কল্যাণ ঠাট । হিন্দুস্থানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত

কল্যাণ ঠাট হিন্দুস্থানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঠাট। এটি মূলত সন্ধ্যাকালীন রাগগুলির একটি বৃহৎ পরিবার গঠন করে। এ ঠাটের মূল বৈশিষ্ট্য হলো তীব্র মধ্যম (M) এর ব্যবহার, যা রাগগুলিকে একটি স্বতন্ত্র, উজ্জ্বল ও শুভ অনুভূতি প্রদান করে।

“কল্যাণ” শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হলো সৌভাগ্য বা মঙ্গল। সেই কারণে এই ঠাটভিত্তিক রাগগুলোকে আশীর্বাদসন্ধানী, প্রশান্তিদায়কউদ্ভাসনশীল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ভারতীয় সঙ্গীতানুষ্ঠানে সন্ধ্যা পর্বে যখন পরিবেশ শান্ত ও মনোসংযোগী থাকে, তখন কল্যাণ ঠাটের রাগ পরিবেশন করা হয়।

 

কল্যাণ ঠাট

 

কল্যাণ ঠাটের আরোহঅবরোহ

  • আরোহ: সা – রে – গা – ম♯ – পা – ধা – নি – সা
  • অবরোহ: সা – নি – ধা – পা – ম♯ – গা – রে – সা

(এখানে বা তীব্র মধ্যম হলো কল্যাণ ঠাটের পরিচায়ক স্বর।)

 

কল্যাণ ঠাটের বৈশিষ্ট্য

  1. সময়: প্রধানত সন্ধ্যাকালীন রাগ।
  2. ভাব: উদার, শান্ত, মঙ্গলময় ও শুভ অনুভূতি জাগ্রত করে।
  3. প্রধান স্বর: গা, ম♯ এবং নি।
  4. বৈশিষ্ট্যসূচক চলন: সা থেকে ম♯–পা–ধা–নি হয়ে আবার সা-তে ফেরা।
  5. আবহ: এটি একধরনের আধ্যাত্মিক আবহ তৈরি করে, যেখানে শ্রোতা শান্তি ও সৌভাগ্যের অনুভূতি পায়।

 

কল্যাণ ঠাটের গুরুত্বপূর্ণ রাগ

কল্যাণ ঠাট থেকে বহু রাগের উদ্ভব হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—

  • ইমান কল্যাণ – অত্যন্ত জনপ্রিয় রাগ; ভক্তিমূলক ও রোমান্টিক আবহ তৈরি করে।
  • শুদ্ধ কল্যাণ – সহজ কিন্তু গভীর আবহের রাগ।
  • ইয়ামন – ঠাটটির সবচেয়ে প্রসিদ্ধ রাগ, যা সমগ্র হিন্দুস্থানি সঙ্গীতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • হেমন্ত, চंद्रকৌশ, হংসধ্বনি প্রভৃতি আরও রাগও এর অন্তর্ভুক্ত।

 

কল্যাণ ঠাটের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

মুঘল আমল থেকে কল্যাণ ঠাটের রাগগুলো ধীরে ধীরে উত্তর ভারতের রাজসভা ও দরবারে জনপ্রিয়তা লাভ করে। বিশেষত ইয়ামন রাগকে একসময় “রাজকীয় রাগ” বলা হতো। পরবর্তীতে আধুনিক হিন্দুস্থানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তত্ত্বে কল্যাণ ঠাটকে দশটি মূল ঠাটের একটি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় (বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ বি. ভি. ভাটখণ্ডে প্রদত্ত তত্ত্ব অনুযায়ী)।

 

