউদ্দিন ও মাতার নাম নেক্জাহান বেগম। শেরপুর জমিদার পরিবার ছিল সঙ্গীতের পৃষ্ঠপোষক। সে সাঙ্গীতিক পরিবেশ বেদারউদ্দিনকে সঙ্গীত শিল্পে আসতে অনুপ্রেরণা জোগায়।

বেদারউদ্দিন আহমদ প্রথমে গৌরচন্দ্র ঘোষের নিকট হারমোনিয়াম বাজাতে শেখেন। পরে সঙ্গীতের প্রতি তাঁর আগ্রহ ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং এক পর্যায়ে তিনি একনিষ্ঠভাবে সঙ্গীতচর্চায় আত্মনিয়োগ করেন। ফলে অচিরেই বেদারউদ্দিন সঙ্গীতে বিশেষ পারদর্শী হয়ে ওঠেন। তিনি ১৯৪০ সালে উত্তরবঙ্গ সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় ছোটদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন।\

সঙ্গীত জীবন

সঙ্গীতে উচ্চতর শিক্ষালাভের উদ্দেশ্যে বেদারউদ্দিন এক সময় কলকাতা যান এবং ওস্তাদ ইউসুফ খান কোরায়শী, ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খসরু এবং ওস্তাদ মুন্সি রইসউদ্দীনের নিকট উচ্চাঙ্গসঙ্গীত শিক্ষা করেন। তিনি পল্লিকবি জসীমউদ্দীন এবং বিখ্যাত পল্লিগায়ক আববাসউদ্দীনের সাহচর্য লাভ করেন। এঁদের সাহচর্য বেদারউদ্দিনের শিল্পিজীবন গঠনে গভীর প্রভাব ফেলে।

বেদারউদ্দিন আহমদ । বাঙালি সঙ্গীতশিল্পী

১৯৪২ সালে বেদারউদ্দিন ‘সং পাবলিসিটি’ বিভাগে চাকরি গ্রহণ করেন। কলাম্বিয়া ও এইচএমভি গ্রামোফোন কোম্পানি থেকে তাঁর গাওয়া গানের রেকর্ড বের হয়, যা সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে তাঁকে এনে দেয় বিরাট স্বীকৃতি। তিনি কলকাতা বেতার কেন্দ্র থেকে নিয়মিত সঙ্গীত পরিবেশন করতেন। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর তিনি ঢাকা এসে ঢাকা বেতার কেন্দ্রে শিল্পী হিসেবে যোগদান করেন এবং নিয়মিত সঙ্গীত পরিবেশন করেন। ১৯৫৫ সালে যাঁদের উদ্যোগে বুলবুল ললিতকলা একাডেমী প্রতিষ্ঠিত হয়, বেদারউদ্দিন ছিলেন তাঁদের অন্যতম।

সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে বেদারউদ্দিন শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও খ্যাতি লাভ করেন। বিভিন্ন সময়ে তিনি বার্মা (মায়ানমার), ইরান, ইরাক, ইন্দোনেশিয়া, মালয়শিয়া, থাইল্যান্ড, আফগানিস্তান প্রভৃতি দেশে সঙ্গীত পরিবেশন করেন এবং ব্যাপক সুনাম অর্জন করেন। কর্মজীবনে তিনি বুলবুল ললিতকলা একাডেমীর অধ্যক্ষ পদে দীর্ঘকাল অধিষ্ঠিত থেকে এ দেশে সঙ্গীতের চর্চা, প্রচার ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।

মৃত্যু

বেদারউদ্দিন আহমদ ১৯৯৮ সালের ১৩ জানুয়ারি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। ঢাকার মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোড মসজিদে যোহরের পর এবং বাইতুল মোকাররম মসজিদে আসরের পর তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তাকে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।

বেদারউদ্দিন আহমদ । বাঙালি সঙ্গীতশিল্পী

সম্মাননা

সঙ্গীতে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলা একাডেমী ১৯৭৪ সালে বেদারউদ্দিন আহমদকে পুরস্কৃত করে। এছাড়া ১৯৭৬ সালে নজরুল সাংস্কৃতিক পরিষদ ‘নজরুলের প্রতিকৃতি’ প্রদান এবং ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ সরকার ‘একুশে পদক’ প্রদানের মাধ্যমে তাঁকে সম্মানিত করেন।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment