‘হিজ মাস্টার্স ভয়েস’ – বিজ্ঞান ও প্রভুভক্তির একটি ছোট্ট কাহিনী!
‘হিজ মাস্টার্স ভয়েস’.
বিজ্ঞান ও প্রভুভক্তির একটি ছোট্ট কাহিনী! আপনি পড়বেন ― হয়ত দু’এক ফোঁটা চোখের জলের সাথেই! যাঁরা গান ভালোবাসেন তাঁরা ছোটবেলায় ‘হিজ মাস্টার্স ভয়েস’ বা এইচ এম ভি’র লংপ্লেয়িং রেকর্ডের লোগোটি নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন! লোগোটিতে একটি ডিস্কগ্রামোফোনের সামনে বসে সংগীত শ্রবণরত কুকুরটিকে নিশ্চিতভাবেই মনে আছে! তবে হয়তো অনেকেই এই লোগোটির পেছনের সত্য কাহিনীটি জানেন না! কুকুরটি একটি মিক্সড পেরিয়ার গোত্রের! ও ছিল ওর মনিবের ভীষণ আদরের!
হিজ মাস্টার্স ভয়েস এর ইতিহাস [ Story His Master’s Voice ]
কুকুরটির নাম ছিল ‘নিপার’ ! আর ওর মনিবের নাম মার্ক ব্যারাউ! মার্ক তাঁর ভাই ফ্রানসিস আর নিপারকে নিয়ে তাদের সংসার! ভাল গান গাইতেন মার্ক, আর ফ্রানসিস ছিলেন চিত্রশিল্পী! তখন সিলিন্ডার গ্রামোফোনের যুগ! তাই মার্ক তাঁর গানের বা কণ্ঠস্বরের একটি রেকর্ড তৈরি করিয়েছিলেন! কিন্তু দুঃখের বিষয় মার্ক অতি অল্প বয়সে হঠাৎ মারা যান! তার ভাইয়ের কাছে রেখে যান তাঁর প্রিয় ‘নিপারকে’ ! এদিকে ফ্রানসিসের আদর-যত্ন সত্ত্বেও মার্কের মৃত্যুকে নিপার মেনে নিতে পারছিল না! নিপার খাওয়া দাওয়া প্রায় ত্যাগ করে সবসময়েই ঘরের একটা কোনে মনমরা হয়ে শুয়ে থাকতো! এইরকমভাবে কাটলো বছর তিনেক!
হিজ মাস্টার্স ভয়েস এর ইতিহাস [ Story His Master’s Voice ]একদিন ফ্রানসিস তার ভাইয়ের রেখে যাওয়া কণ্ঠস্বরের রেকর্ডটা ধুলো ঝেড়ে সিলিন্ডার গ্রামোফোনের উপর চাপিয়ে বাজিয়ে শুনছিল! হঠাৎ সে খেয়াল করলো প্রায় আধমরা নিপার তার মনিবের কণ্ঠস্বর শুনে ছুটে এসে স্পিকারের একেবারে সামনে বসে অধীর আগ্রহে সেই কণ্ঠস্বর শুনছিল! বিষয়টি ফ্রানসিসের হৃদয় স্পর্শ করলো! ফ্রানসিস শিল্পী তাই সে ঐ দৃশ্যটি চিত্রায়িত করে ফেলল ক্যানভাসে!
হিজ মাস্টার্স ভয়েস এর ইতিহাস [ Story His Master’s Voice ]এর কয়েকদিন পরেই নিপার মারা যায়! ঠিক ঐ সময় ১৮৯৯ সালে লন্ডনে গ্রামোফোন কোম্পানি তাদের কোম্পানির জন্য একটি লোগো আহ্বান করে বিজ্ঞাপন দেয়! ফ্রানসিস যথারীতি নিপার আর তার ভাইয়ের গ্রামোফোনের চিত্রটি বিবেচনার জন্য পাঠালেন! অনেক চিত্র ও লোগো জমা পড়ল!
হিজ মাস্টার্স ভয়েস এর ইতিহাস [ Story His Master’s Voice ]কোম্পানির একজন ডাইরেক্টর ফ্রানসিসের কুকুরের গান শোনার ছবিটি বেকার বলে নাকচই করে দিয়েছিলেন! কিন্তু অন্য আর একজন ডাইরেক্টর ফ্রানসিসকে ডেকে ছবিটির মর্মার্থ জানতে চাইলেন! ফ্রানসিসের মুখে ছবিটির পশ্চাৎপটের কাহিনী শুনে ঐ পরিচালক মহাশয়ের দুচোখ ভরে উঠলো জলে! ব্যাস, ফ্রানসিসের ঐ চিত্রটিই গ্রামোফোন কোম্পানি ১০০ পাউন্ডে কিনে নিলেন এবং লোগো হিসাবে গ্রহণ করলেন আর কোম্পানির নামটিও নিপারের অসাধারণ ভালবাসাকে সম্মান দিতে পাল্টে রাখা হলো ‘হিজ মাস্টার্স ভয়েস’! সত্যি কি করুণ অথচ কি মিষ্টি কাহিনী তাই না ?