কল্যাণ ঠাটের ব্যবহারিক দিক

  • কনসার্টে ভূমিকা: সাধারণত কোনো অনুষ্ঠানের প্রথম ভাগে কল্যাণ ঠাটের রাগ পরিবেশন করা হয়, কারণ এটি শুভ সূচনা ও প্রশান্তি আনে।
  • আধ্যাত্মিক প্রভাব: ধ্যান, ভক্তিমূলক পরিবেশনা বা গুরুদক্ষিণা অনুষ্ঠানে এ রাগগুলি বিশেষভাবে গাওয়া হয়।
  • সমসাময়িক প্রয়োগ: শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পাশাপাশি আধুনিক গানে ও চলচ্চিত্র সংগীতেও কল্যাণ ঠাটভিত্তিক সুর ব্যবহৃত হয়েছে।

 

সংক্ষেপে, কল্যাণ ঠাট হলো এমন একটি সংগীত কাঠামো যা শুভ, মঙ্গলময় প্রশান্তিদায়ক আবহ সৃষ্টি করে। সন্ধ্যা পর্বে পরিবেশিত এই ঠাটের রাগগুলো কেবল শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে নয়, আধুনিক সংগীতেও অমোঘ প্রভাব রেখেছে।

 

কল্যাণ ঠাটের রাগ:

  • রাগ ইমন
  • রাগ ভূপালী
  • রাগ হিন্দোল
  • রাগ কেদার
  • রাগ শুদ্ধ কল্যাণ
  • রাগ শ্যাম কল্যাণ
  • রাগ ইয়ামান কল্যাণ
  • রাগ খেম কল্যাণ
  • রাগ সাবানী কল্যাণ ছায়ানট
  • রাগ হামির
  • রাগ গৌড় সারং
  • রাগ কামোদ
  • রাগ মারু বিহাগ
  • রাগ নন্দ

 

মধ্যমের ব্যবহারের সূত্রে এই ঠাটের রাগগুলিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। ভাগগুলো হলো-

শুধু তীব্রমধ্যমযুক্ত রাগ :

এই রাগগুলোর স্বাভাবিক চলনে শুদ্ধ মধ্যম ব্যবহৃত হয় না। যেমন― ইমন, হিন্দোল।

উভয় মধ্যমযুক্ত রাগ :

এই রাগগুলোর স্বাভাবিক চলনে উভয় মধ্যম ব্যবহৃত হয় না। যেমন― কেদার, গৌড় সারং, হাম্বীর

দুর্বল মধ্যমযুক্ত রাগ :

এই রাগগুলোর স্বাভাবিক চলনে উভয় মধ্যম প্রায় বর্জিত হয়, অর্থাৎ সে কোন মধ্যমের ব্যবহার অতি সামান্য। তবে এই সকল রাগে নিষাদ দুর্বল থাকে। যেমন- ভূপালী, শুদ্ধকল্যাণ।

কল্যাণ ঠাটের অন্তর্গত রাগরাগিনীর তালিকা:

ইমন,ইমন_কল্যাণ,কল্যাণ_কামোদ
কেদার_গৌড়সারং,চন্দ্রকান্ত
ছায়ানট ,নন্দ,মারুবেহাগ,শুদ্ধ_কল্যাণ
হাম্বীর,হিন্দোল

উচ্চাঙ্গ সংগীতে কল্যাণ ঠাটের ব্যবহার:

কল্যাণে “এরি আলি পিয়া বিনা” কিংবা “পিয়া কি নজরিয়া” এ খেয়াল দুটো সংগীতের প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের বেশ জানা।

 

Bilaawal ThaatKalyan Thaat
DefinitionAll shuddha(pure) notesMa is tivra or sharp Ma’
Indian Sargam NotesSa Re Ga Ma Pa Dha Ni SaSa Re Ga Ma’ Pa Dha Ni Sa
Notes in scale of CC D E F G A B CC D E F# G A B C
Whole/Half StepsW-W-H-W-W-W-HW-W-W-H-W-W-H
Degrees1 2 3 4 5 6 71 2 3 ♯4 5 6 7
Western EquivalentIonian Mode or Major ScaleLydian Mode

 

আরও দেখুন:

 

ঠাট পরিচয়:

Leave a Comment