রাগ আশাবরী উত্তর ভারতীয় সঙ্গীত পদ্ধতি অনুসারে আশাবরী ঠাটের অন্তর্গত একটি রাগ বিশেষ। রাগটিকে আশাবরী ঠাটের জনক রাগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
রাগ আশাবরী
পারিজাত বা রাগতরঙ্গিনী মতে― প্রাচীনকালে আশাবরী রাগ ভৈরবী ঠাটের অন্তরভুক্ত ছিল। এই রাগে তখন অবরোহণে কোমল ঋষভ ব্যবহৃত হতো। সুরেশচন্দ্র চক্রবর্তী প্রণীত রাগ-রূপায়ণ [প্রথম খণ্ড] নামক গ্রন্থে এই ভৈরবী ঠাটের আশাবরী রাগের যে চলন দেখিয়েছেন, তা হলো
প, দ, প, দ ম পদ র্স, ন দ প, প ণ দ ম প দ, ম
প দ ম প জ্ঞ, ঋ ঋ স
ঋ ণ্, স ঋ জ্ঞ ঋ, ম প দ প, দ ণ দ প, দ ম
প দ র্স, ণ র্স র্ম র্জ্ঞ, র্জ্ঞ , র্স, ঋ ণ র্স দ, প ণ দ প ম, প দ, ম জ্ঞ, ঋ ম প দ, প ণ দ, ম।
বর্তমানে এই আশাবরীকে কোমল আশাবরী বলা হয়ে থাকে।
পরবর্তী সময়ে এই কোমল আশাবরীর আরোহণে শুদ্ধ ঋষভের প্রচলন হয়। বর্তমানে এর আরোহণ ও অবরোহণ হলো-
আরোহণ: স র, ম, প, দ, র্স
অবরোহণ : র্স ণ দ, প, ম জ্ঞ, ঋ স
মূলত এই আশাবরী হলো কোমল আশাবরীর বিকৃত রূপ।
আরও পরে খেয়াল গায়করা এই বিকৃত আশাবরীর সকল ক্ষেত্রেই শুদ্ধ ঋষভের প্রয়োগ শুরু করেন। বর্তমানে এই রূপটিই আশাবরী রাগ নামে প্রচলিত।
প্রচলিত আশাবরী রাগ, আশাবরী ঠাটের নিজস্ব অঙ্গের রাগ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এই কারণে একে আশাবরীর জনক রাগ বলে। এই রাগের আরোহে গান্ধার ও নিষাদ বর্জিত। কিন্তু অবরোহণে ঠাটের সব স্বরই ব্যবহার করা হয়। এই কারণে এর জাতি পরিচিতিতে বলা হয় ‘ঔড়ব-সম্পূর্ণ’। এই রাগে মধ্যম দুর্বলভাবে প্রয়োগ করা হয়। দিবা দ্বিতীয় প্রহরে গীত এই রাগের বিস্তার হয় মন্দ্র ও মধ্য সপ্তক। এর সমপ্রকৃতির রাগ জৌনপুরী।
আরোহণ: স র, ম, প, দ, র্স
অবরোহণ : র্স ণ দ, প, ম জ্ঞ, র স
ঠাট : আশাবরী
জাতি : ঔড়ব-সম্পূর্ণ
বাদীস্বর : ধৈবত
সমবাদী স্বর : গান্ধার
অঙ্গ : উত্তরাঙ্গ।
সময় : দিবা দ্বিতীয় প্রহর (সকাল)
পকড় : স ম র ম প দ র্স, ণদ পদ মপ জ্ঞ র স
‘মারিফুন্নাগমাত’ গ্রন্থে আরোহণ ও অবরোহণে কোমল ঋষভ ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। এই গ্রন্থমতে আরোহণ অবরোহণ হলো-
আরোহণ: স ঋ, ম, প, দ, র্স
অবরোহণ : র্স ণ দ, প, ম জ্ঞ, ঋ স
চর্যাপদের (৬৫০-১২০০ খ্রিষ্টাব্দ) ২৬ সংখ্যক পদে রাগের উল্লেখ রয়েছে ‘শিবরী’ এবং ৪৬ সংখ্যক পদে উল্লেখ আছে ‘শবরী’। ধারণা করা হয় এই দুটি রাগই আশাবরী রাগের ভিন্নতর নাম।
সূত্র :
- উচ্চাঙ্গ ক্রিয়াত্মক সঙ্গীত। শক্তিপদ ভট্টাচার্য। নাথ ব্রাদার্স। ২২ সেপ্টেম্বর ১৯৮৭।
- মগনগীত ও তান মঞ্জরী । প্রথম খণ্ড। চিন্ময় লাহিড়ী। ১৪ এপ্রিল, ১৯৮৫
- মারিফুন্নাগমাত। রাজা নওয়াব আলী খান। অনুবাদ মকসুদুর রহমান হিলালী। বাঙলা একাডেমী বর্ধমান হাউস। ঢাকা।
- রাগ বিন্যাস (প্রথম কলি)। শ্রীশচীন্দ্র নাথ ভট্টাচার্য্য। এস, চন্দ্র এন্ড কোং। শারদীয়া সপ্তমী, সেপ্টেম্বর ১৯৭৬।
- রাগ-রূপায়ণ। সুরেশচন্দ্র চক্রবর্তী। জেনারেল প্রিন্টার্স য়্যান্ড পাব্লিশাসার্স প্রাইভেট লিমিটেড। ?। পৃষ্ঠা: ৩৩-৩৫।
- সঙ্গীত শাস্ত্র। তৃতীয় খণ্ড। শ্রীইন্দু ভূষণ রায়।
- হিন্দুস্থানী সঙ্গীত পদ্ধতি ক্রমিক মালিকা দুসরি পুস্তক। হিন্দুস্থানী পণ্ডিত বিষ্ণুনারায়ণ ভাতখণ্ডে। এপ্রিল ১৯৫৪।
আরও দেখুন: