অনল চট্টোপাধ্যায় বাংলা গানের একজন গীতিকার। ১৯৪৬-এ ‘দেব সাহিত্য কুটির’ হতে তার লেখা বই ‘রত্নতৃষ্ণা কাহিনী’ বের হয়। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষকে কেন্দ্র করে লেখা তার একটি বিখ্যাত গান হচ্ছে ‘আজ বাংলার বুকে দারুণ হাহাকার’।
জীবন ও কর্ম
সাহিত্যপ্রেমী এই ব্যক্তি ১৯৪৬ সনে ভারতীয় গণনাট্য সংঘের সাথে যুক্ত হন।সেখানেই সলিল চৌধুরীর সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। সলিল চৌধুরীর সহকারী হয়ে ‘পাশের বাড়ি’, ‘আজ সন্ধ্যায়’, ‘মহিলামহল’, ‘ভোর হয়ে এল’, ‘তাসের কেল্লা’, ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’ প্রভৃতি ছবিতে কাজ করেন।
সুরকার
দুটি ভাষান্তরিত গানের সুর দিয়েছিলেন অনল চট্টোপাধ্যায়। খুব প্রচলিত ভোজপুরী ছায়াছবি “গঙ্গা মাইয়া তোহে পিয়রি চড়ৈবো”-র অনুকরণে বাংলায় দুটি গানই গেয়েছিলেন প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায় — প্রথমটি ছিল ‘ও গঙ্গা অঙ্গে তোমার”, লিখেছিলেন অরুণ চট্টোপাধ্যায় (ভোজপুরীতে ছিল “হে গঙ্গা মাইয়া তোহে পিয়রি চড়ৈবো”, গেয়েছিলেন লতা ও উষা মঙ্গেশকর), খুব জনপ্রিয় হয়েছিল ওই গানটি — দ্বিতীয়টি ছিল “আর তো পারিনা সহেলী”, লিখেছিলেন মিল্টু ঘোষ (ভোজপুরীতে যেটা ছিল “”অব হাম ক্যায়সী চলী ডগরি”, গেয়েছিলেন সুমন কল্যাণপুর)।
“গাঁয়ের বধূ”র মতোই ভালো একটি গান লেখেন অনল — “কঙ্কাবতীর কাঁকন বাজে ইছামতির কূলে”– যেমন সুর দিয়েছিলেন শ্যামল মিত্র, তেমনি গেয়েছিলেন প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় গেয়েছিলেন “পথে যেতে যেতে ফিরে ফিরে চাই”, শ্যামলের সুরে। সুন্দর বাদলের গান ছিল “রিনিঝিনি মঞ্জীর বাজে কার পায়”(গায়েত্রী বসুর গান, শ্যামলের সুর)। সুপ্রীতি ঘোষের গাওয়া শেষ গান ‘আমার গান ওই সাত রঙে রঙে সাজাল আকাশের আঙিনা’ (১৯৫৯), তার সুরকার ছিলেন অনল।
সঙ্গীত পরিচালক
১৯৫৪ সালে তার প্রথম রেকর্ড বের হয় হিজ মাস্টার্স ভয়েস থেকে। ১৯৫৫ সালে মৃণাল সেনের রাতভোর চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালনা করেন। তার লেখা গান ‘কত গান হারালাম’, ‘কৃষ্ণনগর থেকে আমি’ গেয়েছিলেন গীতা দত্ত; ‘মধুমতী যায় বয়ে যায়’ গেয়েছিলেন তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ‘মনের দুয়ারে দাঁড়িয়ে থেকো না’, ‘জানি এ ভুল’ ইত্যাদি গেয়েছিলেন আরতি মুখোপাধ্যায়৷
আর লোকগীতি ও ঠুংরির মিশেলে তার দেয়া সুরে সুরে প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায় গেয়েছিলেন ‘ছলকে পড়ে কলকে ফুলে’ গানটি এবং এই গান শুনে সুরকারের উচ্ছসিত প্রশংসা করেছিলেন পণ্ডিত রবিশঙ্কর৷ যাত্রাপালা এবং চলচ্চিত্রের গানেও অনল চট্টোপাধ্যায় সুরারোপ করেছিলেন।
আরও দেখুনঃ